প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২১, ০০:০০
হায় চাঁদপুর! হায় সাঁতার!!
স্বাধীনতা অর্জনের ৪৫ বছর পর ২০১৬ সালে চাঁদপুর জেলাকে নিয়ে একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ বেরিয়েছে যার নাম ‘চাঁদপুর পরিক্রমা : ইতিহাস ও ঐতিহ্য’। এ গ্রন্থের ‘৪৩৫’ পৃষ্ঠায় ‘চাঁদপুরের ক্রীড়াঙ্গন’ শিরোনামে যে ত্রয়োদশ অধ্যায় সংযোজিত হয়েছে, তাতে সর্বপ্রথম ক্রীড়ার যে ইভেন্ট নিয়ে লিখা হয়েছে সেটি হচ্ছে সাঁতার। কারণ, এই সাঁতার দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাঁদপুরের খ্যাতি ছড়ানো সম্ভব হয়েছে। আর যে দুজন এই খ্যাতি সবচে’ বেশি ছড়িয়েছেন তাঁরা হচ্ছেন যথাক্রমে ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী সাঁতারু আবদুল মালেক এবং অবিরাম সাঁতারে বিশ্ব রেকর্ডধারী অরুণ কুমার নন্দী। এঁদের দুজনকে স্মরণীয় করে রাখতে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা মোটেও কার্পণ্য করেনি। চাঁদপুর স্টেডিয়ামের প্রথম প্যাভিলিয়নের নামকরণ করা হয়েছে ‘মালেক ক্রীড়া ভবন’। ১৯৮৩ সালের ২৬ অক্টোবর এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপ-আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক ও ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুস্ সালাম, পিএসসি। আর ২০০২ সালে চাঁদপুর স্টেডিয়ামের পাশে আউটার স্টেডিয়ামে নির্মিত সুইমিং পুলটির নামকরণ করা হয় ‘অরুণ নন্দী সুইমিং পুল’। ২০০৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এটির নামফলক উন্মোচন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মনিরুল ইসলাম।
|আরো খবর
চাঁদপুরকে নিয়ে প্রকাশিত আরেকটি প্রামাণ্য গ্রন্থ হচ্ছে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’। সরকারের ‘এটুআই’ প্রকল্পের আওতায় জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত এ গ্রন্থের ৬২ পৃষ্ঠায় চাঁদপুরের ক্রীড়া বিষয়ক যে দুটি দর্শনীয় স্থানের সচিত্র বিবরণ দেয়া হয়েছে, তার একটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের চাঁদপুর স্টেডিয়াম এবং অপরটি হচ্ছে ‘অরুণ নন্দী সুইমিং পুল’। অথচ সেই চাঁদপুরে সাঁতারকে পাঠানো হয়েছে নির্বাসনে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার ন্যূনতম করুণা সত্ত্বেও এই সাঁতারের প্রাণ এখন নিভু নিভু। পানির অভাবে অন্তত ১ বছর ধরে চলছে না অরুণ নন্দী সুইমিং পুল। ফলে আগ্রহীরা শিখতে পারছে না সাঁতার, আর সাঁতারুরা করতে পারছে না অনুশীলন।
আশির দশকের পূর্ব থেকেই চাঁদপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা এবং পরবর্তীকালে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থায় চাঁদপুরের স্বীকৃত সাঁতার সংগঠনের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। ‘চাঁদপুর সুইমিং ক্লাব’ বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ক্লাব হতে পারলেও এবং এ ক্লাবের প্রতিনিধি উক্ত ফেডারেশনের কমিটিতে স্থান পেলেও চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার স্বীকৃত ক্লাব হতে পারেনি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার অসামর্থ্যরে প্রেক্ষিতে চাঁদপুরের সর্বস্তরের সাঁতারুদের সংগঠন ‘চাঁদপুর সাঁতার পরিষদ’ মাসিক ভাড়ায় বছরের পর বছর অরুণ নন্দী সুইমিং পুল চালাতে পারলেও জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদিত ক্রীড়া সংগঠন হিসেবে অনুমোদন পায়নি এবং এই সংস্থার কমিটিতে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি। এর কারণ, ক্রীড়া সংস্থার কমিটির অধিকাংশ সদস্যের প্রবল বিরোধিতা।
চাঁদপুরের সাঁতারকে নিয়ে এবং এখানকার সাঁতারুদের নিয়ে নির্মম পরিহাসের বিবরণ স্বল্প সময়ে বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। ফুটবল, ক্রিকেটসহ অন্যান্য ইভেন্টে চাঁদপুরের সন্তানরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যতোটুকু কৃতিত্ব দেখিয়েছে, তাতে মোটেও ম্লান হয়নি সাঁতারুদের কৃতিত্ব। অমর-অক্ষয়-অব্যয় হয়ে আছে সাঁতারু আঃ মালেক ও অরুণ নন্দীর বিশ^খ্যাতি, চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার দুটি স্থাপনাই যার সবচে’ বড় প্রমাণ। এ দুটি স্থাপনার কোথাও নেই এ দুজন খ্যাতিমান ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের ছবি ও পরিচিতি। জেলা ক্রীড়া সংস্থা পালন করে না এঁদের মৃত্যুবার্ষিকী। কারণ তাদের উদারতা (!) নেই, অর্থও নেই! তবে এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত কিছু সদস্যের অফুরন্ত ঈর্ষা আছে সাঁতারের প্রতি। যার কুফলস্বরূপ চাঁদপুরের সাঁতারের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কবর রচনা না হলেও ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার না হওয়ার সম্ভাবনাই প্রকট হচ্ছে। সেজন্যে সাঁতারপ্রেমী, সাঁতার সংগঠক, সাঁতারুরা বুক চাপড়ে রোদন করে বলছে ‘হায় চাঁদপুর! হায় সাঁতার!!’