প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫, ০৮:৩৭
বারবার বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক তো এমনই করবেন-

শাহরাস্তি উপজেলার বলশীদ হাজী আকুব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অখিল চন্দ্র দেবনাথের প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৯ মে ২০২৫) সকালে ক্লাস বর্জন করে শিক্ষার্থীরা বলশীদ বাজার ও বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ মিছিল করে। প্রায় এক ঘন্টাব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক অখিল চন্দ্র দেবনাথের প্রত্যাহারের দাবি জানান। এক পর্যায়ে এলাকাবাসী ও শিক্ষকবৃন্দের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারা ক্লাসে ফিরে যায়। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. রায়হান উদ্দিন জানায়, যোগদানের পর থেকে প্রধান শিক্ষক তাদের সাথে অশোভন আচরণ করে আসছেন। তিনি একজন ইসলামবিদ্বেষী লোক, আমরা তার প্রত্যাহারের দাবি জানাই। দশম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী মাহবুব আলম জানায়, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নেয়ামত ভাইয়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে আমরা প্রধান শিক্ষকের প্রত্যাহার দাবি করছি। সিনিয়র শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন জানান, ছাত্রীদের সাথে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের কারণে প্রধান শিক্ষক অখিল চন্দ্র দেবনাথ ২০১৫ সালে ১১ মাসের জন্যে বরখাস্ত হয়েছিলেন। এরপর ২০২২ সালে তিনি অ্যাসেম্বলিতে বিসমিল্লাহ বলার কারণে শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষিপ্ত হন, পরবর্তীতে তাকে ৯ মাসের জন্যে বরখাস্ত করা হয়। সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা মো. সালেহ উদ্দিন জানান, প্রধান শিক্ষক সকলের সাথেই খারাপ আচরণ করে থাকেন। একজন শিক্ষক ও কর্মচারী বাদ নেই, যিনি তার আক্রমণের শিকার হননি। শিক্ষক জহিরুল কাইয়ুম পাটোয়ারী জানান, ২০০৯ সালে প্রধান শিক্ষক যোগদানের পর থেকে স্কুলটির মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মশিউর রহমান ভূঁইয়া জানান, প্রধান শিক্ষক একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে আঘাত করতে পারেন না। আমি উক্ত ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। স্থানীয় এলাকাবাসী মমতাজ উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, আমরা বিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছি। আমাদের এলাকার সম্মান যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সেই বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ১৮ মে ২০২৫ (রোববার) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অখিল চন্দ্র দেবনাথ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নেয়ামত উল্লাহকে মারধর করার পর তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সোমবার তিনি বিদ্যালয়ে আসেননি। সহকারী প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। বারবার বরখাস্ত হওয়া এক ব্যক্তিকে শাহরাস্তির বলশীদ হাজী আকুব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে রাখার কারণে তিনি কী করতে পারেন, সেটা ১৮ মে’র ঘটনাতেই প্রমাণিত হলো। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পরেও তাকে প্রধান শিক্ষক পদে রাখতে হবে কেন সেটা আমাদের মাথায় ঢোকে না। তিনি তার প্রশাসনিক দক্ষতা ও পাঠদান কৌশলে ভালো ফলাফলের জন্যে বিদ্যালয়টিকে জেলাব্যাপী ও দেশব্যাপী পরিচিত করাতে না পারলেও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্যে গণমাধ্যমে সংবাদের উপজীব্য হয়ে সেটি করাতে পারছেন। বিদ্যালয়টি পরিচালনায় যারা জড়িত, তারা কেমন সেটা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ আছে। কারণ, তারা বারবার বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষকের মাঝে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রাতিষ্ঠানিক সনদ ছাড়া এমন কী যোগ্যতা খুঁজে পেয়েছেন যে, তাকে যে করেই হোক প্রধান শিক্ষক পদে রাখতে হবে! প্রধান শিক্ষকের বিশেষ কী যোগ্যতায় তিনি তার চেয়ারটিতে হোঁচট খেয়েও বসতে পারছেন, সেটা আমরা জানি না। তবে তার এমন ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা নিশ্চয়ই আছে, যাতে তিনি সাত খুন করেও মাফ পাওয়ার মতো ফুরসত রয়েছে। আমরা মনে করি ও বিশ্বাস করি, যারা বিতর্কিত ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন, সুযোগ দেন, তারা পক্ষান্তরে নিজেদেরকেই বিতর্কিত করেন। নামাজ পড়ার জন্যে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর গায়ে হাত তোলার দায়ে যে প্রধান শিক্ষক এই সম্পাদকীয় নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত ন্যূনতম জবাবদিহিতা কিংবা শাস্তির মুখোমুখি হলেন না, তাকে পরিচালনাকারীরা অর্থাৎ বিদ্যালয় ম্যানজিং কমিটির লোকজন যে কতোটা উদাসীন বা ম্যানেজ্ড সেটা কি খোলসা করে বলার দরকার আছে?