মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০০:৩১

বাঙালি নয় বরং বাংলাদেশি বোধ ও বিশ্বাসকে ধারণ করে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা উচিত

----শেখ মুহাম্মাদ জয়নাল আবেদীন

চাঁদপুর কন্ঠ রিপোর্ট
বাঙালি নয় বরং বাংলাদেশি বোধ ও বিশ্বাসকে ধারণ করে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা উচিত

পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ বা বাংলা পঞ্জিকার প্রথম দিন। আমার ছোট বয়সের দেখা এই দিনকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের হালখাতা বকেয়া পরিশোধ, নতুন তালিকায় নাম ওঠানো, মিষ্টি বিতরণ এবং গ্রাম্য সংস্কৃতিতে নবান্নের হরেক আয়োজন ছিলো লক্ষণীয়।

দক্ষিণ এশিয়ার একটি বৃহত্তর অঞ্চলকে বাংলা বা তার অধিবাসীরা বাঙালি হিসেবে পরিচিত।

বিশেষ করে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসাম। বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে তার জাতীয় ও রাষ্ট্রভাষা বাংলা এবং ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ত্রিপুরা ও আসাম যেখানে বাংলা প্রধান এবং দাপ্তরিক ভাষা। অত্র অঞ্চলের বাঙালিদের রয়েছে ৪ হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলা অঞ্চলের রয়েছে স্বকীয় ঐতিহ্য ও স্বতন্ত্র সংস্কৃতি। বাংলা ছিলো তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে ধনী অঞ্চল, বাংলা অঞ্চল ছিলো তৎকালীন সময়ের উপমহাদেশীয় রাজনীতির ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। এখনো বাংলা দক্ষিণ এশীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে এবং বাঙালি সংস্কৃতি ধর্মীয় ও জাতীয় দিক দিয়ে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।

বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের ইতিহাস প্রধানত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত :

* আদি যুগ বা প্রাচীন যুগ : আনুমানিক ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত

* মধ্যযুগ : ১২০০ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত

* আধুনিক ১৮০১ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত।

যুগ বা সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে ইতিহাস, ঐতিহ্যবোধ, বিশ্বাস, শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ধর্মীয় চর্চার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

পাকিস্তান সৃষ্টি বা ১৯৪৭ এর পূর্বে বৃহত্তর ভারতীয় উপমহাদেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশীরাও হিন্দুয়ানি সংস্কৃতির আগ্রাসনে বন্দী ছিল প্রায়। বিশেষ করে মুসলমানদের নামের পূর্বে শ্রী লেখার প্রচলন ছিলো, মুসলমানদের ধুতি পরা, কথায় কথায় মুসলমান নারী-পুরুষদের মুখে শোনা যেত এটা করলে ঘরে লক্ষ্মী আসবে না, প্যাঁচায় ডাকলে মৃত্যু আসবে, কাক ডাকলে ঝগড়া হবে, খালি কলস দেখে রওয়ানো হলে ওই দিনের যাত্রা শুভ হবে না-- এ রকম হাজারো বাক্য ও পারিবারিক আয়োজন সাদৃশ্য বিষয়গুলো দিয়ে মুসলমানদেরকে সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির বেড়াজালে বন্দী করা হয়। যা মুসলিমদের বোধ ও বিশ্বাসের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।

সংস্কৃতির আগ্রাসন এ অঞ্চলের মুসলমানদের উপর নতুন নয়, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও ক্ষমতাসীনদের সহায়ক শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে মুসলমানদের বোধ ও বিশ্বাসের ওপর তারা আক্রমণ করে। দেশের ওলামায়ে কেরাম, হক্কানী পীর বুজুর্গ এবং ইসলামি চিন্তাবিদগণ এ বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক করা সত্ত্বেও প্রতিবেশী হিন্দুয়ানি রাষ্ট্রের তাঁবেদারির কারণে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি এদেশের হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।

