প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
বিষয়টি ব্যতিক্রম, না অন্য কিছু
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় বড় দলগুলোর মনোনয়ন বা টিকেট স্বরূপ কাক্সিক্ষত প্রতীক না পাওয়া পর্যন্ত সেটিকে সোনার হরিণই মনে হয়। আর স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের মধ্যে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক পাওয়ার রেওয়াজ যখন চালু হলো, তখন সেটি প্রাপ্তির আকাক্সক্ষা হলো তীব্র থেকে তীব্রতর। তদবিরে তকদির ফেরানোর প্রয়াসে প্রার্থীরা হয়ে গেছে বেসামাল। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এমপি-মন্ত্রী ও দলের শীর্ষ নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘোরা এবং তাদের উপহৃত ও প্রভাবিত করার বহুমুখী প্রয়াস চালান। এতে কেউ সফল হন, আবার কেউ হন না। কারণ, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা রিপোর্টের আলোকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বৃত্তান্ত বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করেন এবং মনোনয়ন চূড়ান্তকরণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন।
|আরো খবর
এতো কাঠখড়ি পুড়িয়ে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি নিশ্চিতের জন্যে গরীব প্রার্থীরও ন্যূনতম লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। তবে ব্যতিক্রমও আছে। এমন বাস্তবতায় দলীয় মনোনয়ন পেয়েও যদি সেটা ফেরত দিতে চায়, তাহলে সেটিকে ব্যতিক্রম কিংবা অন্য কিছু ভাবার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় এক কলামে প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম হয়েছে ‘কচুয়ায় ইউপি নির্বাচনে নৌকা পেয়েও ফেরত দিতে চায় যুবলীগ নেতা রাজীব আহমেদ। সংবাদটি ছোট পরিসরে তথা কম গুরুত্বে স্থান পেলেও অনেক পাঠকেরই নজর কেড়েছে। কোনো কোনো পাঠক বলেছেন, ওপেন সিক্রেট পদ্ধতিতে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে যেখানে মনোনয়ন বাগিয়ে আনতে হয়, সেখানে রাজীব আহমেদের নৌকা প্রতীক ফেরতদানের সিদ্ধান্ত অনেক বিস্ময়ের ব্যাপার বৈকি।
এ সংবাদে লিখা হয়েছে, কচুয়া উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও বিতারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রাজীব আহমদ রাজু আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরই মধ্যে নিজের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাহার চেয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনপত্রে তিনি লিখেছেন, আমার ব্যক্তিগত ব্যাংক ঋণ থাকার কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হতে পারে বিধায় আমি আমার পরিবর্তে মাননীয় সাংসদের অনুমতিক্রমে মোসাঃ সালমা শহীদ (সভাপতি, কচুয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ, মনোনয়ন আবেদনপত্র নং-১৫৬১৭) কে মনোনয়ন দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি এবং আমার মনোনয়ন প্রত্যাহারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।
কচুয়ার যুবলীগ নেতা মোঃ রাজীব আহমেদ তার মনোনয়নটি স্বেচ্ছায় ফেরত দিতে চেয়েছেন বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। তিনি আদৌ ঋণ খেলাপী কিনা কিংবা অদৃশ্য কোনো চাপের মুখে এমনটি করেছেন কিনা সেটি জানার কৌতূহল কারো না কারো থাকতেই পারে। তবে যা-ই হোক না কেন, তিনি মনোনয়ন ফেরত দিয়ে কম-বেশি ব্যতিক্রম কাজটি করে ফেলেছেন, যেটি সাধারণ বিবেচনায় প্রশংসনীয়। কেননা দলীয় মনোনয়নের মতো সোনার হরিণ পেয়েও সেটি সাদাকালোতে ফেরত দেয়ার দৃষ্টান্ত খুব একটা নেই।