মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৮

প্রবাসে কেটে যায় ঈদ, থেকে যায় স্মৃতি

মাহাফুজুল হক চৌধুরী, আবুদাবি, আরব আমিরাত থেকে
প্রবাসে কেটে যায় ঈদ, থেকে যায় স্মৃতি

বিদেশ জীবনের টানা ১১তম ঈদ পালন করলাম প্রবাসে। ২০১৫ সাল থেকে কখনো দেশে ঈদ পালন করা হয়নি আমার। তবে এ নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই, নেই কোনো অনুভূতি, নেই কোনো অভিযোগ। আমি বরাবরই অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা হতে পছন্দ করি। ঈদ আসলে দেড় কোটি প্রবাসীর আকুতি শুনতে পাই। তবে আমি কখনো আকুতি জানাইনি। কখনো কাউকে বলা হয়নি ঈদে আমার খারাপ লাগে, কষ্ট লাগে। ঈদ আসলে অন্যরা কষ্ট পেলেও আমি আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করি। অন্যরা কষ্ট পায়, কারণ ঈদটাকে তারা উপলব্ধি করে, যখন তারা তাদের মনের সেই আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারে না! যেমন তাদের ইচ্ছে করে পরিবারের সাথে ঘুরবে, বউ বাচ্চা মা-বাবার মুখ দেখবে। যখন সেটি করতে পারে না তখনই তারা কষ্ট পায়। আর যার কোনো আকাক্সক্ষাই থাকে না তার তো কষ্ট পাওয়ারও কিছু থাকে না। আমার কোনো আকাক্সক্ষা নেই, ঈদ আসলে আমার আলাদা কোনো অনুভুতি কাজ করে না। যার ফলে আমি কষ্ট না পেয়ে আনন্দ খুঁজি।

প্রবাস জীবনে যে বছর প্রথম ঈদ পালন করেছি সে বছর বরাবরের মতোই বাংলাদেশের আমেজ উপলব্ধি করেছি। যখন দেখলাম ঈদের দিনেও কাজ থেকে ছুটি পাইনি, ঈদের জন্যে কোনো নতুন জামা কিনতে পারিনি, সেদিনই প্রবাস জীবন কী তা আর বুঝতে বাকি রইলো না। তবে ঈদের দিন ছুটি না পাওয়ার কারণ হলোÑআমার প্রবাস জীবন শুরু হয়েছে ইউরোপের দেশ সাইপ্রাসে। সাইপ্রাস খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের দেশ হওয়ায় সেদেশে মুসলমানদের ধর্মীয় কোনো উৎসবে সরকারি বন্ধ দেওয়া হয় না। আমি জানতাম না এদেশের এ রকম সিস্টেম। আমি তখন গাড়ির ওয়ার্কশপে কাজ করতাম সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোশিয়ার ফ্যাক্টরি এরিয়াতে। আমার দেশের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশে।

ভেবেছিলাম মালিক থেকে ঈদের দিন ছুটি চেয়ে নেবো, কিন্তু ঈদের দুদিন আগ থেকে কাজের এতোটাই চাপ ছিল যে, তার কাছে যে ছুটি চাইবো সে পরিস্থিতি আমার ছিলো না। রাতে ভাবি, ঈদের নামাজ আর পড়া হবে না। কারণ আমি যেখানে কাজ করি ওখান থেকে মসজিদ প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু রাতে কয়েকজন বন্ধুর অনুরোধে ভোরে উঠে পুরাতন জামা পরে বাসে করে চলে গেলাম রাজধানী নিকোশিয়ায় নামাজ পড়তে। কিন্তু নামাজ শেষ করে কিছুতেই আর কাজে ফিরতে ইচ্ছে করছিলো না। বন্ধুরা ডেকে নিয়ে গেলো বাসায়। তারা রান্নাবান্না করছে, আমাকে না খেয়ে আসতে দিচ্ছিলো না। কিন্তু সকাল ৯টা থেকে মালিকের ফোন আর ফোনে বিরক্ত হয়ে খাবার না খেয়েই চলে আসতে হয়েছে কাজে। রাগ করে আর বাড়িতেও কাউকে ফোন দিয়ে বলিনি এ কষ্টের কথা। কিন্তু তারা ধরে নিয়েছিলো আমি অনেক আনন্দ করছি বিদেশে। পরের বছর থেকে আর কখনো এটা নিয়ে আক্ষেপ করিনি। তবে আমার ৬ বছর সাইপ্রাস জীবনে একবার ছুটি পেয়েছিলাম ঈদের দিন, কারণ সেদিন ছিলো রোববার। সাইপ্রাসে রোববারে সরকারি ছুটি। সাইপ্রাসে এভাবে আমার মতো প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশির একই অবস্থা। কারো মনে কোনো ঈদের আনন্দ নেই।

এরপর ২০২০ সালের শেষের দিকে চলে আসলাম আরব আমিরাতে। এখানে এসে বড়ো ভাইয়ের কন্সট্রাকশন ঠিকাদারি কোম্পানিতে জয়েন করলাম। এখানে এসেই ঈদের নতুন করে অনুভূতি হতে লাগলো। কারণ এখানে এসেই ঈদের দিন পরিবারের মা, ভাই ও ভাইয়ের পরিবারকে পেয়েছিলাম। আমিরাতের প্রথম ঈদ কেটেছে আমার কাছে অনেক আনন্দের। মনে হয়েছিলো আমি দেশেই ঈদ করছি। ঈদের সময়টা নিজের পরিবারের সাথে কাটাতে পারার মাঝে কী এক প্রশান্তি তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

আমার কাছে ইউরোপ আর মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের মাঝে অনেক তফাৎ মনে হয়। ইউরোপ প্রবাসীরা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়। তারা চাইলেও দেশে যেতে পারে না, যেভাবে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা চাইলে দেশে যেতে পারে।

কতো মানুষ দেশে ঈদের আগে স্বজন হারিয়ে ফেলে, কতো অসহায় মানুষ দেশে ঈদ করতে পারে না। কতো মানুষ পরিবার থেকে দূর দূরান্তে কাজ করার কারণে ঈদে বাড়ি যেতে পারে না। কিন্তু আমরা কি কখনো তাদের কথা ভেবেছি? তারা হয়তো প্রবাসী নয়, কিন্তু তারাও তো আমাদের মতো কষ্টের ভাগীদার। শুধু প্রবাসীদের প্রতিই সহানুভূতির চোখে তাকাতে হবে তা আমি একজন প্রবাসী হয়েও সমর্থন করি না। বরং আমরা সেসব মানুষ থেকে ভাল আছি। অন্তত আমাদের আত্মতৃপ্তি পাবার মতো একটা বিষয় আছে। আমরা তাদের চেয়ে বেশি টাকা ইনকাম করি, তাদের চেয়ে ভাল অবস্থানে আছি। আসলে পৃথিবীটা কারো জন্যেই পুষ্পশয্যা নয়, ঈদটা কেবল তারই একটা অংশ। এটাতে আলাদা করে কষ্ট পাবার কিছু দেখি না আমি।

যাই হোক, এভাবে কেটে গেলো অনেক ঈদ। এবারের ঈদে প্রথমদিন ঘুমিয়ে আর মোবাইলে কথা বলে কাটালেও পরেরদিন একটু দূরে গেলাম ভাই আর বন্ধুদের সাথে ঘুরতে। কারো চোখেমুখে হতাশার চাপ নেই। হয়ত তারাও আমার মতো নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। এভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারলে ঈদের দিনে আলাদা করে প্রবাসীদের আর কষ্ট পেতে হবে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়