প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:৪৬
ছারছীনা শরীফের বার্ষিক ঈছালে ছওয়াব মাহফিল ও জমইয়াতে হিযবুল্লাহ সম্মেলন
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামিয়াত বাধ্যতামূলক করতে হবে : ছারছীনার পীর ছাহেব
বুধবার ১ ডিসেম্বর বাদ জোহর কয়েক লাখ মুসুল্লির অংশগ্রহণে মিলাদ-ক্বিয়াম ও আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে ছারছীনা দরবার শরীফের ১৩১তম ঈছালে ছওয়াব মাহফিল ও বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহ সম্মেলন সমাপ্ত হয়েছে। আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন জমইয়াতে হিযবুল্লাহর আমীর ও ছারছীনা দরবার শরীফের পীর ছাহেব আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (মাদ্দা জিল্লুল আলি)। এ সময় লাখো মুসুল্লির আমিন আমিন ক্রন্দন ধ্বনীতে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
|আরো খবর
মোনাজাতের পূর্বে হযরত পীর ছাহেব কেবলার পক্ষ হতে বাংলাদেশ সরকরের নিকট দুইটি দাবি পেশ করা হয়- ১. দেশে যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও গবেষক দরকার। তেমনি ৯৫% মুসলমানদের দেশে প্রতিটি মুসলমানের জীবনে ইসলামিয়াত দরকার। সে সুবাদে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামিয়াত বাধ্যতামূলক করতে হবে।
২. একটি চক্র সরকারকে ব্যবহার করে তাদের ভেতর থেকে অনৈসলামিক কার্যকলাপ বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে। এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করে এ সকল বিতর্কিত লোকজন থেকে ফিরে থাকার আহ্বান জানান।
৩ দিনব্যপী মাহফিলের ২য় দিন মঙ্গলবার বাদ এশা বরিশালের ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান আগত মুসুল্লিদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। হানাহানি, অরাজকতা, গুজবে কান দেয়া ও আত্মীয়ের হক নষ্ট করা ইসলাম সমর্থন করেনা। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য, যা ইসলামও শিক্ষা দেয়। ইসলাম নারীদের সম্মান দিয়েছে। তাই আমাদের উচিত প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের সম্মান দেয়া। এছাড়াও সত্য যাচাই না করা পর্যন্ত কারো কোনো ধরণের উস্কানিমূলক কথায় কান না দিয়ে সত্যটি জানতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তা না হলে সত্য প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য্যর সাথে অপেক্ষা করতে বলেন।
মাহফিলের শেষ দিন বাদ ফজর জিকিরের তা’লীম দেন বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সিনিয়র নায়েবে আমীর ও হযরত পীর ছাহেব কেবলার বড় ছাহেবজাদা আলহাজ্ব হযরত মুফতী শাহ্ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমদ হুসাইন। এছাড়াও বিষয়ভিত্তিক কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামগণ তাদের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ পেশ করেন। যারা বয়ানে অংশ নেন তাদের মধ্যে- মাওঃ রুহুল আমিন আফসারী, হাফেজ মাওঃ মোঃ বোরহান উদ্দীন ছালেহী, মাওঃ সিরাজুম মুনীর তাওহীদ, মাওঃ ওসমান গণি ছালেহী প্রমুখ।
মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর নায়েবে আমীর ও বরিশাল জামে এবাদুল্লাহ মসজিদের খতিব আলহাজ্ব মাওঃ মির্জা নূরুর রহমান বেগ, ঢাবির আরবী বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফেজ মাওঃ মোঃ রুহুল আমিন, বরিশাল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিব, ফিরোজপুর জেলা পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান, নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশারেফ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইব্রাহিম, সহকারী পুলিশ সুপার রিয়াজ হোসেন, স্বরূপকাঠী পৌর মেয়র গোলাম কবির, গৌরনদী পৌর মেয়র হারিছুর রহমান, নেছারাবাদ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবির মোহাম্মদ হোসেন, মরহুম পীর ছাহেব কেবলার সফরসঙ্গী মাওঃ আবু জাফর মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা প্রমুখ।
মাহফিলে পীর ছাহেব আগত মুসুল্লিদের বাইয়াত করিয়ে তওবা, ইস্তেগফার ও জিকির-আজকারের মাধ্যমে দ্বীনের উপর মজবুত থাকার উপদেশ দেন। তার পাশাপাশি তিনি এই ফেতনার যুগে আমল আক্বীদা নিয়ে যেভাবে টানা-হেচড়া চলছে সেখান থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।
সমবেত জনতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ‘পানিতে ও স্থলে যা কিছু বিপর্যয় হয় তা সবকিছু মানুষের হাতের কামাই’ সুতরাং বর্তমান বিশে^ করোনা মহামারী ও আমাদের কর্মফল। আল্লাহতায়ালা বালা-মুসিবত দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন এবং এর মধ্য থেকে অনেককে শাহাদাতের মর্যাদা প্রদান করেন।