রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৩

ভয়ঙ্কর প্রতারকই বটে!

অনলাইন ডেস্ক
ভয়ঙ্কর প্রতারকই বটে!

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যার শিরোনাম দেখে পাঠকমাত্রকেই থমকে দাঁড়াতে হয়েছে। এর শিরোনাম হয়েছে ‘শাহমাহমুদপুরের দমকের গাঁয়ের প্রতারক দুলালের খুঁটির জোর কোথায়? তার দৌরাত্ম্যে গোটা পরিবার ধ্বংস, নিঃস্ব ও সর্বহারা ভাইয়েরা’। এ সংবাদটি পড়াশেষে পাঠককে দেশের প্রবীণ বিশেষজ্ঞ ও গবেষক হাসান আলীর মতো বলতে হবে ‘ভাই কখনো আপন হয় না!’, যদি ভাই এমন ভয়ঙ্কর প্রতারকই হয়। একই মায়ের পেটের ভাই অর্থাৎ সহোদর হয়ে অন্যান্য সহোদরের বিরুদ্ধে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বঞ্চনা ও নির্যাতনের যে নমুনা একের পর এক স্থাপন করে চলছে, তাতে বিস্মিত হতেই হয়। এবার সংবাদটিতে নজর দেয়া যাক। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের দমকের গাঁও গ্রামের দেলোয়ার হোসেন দুলাল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা ও সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের চেলা। ক্ষমতার দাপটে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবত তার নিজের ভাইদের সম্পত্তি জোরপূর্বক ভোগদখল করে আসছেন। বড়োভাই মো. আলী জিন্নাহকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেছেন। তার মৃত ভাই মানিকের সম্পত্তি জীবিত থাকাকালীন রেজিস্ট্রি করার পর টাকা না দিয়ে মারধর করে স্ত্রী-সন্তান সহ বাড়ি থেকে বের করে দেন। দুলাল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে তার ভাইয়েরা বাড়িতে উঠতে পারেন না। দুলাল তার ভাইদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছেন। তার ভাই মফিজ মিয়া প্রবাসে যাওয়ার পর তার বসতঘর ও আসববাবপত্র বিক্রয় করে দেন এবং তার সন্তানদেরকে উচ্ছেদ করেন। সই নেওয়া খালি স্ট্যাম্পে ৩০ লাখ টাকা পাওনা দাবি করে দলিল জালিয়াতি করে মিথ্যা মামলা করেন। এমনকি তার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি দখল করে বিল্ডিং নির্মাণ করেন। সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের মাধ্যমে হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তিনি তার সকল ভাইকে বাড়ি ছাড়া করে রাখেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়িছাড়া ভাই-ভাবী, ভাতিজা ও ভাতিজিরা।

নিজের ও সন্তানদের নিরাপত্তাসহ স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধারে দুলালের এক ভাই মফিজ মিয়া চাঁদপুর মডেল থানায় অভিযোগ করেন। চাঁদপুর সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দায়ের করলে গত ২৬ জুন ২০২৫ ও ৮ জুলাই ২০২৫ তারিখে সেনাক্যাম্পে বৈঠকের মাধ্যমে সকলের হিস্যা যথাযথ বন্টন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ উপস্থিত থাকার জন্যে বলা হলেও দুলাল বাড়ির পর্চা আর জালিয়াতি করা দলিল ছাড়া অন্য কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। মিথ্যা দাবি করা জমি রেজিস্ট্রির দলিল দেখাতেও ব্যর্থ হয়েছেন। এ ব্যাপারে মো. মফিজ মিয়া বলেন, আর্মিদের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদে আগামী মাসের ১০ আগস্ট বৈঠক থাকলেও সে আমার নামে দলিল জালিয়াতি করে মিথ্যা মামলার মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা দাবি করে একটি মিথ্যা বানোয়াট মামলা করে এবং ওয়ারেন্ট বের করে। আমি এই মিথ্যা ও জালিয়াতি মামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সে আমার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি দখল করে ২০০৭ সাল থেকে অদ্যাবধি ভোগদখল করে খাচ্ছে। আমার সন্তানদের বাড়িছাড়া করেছে। বাড়ির সর্বস্ব দখল করে খাওয়ার জন্যে বিভিন্নভাবে আমাকে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে অপমান ও লাঞ্ছিত করে আসছে। তাই আমার মানহানির জন্যে ও দলিল জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা জালিয়াতি মামলার বিরুদ্ধে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। ন্যায্য অধিকার ও আইনি সাহায্য নিতে চাইলে দুলাল আরো ১৪ গুণ বেশি ব্যবস্থা করে রাখার ভয়ভীতি দেখায়, যাতে আপোষে বাড়ির সকল সম্পত্তি সে ভোগ দখল করতে পারে।

দমকের গাঁওয়ের মফিজ মিয়া তার সহোদর ভাই দেলোয়ার হোসেন দুলালের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছেন, তা যদি সত্য হয় তাহলে যে কারো বিস্মিত হয়ে বলতেই হবে, রক্ত সম্পর্কীয় আপন ভাইদের সাথে দুলাল এমন প্রতারণা ও ভয়ঙ্কর কাজ কীভাবে করতে পারে! আমরা এমন ভয়ঙ্কর প্রতারককে শায়েস্তা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিচারকের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। আর যদি দুলাল নির্দোষ হয়ে থাকে, তাহলে তাকে অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি দেয়া বাঞ্ছনীয় বলে মনে করছি। আমরা এক সহোদর ভাইয়ের বিরুদ্ধে আরেকজন সহোদর ভাই বা বোনের অভিযোগ বা মামলার বিষয় প্রায়শই দেখে থাকি, কিন্তু এক ভাইয়ের বিরুদ্ধে অন্য সব ভাইয়ের অভিযোগের এমন ঘটনা সচরাচর দেখি না। তাই এমন ঘটনা সমাজ থেকে নিশ্চিহ্ন হোক সেটা প্রত্যাশা করি। কারণ, এমন ঘটনা চলতে থাকলে সেটা আরো অনেক পরিবারে সংক্রমিত হতে পারে। সেটা হলে বা হতে থাকলে পারিবারিক বন্ধনের সুন্দর নমুনা সমাজ থেকে ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকবে, যেটা মোটেও সুখকর হবে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়