প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২২, ০০:০০
গত ১০ মার্চ চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজে নবীন বরণ ও কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অত্র এলাকার কৃতী সন্তান ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, এককালের তুখোড় ছাত্রনেতা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বরাবরের ন্যায় তাঁর কলেজের অনুষ্ঠানে যেমন বক্তৃতা করেন, ওইদিন গতানুগিতিকতার বাইরে গিয়ে একটু ভিন্ন বক্তৃতা করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভালো লেখাপড়া করে রাজনীতিতে আসতে হবে। তাহলেই সমাজ ও দেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা বলতেন, ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের মেধার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। কারণ, বর্তমান বিশে^ মেধার প্রতিযোগিতা চলছে। তিনি শিক্ষার্থীদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।
গতকাল দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে সুজিত রায় নন্দীর ব্যতিক্রম বক্তব্য (ভালো লেখাপড়া করে রাজনীতিতে আসতে হবে)কে উদ্ধৃত করে সংবাদ ছাপা হয়েছে। কেননা তাঁর এমন বক্তব্য অনুষ্ঠানের অন্যান্য অতিথিসহ সকল অংশগ্রহণকারী, এমনকি উপস্থিত সাংবাদিক তথা গণমাধ্যম কর্মীদেরকেও আলোড়িত করেছে। এর কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশের খ্যাতিমান রাজনীতিবিদদের অধিকাংশই নিজ সন্তানসহ নিকটাত্মীয়দেরকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর চেয়ে বিদেশে পাঠিয়ে সেখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর ব্যাপারে বেশি আগ্রহী থাকেন। আর যাঁরা দেশে পড়ান, তাও সেটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল/কলেজে। এর ফলে ওরা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন ছাড়া মানবিকতা, ধার্মিকতা, নৈতিকতা, দেশপ্রেমসহ আবশ্যক অনেক গুণাবলি রপ্ত করতে পারে না। পরিণতিতে এরা পেশাজীবী হয়ে বৈধ-অবৈধ উপায়ে প্রচুর অর্থ রোজগার এবং বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়িতে বেশি মনোযোগী হয় আর দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়। এমতাবস্থায় এমন রাজীতিবিদদের ঘর থেকে তাঁদের উত্তরসূরি হিসেবে সাধারণত আসছে না ভালো রাজনীতিবিদ, বরং আসছে দেশপ্রেম বিবর্জিত মানবতাহীন ধনাঢ্য ব্যক্তি, যারা দেশের অর্থ পাচার করে বিদেশে।
তিক্ত সত্য হলেও অকপটে এ কথা বলতে হয় যে, আজকাল ছাত্র রাজনীতিসিহ রাজনীতির মূলধারায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা আসছে না বললেই চলে। যারা আসছে তাদের কেউ কেউ তো বাপে তাড়ানো, মায়ে খেদানো কিংবা বিপথগামিতায় আক্রান্ত। এরা পেশী শক্তি প্রয়োগ ও গ্রুপিং করে, ভাড়াটিয়া লোক বড় নেতার সমাবেশে সরবরাহ করে, দালালি করে, তোয়াজ করে তথা তেলবাজি করে দলের মধ্যে দ্রুত পদোন্নতি পেতে তৎপর হয় এবং কাক্সিক্ষত পদ পেয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে কমিশন ভোগ, মনোনয়ন বাণিজ্যসহ নানা তদবির, এমনকি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ চাঁদাবাজি করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে।
আমরা মনে করি, ভালোভাবে লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হওয়া লোকজনকে রাজনীতিতে আসা উচিত। তাহলে তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ন্যায় ভোগে নয় ত্যাগেই খুঁজবেন প্রকৃত সুখ। তারা কোনোভাবেই নিজের স্বার্থের প্রশ্নে দেশের স্বার্থকে বিকিয়ে দেবেন না। ভালো তথা মেধাবী শিক্ষার্থীরা কেবল চিকিৎসক ও প্রকৌশলী হতে চায়, এর বাইরে রাজনীতিবিদ হতে চাওয়াটা দোষের নয় বরং অনেক সম্ভাবনার। কেননা এমন রাজনীতিবিদ তাঁর মেধা-মননে, সৃষ্টিশীলতায় দলকে তো সুনামে ঋদ্ধ করবেই, উপর্যুপরি দেশকে এগিয়ে নেবে সমৃদ্ধির পথে।