বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৫, ০৯:১৭

সড়কটি যেনো মৃত্যুকূপ!

অনলাইন ডেস্ক
সড়কটি যেনো মৃত্যুকূপ!

বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই সড়কে মোটরসাইকেল চাপায় ওয়াজ উদ্দিন (৬৫) নামের এক পথচারী মারা গেছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন মোটরসাইকেল আরোহী ও তার স্ত্রী-সন্তান। রোববার (২২ জুন ২০২৫) সন্ধ্যায় মতলব -বাবুরহাট-পেন্নাই সড়কের ডাকঘর নামক এলাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত ওয়াজ উদ্দিনের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে। প্রত্যক্ষদর্শী শিপন খান জানান, ওয়াজ উদ্দিন নামক বৃদ্ধ লোকটি ডাকঘর এলাকায় মুদি দোকান থেকে রাস্তা পারাপারের সময় ফরিদগঞ্জ থেকে আসা মোটরসাইকেলটি তাকে ধাক্কা দেয়। সাথে সাথে পথচারী বৃদ্ধ লোকটি ছিটকে পড়ে গিয়ে মাথায় মারাত্মক আঘাত পান। জানা যায়, মোটরসাইকেল আরোহী ফরিদগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর গ্রামের রহিম কাজীর ছেলে রাজু আহমেদ (৪৫)। তার স্ত্রী ও শিশু সন্তানও গুরুতর আহত হন।

স্থানীয় এলাকাবাসী তাদেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক বৃদ্ধ ওয়াজ উদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে মোটরসাইকেল আরোহী রাজু আহমেদ ও তার স্ত্রী, সন্তানের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বাহার মিয়া বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। উল্লেখ্য, মতলব-বাবুরহাট-পেন্নাই সড়কে গত একমাসে ৫টি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে এ পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরীপুর সড়ক ছিলো সড়ক দুর্ঘটনার জন্যে কুখ্যাত। এখন সেই কুখ্যাতি এসে ভর করেছে বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই সড়কে। এক মাসে পাঁচটি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু এই সড়কটিকে কার্যত মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে। কথা হলো, এমনটি হলো কেন? এর জবাব হচ্ছে, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি এমনটি যারা বোঝে না, তাদের কারণে এটি হয়েছে।

উল্লেখ করা দরকার, আগে চাঁদপুর জেলার পশ্চিম-দক্ষিণাঞ্চল, পশ্চিম-উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য অঞ্চলসহ সন্নিহিত লক্ষ্মীপুর ও শরীয়তপুর জেলার লোকজন ঢাকা যাতায়াতে লঞ্চকেই অগ্রাধিকার দিতো। কেননা লঞ্চ ভ্রমণে স্বস্তি ও আরাম ছিলো, ভাড়া কম ছিলো, বৈরী আবহাওয়া ছাড়া অন্য সকল সময়ে দুর্ঘটনা মুক্ত ছিলো। কিন্তু চাঁদপুর শহর ও ঢাকা সদরঘাটের যানজট মোকাবেলা, লঞ্চগুলোর নৌপথ পাড়ি দিতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় ব্যয় এবং যাচ্ছেতাই ভাড়া বৃদ্ধিতে বিরক্ত হয়ে যাত্রীরা কম সময়ে ও কম ভাড়ায় ঢাকা যাতায়াতের জন্যে বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই এবং হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরীপুর সড়ককে বেছে নেয়। দীর্ঘকাল ধরে কুমিল্লা হয়ে চাঁদপুরের বাসগুলোর ঢাকা যাতায়াত হচ্ছে ঘুরপথে বেশি সময় ব্যয় করে প্রশস্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক (চাঁদপুর-কুমিল্লা) ও জাতীয় মহাসড়ক (ঢাকা-চট্টগ্রাম) পাড়ি দেয়া। এতে দুর্ঘটনা কম হলেও সময় যায় অনেক বেশি। এই বেশি সময়তে বিরক্ত হয়ে যাত্রীরা মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারযোগে ২-৩ ঘণ্টায় ঢাকা যাতায়াতে সংক্ষিপ্ত রুট হিসেবে বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই ও হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরীপুর সড়ক ব্যবহার শুরু করে। এমনকি ভেঙ্গে ভেঙ্গে সিএনজি অটোরিকশাযোগে ঢাকা যাতায়াতের প্রবণতায় ভুগতে থাকে। এসব পর্যবেক্ষণ করে ছোট বডির বাস মালিকরা উপরোল্লিখিত সংক্ষিপ্ত দুটি সড়ক রুটে বাস চালানোটা যাত্রীপ্রিয় হবে বলে ধরে নেয় এবং অপ্রশস্ত ও বাঁকবহুল সড়ক হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে রুট পারমিট আদায় করে নেয়। আর মোটরসাইকেলের চালকরা তো এই দুটি রুটকে দেড়-দুঘণ্টায় ঢাকা যাতায়াতের মোক্ষম পথ হিসেবে পছন্দের তালিকায় সর্বাগ্রে স্থান দেয়। এতে সময় বাঁচছে ঠিকই, কিন্তু জীবন বাঁচছে না। বেপরোয়া চলাচলে একের পর ঘটছে দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনা সংঘটনে বাস ও মোটরসাইকেল থাকছে এগিয়ে। শিকার হচ্ছে এগুলোর চালক ও যাত্রী, পথচারী, বিশেষ করে সিএনজি অটোরিকশা। এই দুর্ঘটনা হ্রাসে বা রোধে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, সেটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে ভাবতে হবে গভীরভাবে এবং নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। যাতে মৃত্যুকূপের কুখ্যাতি থেকে দুটি সড়ক রুট রেহাই পায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়