প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ‘সর্জন পদ্ধতিতে সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি অনেক পাঠকের নজর কেড়েছে। সংবাদটিতে চাঁদপুর কণ্ঠের কচুয়া ব্যুরো ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সংক্ষিপ্তভাবে কৃষিতে নূতন সম্ভাবনা হিসেবে ‘সর্জন’ পদ্ধতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তিনি লিখেছেন, কচুয়া উপজেলায় ‘সর্জন’ পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। এ পদ্ধতিতে ১২ মাস বাড়ির আঙ্গিনা কিংবা পতিত জমিতে দু পাশের পাড় বেঁধে সবজি চাষ করা সম্ভব হয়। নোয়াখালী, ফেণী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কচুয়া উপজেলার নিচু জমিতে উক্ত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে কৃষক লাভবান হচ্ছে। ইতোমধ্যে কচুয়া উপজেলার ঘাগড়া, করইশ, তুলপাইসহ বেশ ক’টি গ্রামে ‘সর্জন’ পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
কচুয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, সব মাটিতে বা সব আবহাওয়ায় সব ধরনের চাষ কার্যকর নয়। বছরের বেশির ভাগ সময় নিচু জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ করা যায় না, আবার কিছু জমিতে ধানচাষ করে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। ‘সর্জন’ পদ্ধতিতে প্রথমে জমি থেকে মাটি কেটে উঁচু করে চারদিকে পাড় বাঁধা হয়। মূল জমির মাঝে আবারো উঁচু করে পাড় বাঁধা হয়। পাড়গুলো দ্বারা সৃষ্ট নালা পুরো জমির সাথে যুক্ত থাকে। ফলে পাড়ের ওপর বরবটি, শসা, করলা, লাউ, কুমড়া, ঝিঙ্গা, পটল, শিম, পেঁপেসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করা হয়। আরো চাষ করা যায় লেবু, আম, মাল্টাসহ নানাবিধ ফল। আর নালাতে পানির পর্যাপ্ততা অনুযায়ী চাষ করা যায় তেলাপিয়া, রুই, কার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
এ সংবাদে কিছু কৃষকের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়। যা থেকে জানা যায়, মিশ্র সবজি, ফল ও মাছ চাষের সুবিধা সম্বলিত পদ্ধতি হচ্ছে ‘সর্জন’ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কম খরচে অধিক আয় সম্ভব। বিশেষ করে অনাবাদী বা পতিত জমিকে কৃষি উৎপাদনমুখী করার কার্যকর উপায় হচ্ছে উক্ত পদ্ধতি। কচুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোফায়েল হোসেন জানান, ‘সর্জন’ পদ্ধতিতে শসা, বরবটি, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গাসহ উচ্চ ফলনশীল সবজি উৎপাদন সম্ভব। এজন্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চাষীদের প্রশিক্ষণ, বীজ ও সারসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী স্থাপনে কৃষকদের কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হবে।
এক সময় চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলায় কৃষি সংক্রান্ত সাফল্য, ব্যতিক্রম ও সম্ভাবনাময় প্রকল্প নিয়ে গণমাধ্যমে ধারাবহিক সংবাদ প্রকাশিত হতো। কর্মরত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অন্যত্র বদলি হয়ে গেলে উক্ত উপজেলার এমন সংবাদ গণমাধ্যমে এখন আর দেখা যায় না। এখন কৃষিতে কচুয়ার সাফল্য, নূতন নূতন পদ্ধতির প্রয়োগ সংক্রান্ত সংবাদ গণমাধ্যমে প্রায়শই প্রকাশিত হচ্ছে। সর্বশেষ প্রকাশিত হলো ‘সর্জন’ পদ্ধতি সংক্রান্ত সংবাদ। এ পদ্ধতিকে অনেক সম্ভাবনাসময় বলে মনে হচ্ছে। আমরা কচুয়ায় পরীক্ষামূলক প্রয়োগ (পাইলটিং) ও সাফল্যের ভিত্তিতে চাঁদপুরের অন্যান্য উপজেলায় ‘সর্জন’ পদ্ধতি শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।। আমাদের বিশ^াস, এ পদ্ধতিতে জেলার কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।