প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
করোনায় করুণ অবস্থায় সংবাদপত্র শিল্প
গতকাল দৈনিক ইত্তেফাকের শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি সংবাদ আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘আগামী বাজেটে সংবাদপত্র শিল্পের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান ॥ করপোরেট কর হ্রাসসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব এনবিআরে’। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, কোভিডকালীন সময়ে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা ঘোষণা করা হলেও দেশের সংবাদপত্র শিল্পের জন্য কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। অথচ এই শিল্পও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী বাজেটে সংবাদপত্র শিল্পের জন্য বিশেষ উদ্যোগ ছাড়াও কর ছাড় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংবাদপত্র শিল্প মালিকদের সংগঠন ‘নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-নোয়াবে’র নেতৃবৃন্দ। বর্তমানে সংবাদপত্র শিল্পে করপোরেট কর ৩০ শতাংশ। এ শিল্পে করপোরেট কর কমিয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে নোয়াব। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে রোববার থেকে খাত ভিত্তিক প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রথম দিনে গণমাধ্যম মালিকদের সঙ্গে কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম। তিনি বলেন, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম গুরুত¦পূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া করের আওতা বাড়াতেও অবদান রাখছে। কাজেই সংবাদপত্র শিল্পকে সহায়তা করতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। নোয়াবের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে : আমদানি পর্যায়ে নিউজপ্রিন্টের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার, বিজ্ঞাপন বিলের ওপর আরোপিত উৎসে কর ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার এবং বাড়ি ভাড়া ৭০ শতাংশ পর্যন্ত করমুক্ত করা।
|আরো খবর
ডেইলি স্টার সম্পাদক ও নোয়াবের নির্বাহী সদস্য মাহফুজ আনাম বলেন, সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে। অথচ সংবাদপত্র শিল্পের জন্য এক টাকাও দেয়নি। কোভিড কালীন দেশের সংবাদপত্র শিল্প ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংবাদপত্র শিল্পকে সেবামূলক হিসেবে বিবেচনা করে আগামী বাজেটে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংবাদপত্র শিল্পের জন্যে প্রণোদনা না দিলেও সারাদেশে কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে যারা করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি)-এর নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করেছেন, তাদেরকে এককালীন দশ হাজার টাকা তাঁর উপহার হিসেবে প্রদান করে চলছেন। ২০২০ সাল থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যারা একবার এ উপহার পেয়েছেন, তাদেরকে গেলো ২০২১ সালে আর কোনো উপহার দেয়া হয়নি। তবে অসুস্থ সাংবাদিকগণ পিআইবিতে আবেদন করে পঞ্চাশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দু লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান পেয়েছেন ও পাচ্ছেন।
করোনাকালীন সংবাদপত্র শিল্পের ভয়াবহ সংকট বা করুণ অবস্থা চললেও সাংবাদিকদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠনগুলো যেভাবে জোর আওয়াজ তোলার কথা, সেভাবে আওয়াজ তোলেনি। তথ্যমন্ত্রীর সাথে সংবাদপত্রের বকেয়া বিলগুলোর প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে নোয়াব কথা বললেও প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। ফলে রাজধানী ও দেশের বড় বড় শহরকেন্দ্রিক সংবাদপত্রগুলো যতোটা না অর্থ সংকটে পড়েছে, তারচে’ বহুগুণ অর্থ সংকটে পড়েছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সংবাদপত্রগুলো। এই অর্থছাড়ের বিষয়ে ত্বরিৎ উদ্যোগ না নিলে এবং করোনাকাল দীর্ঘায়িত হতে থাকলে জেলা/উপজেলার অনেক সংবাদপত্রের প্রকাশনাই বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা এ ব্যাপারে মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর আশু সু-দৃষ্টি কামনা করছি।