প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১৬
এখনও এমন গ্রাম থাকতে পারে!

কচুয়ায় একটি বাড়ি নিয়ে গঠিত ছোট গ্রাম ‘ধৈয়ামুড়ি’। স্থানীয়দের কাছে মাঝিগাছা গ্রাম বলেই পরিচিত এ মহল্লাটি। শত বছর আগে মাত্র একটি পরিবার এ গ্রামে বাড়ি করলেও এখন এ গ্রামের জনসংখ্যা ৪৩ জন ও ভোটার সংখ্যা ২৪ জন। জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ৩নং বিতারা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মাঝিগাছা গ্রামের পূর্ব-দক্ষিণ অংশের বিলে এ গ্রামের অবস্থান। উত্তর জনপদের এ বাড়িতে বসবাস করছে মোট ৮টি পরিবার। বাবা-মা, ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিসহ জনসংখ্যা ৪৩ জন। এ গ্রামের উত্তর-পশ্চিমে মাঝিগাছা, দক্ষিণে যুগিচাপর ও পূর্বে তেগুরিয়া গ্রাম। গ্রামের চারদিকে ফসলি জমি ও সবুজের সমাগম। বছরের প্রায় ৬ মাসেরও বেশি কাদামাটি ও পানি পেরিয়ে ঢুকতে হয় রাস্তাবিহীন ও উন্নয়নবঞ্চিত এ গ্রামে। বর্ষার মৌসুমে একমাত্র ভরসা নৌকা। এ গ্রামের বাসিন্দা আমিন মোল্লা, ছালাম মোল্লা, ইসমাইল মোল্লা, শাহীন মোল্লা ও শিউলি বেগমসহ অনেকে জানান, রাস্তাঘাট না থাকায় ছেলেমেয়েদের বেশিদূর লেখাপড়া করাতে পারিনি। ফলে অনেকে গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছেন। স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মক্তব না থাকলেও আমাদের মূল সমস্যা যাতায়াতের রাস্তা। জন্মের পর থেকে এ গ্রামে কখনো মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কিংবা ইউপি চেয়ারম্যানদের আগমন কেউ দেখিনি। মাঝে-মধ্যে ইউপি সদস্য প্রার্থীরা দূর থেকে প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তীতে কেউ কথা রাখেননি। ফলে শত বছরেও এই গ্রামের দুই দিকে রাস্তা করার সুযোগ থাকলেও রাস্তা নির্মিত হয়নি। তাই জরুরিভাবে একটি নতুন রাস্তা নির্মাণ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কচুয়ার বিতারা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, এ গ্রামের কথা কেউ জানাননি। তবে সরেজমিন খেঁাজখবর নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান রাসেল জানান, আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে নতুন রাস্তা নির্মাণে সহযোগিতা করা হবে।
|আরো খবর
যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণের বরাতে গতকাল চঁাদপুর কণ্ঠে কচুয়ার ছোট্ট গ্রাম ধৈয়ামুড়ি নিয়ে প্রতিবেদনটি ছাপা হয়েছে। এমন একটি প্রতিবেদনের জন্যে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমকর্মীকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। এমপি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনও তো দূরের কথা, ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব (প্রশাসনিক কর্মকর্তা) পর্যন্ত যে গ্রাম সম্পর্কে যুগান্তর প্রতিনিধির কাছ থেকে প্রথম জানতে হয়েছে, সে গ্রামটি কতোটা অবহেলিত সেটা সেখানে না গিয়েও প্রতিবেদনটির বর্ণনা পড়ে যে কেউ খুব সহজে অনুধাবন করতে পারে। এমন পাঠকদের একটাই কমন প্রতিক্রিয়া : এখনও এমন গ্রাম থাকতে পারে! আমাদের প্রতিক্রিয়া একই। আশি’র দশকে ‘৬৮ হাজার গ্রাম বঁাচলে বাংলাদেশ বঁাচবে’ বলে যে শাসক পল্লীবন্ধু খেতাব পেয়েছিলেন, তঁার আমলেও কচুয়ার ছোট্ট গ্রাম ‘ধৈয়ামুড়ি’র কোনো উন্নয়ন হয় নি। তারপর যতো শাসক এসেছে, বিশেষ করে উন্নয়নের বুলি কপচানো ১৫-১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসকের নজরেও এ গ্রামটি আনে নি কেউ? মূল কারণ কি তাহলে ভোটের রাজনীতি? ২৪ জন ভোটারের ভোটের মূল্য কি তাহলে নেই? রাতের ভোটের কারিগরদের কাছে না থাকতে পারে, তাই বলে কি ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার বা এ পদের প্রার্থীদের কাছেও নেই? যা হোক, গণমাধ্যমের কল্যাণে কচুয়ার শুধু নয়, দেশের অন্যতম ছোট্ট গ্রাম ধৈয়ামুড়ি রাস্তা নির্মাণের মাধ্যমে উপজেলার মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত হোক-সেটা অন্য সকলের মতো আমরাও চাই। সাথে সাথে আরেকটি দাবি, ধৈয়ামুড়ি আয়তন ও জনসংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশের সবচে’ ক্ষুদ্রতম বা কতোতম ক্ষুদ্রতম গ্রাম সে ব্যাপারে সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তথ্য প্রকাশ করা হোক।





