প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:১৬
এটা কি ফায়ার সার্ভিসের সদ্ব্যবহার না অপব্যবহার?

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম একটি সচিত্র সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনে লিখেছেন, খেলার মাঠে স্ট্রেচার নিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। মাঠের গ্যালারিতে বসে থাকা দর্শকদের প্রশ্ন : মাঠে আগুন লেগেছে কিনা। চাঁদপুর স্টেডিয়াম হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে ফুটবল লীগ ও ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়েছে। কিন্তু খেলা চলাকালীন মাঠের ভেতরে কখনো দেখা যায়নি ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। চাঁদপুর স্টেডিয়ামে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেলে কিশোরগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলা ফুটবল দলের খেলার সময় দেখা গেছে এই দৃশ্য। মাঠে উপস্থিত থাকা ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা স্ট্রেচার নিয়ে মাঠ থেকে চাঁদপুর জেলা দলের অধিনায়ক সাইফকে বাইরে নিয়ে আসেন। মাঠে উপস্থিত দর্শকরা গ্যালারিতে বসে বলতে থাকেন, এতো বড় একটি খেলা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় চলে, অথচ মাঠে কোনো ডাক্তারের ব্যবস্থা নেই। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেলে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় তারুণ্যের উৎসব জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫-এর ফুটবল খেলা। চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে খেলায় অংশগ্রহণ করে স্বাগতিক চাঁদপুর জেলা ও কিশোরগঞ্জ জেলা ফুটবল দল। খেলা চলাকালীন প্রথম অধ্যায়ের ৩৭ মিনিটের সময়ে চাঁদপুর জেলা দলের অধিনায়ক সাইফ মধ্য মাঠে কিশোরগঞ্জ জেলা ফুটবল দলের ফুটবলারের সাথে ধাক্কা লেগে আহত হয়ে পড়ে যান। এ সময় মাঠের মাঝখান থেকে খেলোয়াড়কে চিকিৎসা দিতে বাইরে পাঠানোর জন্যে রেফারি বাঁশি বাজান। রেফারির বাঁশির আওয়াজ পেয়ে ছুটে যান ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
চাঁদপুর স্টেডিয়ামে আসা ক্রীড়ামোদী দর্শকদের প্রশ্ন : চাঁদপুর জেলায় প্রায়শ খেলাধুলা হয়, কিন্তু কখনো মাঠে মেডিকেল টিমের অভাব হয়নি। আজকের খেলায় কেনো মেডিকেল টিমের কাউকে দেখা গেলো না। ফায়ার সার্ভিসের কাজ তো হলো আগুন নেভানো এবং বিপদগ্রস্ত মানুষের উদ্ধার করা। তারা কি মাঠেও কাজ করতে পারে?
এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে উল্লেখ করতে হয় যে, ফায়ার সার্ভিস বলতে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে বোঝানো হয়, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি জরুরি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এই সংস্থাটি অগ্নি নির্বাপণ, অগ্নি প্রতিরোধ, উদ্ধার কাজ, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান এবং জনগণের মাঝে অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে থাকে। ফায়ার সার্ভিসের এমন সংজ্ঞার আলোকে বলা যায় যে, চাঁদপুর স্টেডিয়ামে কোনো খেলা চলাকালে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের উপস্থিতি শুধুমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের প্রশ্নে সঠিক হয়েছে। কথা হলো, চাঁদপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে কি একটি মেডিকেল টিম আনা যেতো না তারুণ্যের উৎসব জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ ২০২৫ ফুটবল প্রতিযোগিতার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে? এ কথা তিক্ত হতে পারে, এ কথায় কেউ ক্ষুব্ধ হতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল প্রতিযোগিতা বা টুর্নামেন্টের সময় মেডিকেল টিম রাখাটা অনিবার্য। এই অনিবার্যতাকে এড়িয়ে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে যে দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তি ফায়ার সার্ভিসকে ডেকে নিয়েছেন, তিনি কাজটি সঠিক করেন নি। ভবিষ্যতে কোনো ফুটবল টুর্নামেন্ট চলাকালে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে কোনো ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের যাতে আর দেখা না যায় সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। তারপরও যদি কেউ গোঁড়ামি করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদেরকেই রাখেন, তাহলে হয়তো দেখা যাবে, খেলা চলাকালীন কোথাও আগুন লেগেছে, ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মাঠ ছেড়ে জরুরি প্রয়োজনে আগুন নিভাতে চলে গেছে। তখন খেলা চলাকালীন কেউ কম-বেশি আহত হলে তো প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেয়ার মতো লোকও থাকবে না। সেজন্যে বলছি, খেলার মাঠে ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবার লোক নয়, স্বাস্থ্য বিভাগের লোক রাখাই স্বস্তিদায়ক।