প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৫
যথার্থ এই প্রতিবাদ

শাহরাস্তি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের মাঝে প্রকাশ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা কমিটি কর্তৃক কমিটি সুপারিশের কপি হাতে পাওয়ার পর সোস্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ইতোমধ্যে পদ-পদবী পাওয়া অনেকেই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা আওয়ামী সরকারের রাতের ভোট ও পকেট কমিটির খেলা আর দেখতে চান না। অবিলম্বে এ কমিটি বাতিলের দাবি জানান। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি শাহরাস্তি উপজেলা শাখার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৪ বছরের জন্যে কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সেই কমিটি বিগত সরকারের ছত্রছায়ায় আধিপত্য বিস্তার করে শিক্ষক সমাজকে জিম্মি করে রাখে। ফ্যাসিবাদের পতনের পর নতুন করে নির্বাচনের স্বপ্ন দেখা শুরু করে শিক্ষক সমাজ। নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ইউনিয়ন ও পৌর কমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্ভাব্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যে একাধিক প্রার্থী গণসংযোগ শুরু করেন। শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচনের লক্ষ্যে পাঁচ শতাধিক শিক্ষক স্বাক্ষর করেছেন। ইতোমধ্যেই স্বাক্ষরিত কপি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা শিক্ষক সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হঠাৎ করেই সভাপতি পদে জয়নাল আবেদীন ও সাধারণ সম্পাদক পদে শিবলী সাজ্জাদসহ ৪০ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পর শিক্ষক সমাজে সমালোচনার ঝড় উঠে। কমিটি ঘোষণার পর সিনিয়র সহ-সভাপতি মকবুল আহমেদ মজুমদার তাঁর পদ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, আমি কারো দয়ায় পদ-পদবী চাই না। শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ ভোটে আমরা প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চাই। একটি বিশেষ মহলের ইন্ধনে কমিটি ঘোষণা হয়েছে বলে তিনি জানান। নিজ মেহের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন বলেন, আমাদের ভোটাধিকার কেনো হরণ করা হলো জানতে চাই। এ পদ আমার দরকার নেই, আমি শিক্ষকদের ভোটে তাদের প্রতিনিধি হতে চাই। শিক্ষক সমাজ পকেট কমিটি মেনে নিবে না। সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেন কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। নাট্য বিষয়ক সম্পাদক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমি এই অপমানিত পদবী প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের এটি পেশাজীবী সংগঠন। এখানে কোনো মহলের হস্তক্ষেপ ও রাতের ভোট মানি না। সহকারী শিক্ষক জহিরুল ইসলাম কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সহকারী শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন বলেন, এটি শিক্ষকদের সাথে প্রতারণার শামিল। সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আলী আক্কাস পাটোয়ারী রাতের আঁধারে পকেট কমিটি ঘোষণা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কাব স্কাউট সম্পাদক বিজয় লাল দে তাঁর পদ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ঘোষিত কমিটি বাতিল করে শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচনের আহ্বান জানান শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। অন্যথায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
আমরা এই সম্পাদকীয় নিবন্ধে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির চাঁদপুর জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তথা নেতৃত্ব নির্বাচনে যেখানে গতকাল মুগ্ধতা প্রকাশ করেছি, সেখানে আজ শাহরাস্তি উপজেলার কমিটি গঠন নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করছি। বিগত জেলা কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল তাঁর বিদায়ের পূর্বে ভোট ছাড়া শাহরাস্তি উপজেলা কমিটি সুপারিশ করে গেলেন কার প্রভাবে কিংবা প্রচ্ছন্ন চাপে সেটা অনেকের উপলব্ধিতে ধরা দিচ্ছে না। শাহরাস্তিতে এখন এমপি নেই, ক্ষমতাধর পৌর মেয়র নেই, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতাপশালী সেক্রেটারী নেই, তাহলে কার চাপে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা কমিটি শাহরাস্তির জন্যে পকেট কমিটি দিয়ে দিলো? এতে আছে কি অর্থযোগ না অন্য কিছু? আমরা জেলা কমিটির নূতন নেতৃত্বের কাছে শাহরাস্তি উপজেলায় নির্বাচন দিয়ে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া অবলম্বনের যৌক্তিকতা উপস্থাপন করছি, যেহেতু ইতোমধ্যে গণতান্ত্রিক উপায়ে ইউনিয়ন ও পৌর কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা জেলা কমিটির নূতন নেতৃত্বের গৌরব বিদায়ী কমিটির ভুলের ম্লানিমায় যেনো ঢেকে না যায় সেটাই প্রত্যাশা করছি। সেজন্যে ভুলটি অপনোদনের জন্যে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে নূতন জেলা কমিটির সক্রিয় সাড়ার বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করছি। আমাদের মতে, পকেট কমিটি গঠনের প্রেক্ষিতে শাহরাস্তির সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বিরাট অংশের প্রতিবাদ যথার্থ।