প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
সাংবাদিকগণকে এক নেতার নসিহত প্রসঙ্গে
কোনো এক শহরে বড় একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা ব্যক্তিগত সততা ও স্বচ্ছতার চেয়ে সরলতায় বেশ ঋদ্ধ। সরলতার কারণে তাঁকে তাঁর ঘনিষ্ঠ ক’জন রাজনৈতিক সহযোগী মাঝে মাঝে কৌশলে ব্যবহার করে ফেলেন, তিনি সেটা কখনও বোঝেন, আবার বোঝেন না। তিনি কোনো একটি সভায় অপ্রাসঙ্গিকভাবে সাংবাদিকদের ভদ্রোচিত ভাষায় নসিহত করেছেন। অবশ্য তাঁর এলাকার সাংবাদিকরা প্রচ্ছন্ন-অপ্রচ্ছন্ন সীমাবদ্ধতায় তাঁর প্রতি বিগত দিনগুলো থেকে ভদ্র আচরণই করে আসছেন। তিনি একটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে এক মেয়াদের জন্যে নির্বাচিত হয়ে প্রায় দু মেয়াদের সময়কালীন চেয়ারে অধিষ্ঠিত থাকার সুযোগ পেয়েছেন। নির্দিষ্ট মেয়াদশেষে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করলেও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে কেউ একজন নানা কারণ দেখিয়ে বাদী হয়ে হাইকোর্টে রিট করে ভোটগ্রহণ ঠেকিয়ে দেন। একাধিকবার নির্বাচন ঠেকানোর এ কাজ করায় ওই নেতা প্রায় দু মেয়াদের সময় পার করতে সক্ষম হন। রিটগুলোতে কে অর্থায়ন করলেন এবং পরোক্ষভাবে কলকাঠি নাড়লেন সেটা ওপেন সিক্রেট হলেও তাঁর লোকজনের অনুরোধে স্থানীয় সাংবাদিকরা লিখালিখি করেননি। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে পুনর্নির্বাচিত হলেন এবং বোনাস হিসেবে নিজ এলাকায় দলের শীর্ষ নেতাও হলেন।
|আরো খবর
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে তিনি দু দফা নির্বাচিত হয়ে তিন মেয়াদের সময় নির্বিঘেœ কাটান। তারপর তিনি দলীয় মনোনয়ন আর পেলেন না। তাঁর খেপাটে আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কর্তৃক নির্বাচন ঠেকাতে হাইকোর্টে একাধিক রিটের মধ্য দিয়ে। তীব্র সমালোচনার মুখে তিনি গা বাঁচাতে পত্রিকায় বিবৃতি দিলেন, কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য জানাতে দল-মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে দৃশ্যমান নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলেন না। সম্প্রতি তিনি অনেক দূর থেকে পরিচালিত একটি গণমাধ্যমে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এক নেতা ও ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেন। এজন্যে তীব্র প্রতিবাদের মুখেও পড়েন। বিক্ষুব্ধজন একাধিক সংবাদ সম্মেলন, বহু প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করেন। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়েদের সাংবাদিকরা তার ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশন করেন। এমতাবস্থায় ওই নেতা পাল্টা সংবাদ সম্মেলন কিংবা দৃশ্যমান কিছু না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করেন দলীয় বিবৃতি ও বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া প্রকাশে। এর ভিত্তিতে স্থানীয় সকল সাংবাদিক সংবাদ পরিবেশন করেননি, তবে কেউ কেউ করেছেন। এতে তিনি হন মনঃক্ষুণœ। সেজন্যে তিনি সাংবাদিকদেরকে নসিহত করলেন।
ওই নেতার এলাকার সাংবাদিকগণ চক্ষুলজ্জায় ভোগেন। সেজন্যে তাঁর দলের যিনি/যারা ভুয়া শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ অন্য বিতর্কিত সনদ নিয়ে সুবিধা নেন, মনোনয়ন-বাণিজ্য করেন, ভূমিদস্যুতাসহ নানা অপকর্ম করেন সেটা নিয়ে লিখলেও নাম প্রকাশ করেন না। প্রকৃত সাংবাদিকদের কোনো বন্ধু নেই, চক্ষু লজ্জা থাকতে নেই-এ আপ্তবাক্য ওই নেতার এলাকার সাংবাদিকরা সকলে সম্ভবত শতভাগ মানেন না। সেজন্যে ওই নেতা সাংবাদিকদেরকে নসিহত করার সুযোগ নিয়েছেন নিজ দলীয় কার্যালয়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে। তিনি সত্য প্রকাশে সাংবাদিকদের অবিচল থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। আশা করি তাঁর এলাকার সাংবাদিকরা অতীত ও বর্তমানের সকল সত্য বস্তুনিষ্ঠতার সাথে তুলে ধরতে তাদের অনুসন্ধিৎসা পুরোপুরি কাজে লাগাবেন। তবেই ওই নেতার নসিহত কাজে লাগবে, অন্যথায় বাতাসে ঘুরবে এবং নানা গুঞ্জন রটাবে। আমরা কেনো, সচেতন ব্যক্তিমাত্রই সেটি প্রত্যাশা করেন না।