শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৩১

থানা পুলিশের তদন্তে ক্রমশ সাফল্য, আর পিবিআই?

অনলাইন ডেস্ক
থানা পুলিশের তদন্তে ক্রমশ সাফল্য, আর পিবিআই?

গতকাল চঁাদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠার ডানদিকে তিন কলামে পুলিশের একটি সাফল্যের খবর ছাপা হয়েছে। যাতে লেখা হয়েছে, হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ কর্তৃক আন্তঃবিভাগীয় তিন ডাকাত ও দুটি ট্রাকসহ মালামাল উদ্ধারের সাফল্যের রেশ মুছে না যেতেই চঁাদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ বড়ো সাফল্য অর্জন করেছে। চঁাদপুর শহরে চোরাই ৬ মোটরসাইকেল উদ্ধারসহ এ কাজে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে আটক করেছে। ৩১ জুলাই ২০২৫ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে চঁাদপুর সদর মডেল থানায় প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। আটককৃতরা হলেন : ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাচিয়াড়া এলাকার পশ্চিম পাঠান বাড়ির রাফসান ইসলাম নিলয় (২০)। সে হারুন অর রশিদ ও সালমা আক্তার সুমি দম্পতির ছেলে। দ্বিতীয়জন ফরিদগঞ্জের ১৫নং রূপসা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বারো পাইকা এলাকার সেলিম ও মোবাশ্বেরা দম্পতির ছেলে মো. ইয়ামিন (২১)। এরা দুজন চুরি করে এনে মোটরসাইকেলগুলো বিক্রি করতো চঁাদপুর সদরের ৮নং বাগাদী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের খান বাড়ির নিজগাছতলা এলাকার মান্নান খানের ছেলে আব্দুস সালাম (২৬)-এর কাছে রেখে। এসব তথ্য নিশ্চিত করে প্রেস ব্রিফিংয়ে চঁাদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. লুৎফর রহমান বলেন, গত ৩০ জুলাই বিকেলে শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে ২ জন মোটরসাইকেল চোরকে ১টি চোরাই মোটরসাইকেলসহ আটক করা হয়। এরপর তাদের দেয়া তথ্যমতে চোরাই মোটরসাইকেল যেখানে বিক্রি করে সেই সালাম মটরস্-এর মালিক আব্দুস সালাম (২৬) কে আরও একটি চোরাই মোটরসাইকেলসহ আটক করা হয়। এরপর আসামীদের তথ্য মতে, বিভিন্ন জায়গা থেকে চোরাই আরো ৪টি মোটরসাইকেলসহ মোট ৬টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান আরও বলেন, এই চক্রটি চোরাই পথে ভারত হতে মোটরসাইকেলগুলো কর ফঁাকি দিয়ে এনে আসামী আব্দুস সালাম-এর নিকট রেখে বিক্রয় করতো। তারা লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চঁাদপুর, কুমিল্লা এলাকা হতে তাদের সহযোগী অজ্ঞাতনামা চোরদের মাধ্যমে চুরি করে সালামের গ্যারেজে মোটরসাইকেলগুলো বিক্রি করার উদ্দেশ্যে হেফাজতে রাখতো। মূলত নিলয়ের এক সহযোগী লক্ষ্মীপুরের মোটরসাইকেল চোর ইয়াসিনের থেকে চোরাই মোটরসাইকেলগুলো নিয়ে এসে এখানে গ্যারেজে রেখে বিক্রি করতো। এই নিলয়ের নামে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরেও মোটরসাইকেল চুরির মামলা চলমান রয়েছে। আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

২১ জুলাই মতলব দক্ষিণে এক নারী হত্যা মামলার মূল আসামী তার স্বামীকে আটক এবং ২৪ জুলাই শাহরাস্তির ডাকাতির রহস্য উদঘাটন ও ডাকাত আটকের বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে দুটি প্রেস ব্রিফিং হয়। সেখানে তুলে ধরা হয় দুটি থানা পুলিশের সাফল্য। ১৩ জুলাই আরেকটি প্রেস ব্রিফিংয়ে মতলব উত্তর থানা পুলিশ কীভাবে এক বিয়ের ঘটক হাবিবুল্লাহকে খুন করা হয়েছে তার রহস্য উদঘাটন করেছে ও খুনিকে আটক করেছে তার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। গেল জুলাই মাসে চঁাদপুর জেলার মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ ও চঁাদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের তদন্তের সাফল্য স্মরণকালে বিশেষ করে ২০২৪-এর ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর কোনো একটি মাসে সাড়া জাগানো ও উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এমন সাফল্য আমরা চঁাদপুরের সাবেক পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের সময়ে তঁাদের যুগল দিকনির্দেশনায় বারবার দেখতে পেয়েছি। তারপর অন্যান্য পুলিশ সুপারের সময় এভাবে আর দেখা যায় নি। তবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), চঁাদপুর-এর ধারাবাহিক সাফল্যে চমকিত হয়েছি। ৫ আগস্ট ২০২৪-এর চঁাদপুরের পিবিআই যে আগের মতো সাফল্যের ধারায় নেই, সেটা গণমাধ্যমের খবর বিশ্লেষণেই প্রমাণিত হয়। তারা ক্লিক করছে না মাসের পর মাস। এমন বাস্তবতায় বর্তমান জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমানের যুগল দিকনির্দেশনায় থানাগুলো তাদের তদন্তে একের পর সাফল্য অর্জন করছে এবং মাদকবিরোধী তৎপরতা ও কিশোর গ্যাং দমনসহ আরো কিছু অপরাধ দমনে লাগাতার কার্যক্রমে স্বীয় দক্ষতা প্রদর্শন করে চলছে। এটা অতীতের তুলনায় আশানুরূপ হন, আশাব্যঞ্জক। তিক্ত হলেও বলতে হয়, ফ্যাসিবাদী সরকারের শেষদিকে চঁাদপুরের এক পুলিশ সুপার অপরাধ দমনে সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনা প্রদানের চেয়ে নিজের স্ত্রীর আবদার পূরণ করতে গিয়ে থানার ওসিসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাকে যেভাবে আনন্দ-বিনোদনের অনুষ্ঠানে ব্যস্ত রেখেছেন, এখন তার কিয়দংশও নেই। সেজন্যে থানাগুলোর তদন্তে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ফিরে এসেছে। জেলাবাসী পুলিশের কাছ থেকে সর্বাত্মক তৎপরতাসহ এমন সাফল্যই প্রত্যাশা করে, পুলিশ সুপারের বাসভবন ও বিভিন্ন থানাতে একের পর পর নৈশভোজসহ আনন্দ-বিনোদনের অনুষ্ঠান নয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়