প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৪৯
দু বিএনপি নেতার সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে

সদ্য বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা, হাজীগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্ব ইমাম হোসেন এবং মতলব উপজেলার সহ-সভাপতি ও নারায়ণপুর বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া তাদের বহিষ্কার সংক্রান্ত পত্র প্রকাশের ২৪ ঘণ্টা শেষ হবার আগেই তঁাদের নিজ নিজ এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এবং বহিষ্কারাদেশ পুনর্বিবেচনা ও প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। আলহাজ্ব ইমাম হোসেন বুধবার (৩০ জুলাই ২০২৫) বিকেলে হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারস্থ বিএনপি কার্যালয়ে আহূত সংবাদ সম্মেলনে বহিষ্কারাদেশটি পুনর্বিবেচনা করার জন্যে দলীয় হাই কমান্ডকে অনুরোধ জানান । এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে চঁাদাবাজি, দখলদারিত্ব, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে আলহাজ্ব ইমাম হোসেনসহ চঁাদপুরের তিন বিএনপি নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়। হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান মাহমুদের সভাপ্রধানে সংবাদ সম্মেলনে আলহাজ্ব ইমাম হোসেন বলেন, আমার ওপর আরোপিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এই মিথ্যা অপবাদের চেয়ে আমার দীর্ঘ এই রাজনীতির বয়সে এবং জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমি আমার মৃত্যু কামনা করছি। আমি আপনাদের মাধ্যমে হাজীগঞ্জবাসীকে বলতে চাই, ১৯৯২ সালে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর আমি তিনবার সাধারণ সম্পাদক, ২০১০ সালে পৌর বিএনপির সভাপতি, ২০১৪ সালে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, ২০১৮ সালে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং সভাপতির মৃত্যুতে আমি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। তিনি বলেন, ব্যবসার মাধ্যমে আমি আমার কর্মজীবন শুরু করি এবং রাজনীতি করি সম্মানের জন্যে। আমার দীর্ঘ এই রাজনৈতিক জীবনে কোনো অন্যায় কাজের প্রশয় দেইনি এবং আমি নিজেও সব ধরনের অন্যায় কাজ থেকে বিরত ছিলাম। রাজনীতির কারণে জেল খেটেছি। গত ৫ আগস্টের পর থেকে আমি চঁাদাবাজ এবং অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে শতভাগ সোচ্চার ছিলাম। যদি কোনো অন্যায় কাজে জড়িত থাকতাম, তাহলে আপনারা (সাংবাদিকরা) সবার আগে জানতেন। গত ১৭ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে আমি আমার সহযোদ্ধাদের সাথে ছিলাম। তা আপনারা (সংবাদকর্মী) দেখেছেন এবং আমি আপনাদের সামনেই ছিলাম। ২০২২ সালে নভেম্বর মাসে জেল খেটেছি। আমার ওপর আরোপিত সুনির্দিষ্ট অভিযোগটি কী, কবে ও কীভাবে আমি চঁাদাবাজি করেছি অথবা কার জায়গা দখল করেছি সে বিষয়টি জানতে চাই এবং আমার ওপর আরোপিত অভিযোগ পুনর্বিবেচনার আবেদন করছি।
একইদিন একই সময়ে নারায়ণপুর বাজারস্থ ডিগ্রি কলেজ রোডে আনোয়ার হোসেন ভুঁইয়া নিজ অফিস কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান এবং বহিষ্কারাদেশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন যে, তিনি একজন সৎ ও পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক কর্মী। তিনি দলের দুর্দিনে, আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে প্রতিটি কর্মসূচি সফল করেছেন। দল থেকে তার বহিষ্কারাদেশ বলবৎ রাখলে আবারও দলে দুর্দিন নেমে আসতে বেশি সময় লাগবে না। তিনি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র মাননীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মাঠ পর্যায়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে পুনর্বিবেচনা করে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার বিনীত অনুরোধ জানান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ষড়যন্ত্র করে কখনো নেতৃত্বকে মুছে ফেলা যায় না। তিনি রাজপথের লড়াকু সৈনিক। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিং-সমাবেশে ছিলেন অগ্রভাগে। তিনি আরও বলেন, আমি দুঃসময়ের পরীক্ষিত জাতীয়তাবাদী নেতা, শহীদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত নিবেদিতপ্রাণ জননেতা। আমার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রমূলক বহিষ্কারাদেশ জারি করা হয়েছে সেটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি ফেসবুকে অনলাইনে বহিষ্কার নোটিস দেখতে পেয়েছি।
চঁাদপুরের বহিষ্কৃত তিন বিএনপি নেতার মধ্যে একজন (মতলব উত্তরের আ. মান্নান লস্কর) চঁাদাবাজি সংক্রান্ত মামলায় জেলে আছেন। আর বাকি দুজন জেলের বাইরে থাকায় সংবাদ সম্মেলন করার সুযোগ পেয়েছেন। তাদের দুজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়ে গঠনতন্ত্রের সুনির্দিষ্ট ধারা মোতাবেক বহিষ্কারাদেশ দিলে তারা নিশ্চয়ই লজ্জায় মুখ লুকাতেন কিংবা সাহসিকতা ও আত্মপ্রত্যয়ের সাথে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের আশ্রয় নিতেন। হঠাৎ তাদের বহিষ্কার করায় তঁারা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার বিকল্প সুযোগ নিয়েছেন, যেহেতু নিজ দলের সংক্ষুব্ধ কেউ আনন্দ মিছিল করে কেন্দ্রকে তুষ্ট করার চেষ্টা করে নি। নিজ দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এমন বহিষ্কারাদেশে বস্তুত থমথমে ভাব বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এমন বহিষ্কারাদেশের বিষয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাখ্যা দেয়া বাঞ্ছনীয়। আমরা জানি, বড়ো দলগুলোতে শূন্যস্থান সহজে পূরণ হয়ে যায়, তবুও আত্মপক্ষ সমর্থন করে কাউকে কিছু করার সুযোগ দেয়াটা মৌলিক মানবাধিকারের মধ্যে পড়ে। কথিত আছে, দৃশ্যমান অনেক চঁাদাবাজ যেখানে সক্রিয়, বড়ো নেতার আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে কমপক্ষে পঁাচশ’ টাকা পকেটে ঢোকানোর লোভও যেখানে কেউ কেউ সামলায় না, সেখানে তাদের কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে দলের দুর্দিনের বন্ধু এমন নেতাদের আত্মপক্ষ সমর্থন বা কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়ে বহিষ্কার কতোটুকু সমীচীন? আমরা কোনো রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বা আদর্শ লালনের কারণে নয়, রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও মানবাধিকারের প্রশ্নে উপরোল্লিখিত অভিমত ব্যক্ত করলাম। বিএনপি শুধু নয়, যে কোনো রাজনৈতিক দলেরই সংগত বিষয়ে সংযত মনোভাব পরিণামদর্শিতার আদলে প্রদর্শন করা উচিত বলে আমরা মনে করি।