বাংলাদেশ চরিত্রগতভাবে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান প্রত্যেকে সক্রিয়ভাবে তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি, কৃষ্টি-কালচার, আচার-আচরণ, পোশাক পরিচ্ছদ, শিক্ষা, সংস্কৃতি সকল কিছু তাদের বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে একই সমাজে পালন করে যাচ্ছে । ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ইসলাম ধর্মের সাথে অন্য কোনো ধর্মের সাংঘর্ষিক বিষয় হয়ে উঠেনি এবং ভবিষ্যতে তা উঠবে না। এর মূল কারণ হলো এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান আর মুসলমানরা প্রত্যেক ধর্মের অধিকার রক্ষা এবং তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা করা তাদের ধর্মীয় শিক্ষা। আর এ কারণেই ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানরা নিপীড়ন এবং নির্যাতনের শিকার হওয়া সত্ত্বেও এখানে সকল ধর্মের লোকেরা মায়ের কোলের মতো নিরাপদে বসবাস করছে। আর এটাই ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব।

বিগত দিনে আমরা লক্ষ্য করেছি, পহেলা বৈশাখের এই দিনে মঙ্গল শোভাযাত্রা বা আনন্দ শোভাযাত্রার নামে বিশাল র‌্যালি বের করা হয়, যে র‌্যালিতে হাতী, ঘোড়া,

প্যাঁচা ও হিন্দু দেবতাদের মূর্তি সাদৃশ ছবি সহ ঢোল-বাদ্য-বাজনার মাধ্যমে র‌্যালির আয়োজন করা হয়, যা হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি চরিত্রের সাথে মানায়।

বাংলা ভাষাভাষী পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরার যেহেতু অধিকাংশ নাগরিক হিন্দু এবং কেন্দ্রীয় সরকারও হিন্দুত্ববাদী সরকার, সে হিসেবে তাদের ধর্মীয় কৃষ্টি-কালচার, রীতিনীতি ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে এ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে । তাদের সাথে সেটা মানায়।

কিন্তু বাংলাদেশ বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে এ দেশের সামাজিক রীতিনীতি, ধর্মীয় বোধ ও বিশ্বাস সম্পূর্ণ আলাদা। মনে রাখতে হবে, একটি দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি রচিত হয় ঐ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বোধ ও বিশ্বাস, কৃষ্টি-কালচার, ধর্মীয় রীতিনীতির ওপর নির্ভর করে। তাই জাতীয়ভাবে এমন কোনো আচার অনুষ্ঠান প্রদর্শন ও শব্দ চয়ন করা যাবে না, যার মাধ্যমে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় রীতিনীতি ও কৃষ্টি-কালচারের সাথে সংঘর্ষিক হয় এবং নতুন প্রজন্মের কাছে ধর্মীয় বিশ্বাসে আলাদা কোনো বার্তা বহন করে।

ধর্ম এমন একটি শক্তিশালী ও প্রভাবিত আদর্শ, যা সকল জাতি উক্ত বিষয়কে মৌলিকভাবে সামনে রেখে সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সাজানোর চেষ্টা করে।

বাংলা নববর্ষের এই দিনে মুসলিম শাসকদের দীর্ঘ সাতশত বছরের ইতিহাস- ঐতিহ্য, মহান স্বাধীনতা অর্জনের ঐতিহাসিক বীরত্বের চিত্র, ভাষা শহীদদের অবদান তুলে ধরা, দুর্নীতি-দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে যারা দেশ গঠনে বারবার এগিয়ে এসেছে, দেশের জাতীয় সংকট ও মানবতার চরম দুর্দিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা মানব সেবায় অবদান রেখেছে, বিশেষ করে করোনা মহামারী ও বন্যা দুর্যোগে, স্বৈরাচারবিরোধী জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস ঐতিহ্য, বাবা- মায়ের সাথে সন্তানের আচার-আচরণ, বাবা- মায়ের কাজে সন্তানের সহযোগিতা, ছোট থেকে সন্তানকে পারিবারিক দায়িত্বশীল করে গড়ে ওঠা, মুসলমানের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় করণীয়, হিন্দুদের দুর্গাপূজা, খ্রিস্টানদের বড়দিন, বৌদ্ধদের বৌদ্ধ পূর্ণিমায় করণীয় বিষয় এখানে স্থান পেতে পারে।

আলাদা প্রদর্শনীর মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়