প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৫, ০৯:২৩
নজরুলজয়ন্তী
সংগীত নিকেতন ও নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল ছিলো প্রাণময় ও বর্ণাঢ্য। শহরের দুই ঐতিহ্যবাহী সংগঠন নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখা ও সংগীত নিকেতন পৃথক পৃথক আয়োজনে কবি নজরুলকে নিবেদন করেন সাংস্কৃতিক উচ্ছ্বাসের এক অনন্য মঞ্চ। নজরুলের রচিত গান ও তাঁর গানের সাথে নৃত্য ছিলো অনুষ্ঠানের মুগ্ধতা।
নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদের উদ্যোগে গত ১ জুন ২০২৫ (শনিবার) কবি নজরুল সড়কস্থ চাঁদপুর রোটারী ভবনে অনুষ্ঠিত হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজনটি ছিলো কবির জীবন, সাহিত্য ও সঙ্গীতচর্চার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের এক শিল্পসম্মত প্রয়াস। অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় নজরুল সংগীত, একক ও দলীয় নৃত্য, আবৃত্তি এবং আলোচনা।
সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌধুরী এবং সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ও কণ্ঠশিল্পী রূপলী চম্পক।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকসহ চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বরা।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সংগঠনের শিল্পীদের প্রাণবন্ত পরিবেশনায় শ্রোতা-দর্শকরা ভীষণ মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নজরুলচেতনার বহুমাত্রিক দিকগুলো উঠে আসে মঞ্চে। এই আয়োজন ছিলো এক ধরনের প্রজন্মান্তরের সংলাপ। যেখানে নজরুলের সাহস, প্রেম, দ্রোহ এবং মানবতাবাদ নতুনভাবে আলো ফেলে আজকের সমাজ বাস্তবতায়।
এছাড়া চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়ায় সাহা বাড়ি রোডস্থ চন্দ্র কান্ত সাহা মিলনায়তনে সংগীত নিকেতনের গানে-আলোচনায় নজরুলকে স্মরণ করা হয়। গত ২৫ মে ২০২৫ (রোববার) সন্ধ্যায় চাঁদপুর সংগীত নিকেতনের নিজস্ব এই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও সুরভরা সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।
মিলনায়তনের বাতাস জুড়ে ছিলো কবিকণ্ঠের অনুরণন, বাচিক শিল্পীদের আবৃত্তির দ্যোতনা এবং শিশু-কিশোরদের সুরেলা কণ্ঠে নজরুল সংগীতের প্রাণ। অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সংগঠনের অধ্যক্ষ স্বপন সেনগুপ্ত।
আলোচনা পর্বে নজরুলের সাহিত্য, সংগীত ও দর্শনের বহুমাত্রিক প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বক্তব্য রাখেন অতিথি ও শিল্প-সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকবৃন্দ। সঞ্চালনায় ছিলেন চিত্রাংকন বিভাগের শিক্ষক বিমল চন্দ্র দে। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় বড়োদের সংগীত পরিচালনা করেন রিয়া চক্রবর্তী এবং শিশুদের পরিবেশনায় ছিলেন বিচিত্রা সাহা। নজরুল সংগীত, দলীয় ও একক নৃত্য এবং আবৃত্তির মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয় নজরুলের সৃষ্টি ও আদর্শ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক বাবুল চক্রবর্তী, শংকর আচার্য, দীপক চক্রবর্তী, অমল সেনগুপ্ত, পলাশ সেনগুপ্ত ও শান্তি রক্ষিতসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা।
চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক প্রাণপ্রবাহে নজরুলচেতনার প্রাণপ্রবাহ এই দুটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে। মনে হয়েছে, চাঁদপুরের সংস্কৃতি জগৎ এখনো কবি নজরুলের প্রেরণায় বেঁচে আছে, বাঁচে এবং বাঁচাতে চায়। সুর, ছন্দ, বাণী ও আলোচনার ছায়াতলে যে নবজাগরণ, তাতে শুধু অতীত নয়, ভবিষ্যতের দিকও নির্ধারিত হয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কণ্ঠে যে সাহস আর হৃদয়ে যে ভালোবাসা ধারণ করতেন, সেই শক্তিই ছুঁয়ে গেছে নতুন প্রজন্মের কণ্ঠ ও হৃদয়কে।