মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৫, ০৫:০৩

সিয়াম সাধনা ও ঈদুল ফিতর

কাজী শাহাদাত
সিয়াম সাধনা ও ঈদুল ফিতর

‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের  কালজয়ী এই গানটি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মাঝে সমাদৃত। যেই উৎসবকে ঘিরে কবি নজরুল এই গান বা গজলটি রচনা করেছেন, সেই উৎসব আমাদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। সেই উৎসবটি হলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। আজ শাওয়ালের চঁাদ দেখা গেলে আজকের রাতটি হবে ঈদুল ফিতরের রাত। রাত পোহালে হবে ঈদুল ফিতরের দিন। আর যদি আজকে শাওয়ালের চঁাদ দেখা না যায়, তাহলে রমজান ত্রিশ পূর্ণ হয়ে ১ এপ্রিল মঙ্গলবার হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলিম উম্মাহর জন্যে এক অনন্য খুশির দিন হলো ঈদুল ফিতর। এই ঈদুল ফিতরের সাথে রমজানের রোজার এবং সিয়াম সাধনার সম্পর্ক রয়েছে। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আনন্দের আবহ নিয়ে আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তাই এই ঈদ মুসলমানদের প্রতীক্ষিত এক মহা আনন্দ উৎসব। একজন মুসলমান এক মাস রোজা পালন শেষে নিষ্পাপ ও স্বচ্ছ জীবনের অধিকারী হয়ে ওঠে। যার ফলে শাওয়ালের প্রথমদিন মুসলিম উম্মাহ ঈদ উদযাপন করে থাকে। আর এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে রোজাদার মুসলমানের জন্যে নিয়ামত স্বরূপ পুরস্কার। হাদিস শরীফে এসেছে, এ আনন্দ কেবল তার, যিনি দীর্ঘ এক মাস কঠোর সিয়াম সাধনায় নিবেদিত ছিলেন। আমরা দেখছি, সমাজে কিছু লোক আছে যারা রমজান মাসেও বিভিন্ন অপকর্ম থেকে নিবৃত্ত হয়নি, রিপু দমন করেনি। দুর্নীতি, সুদ, ঘুষ, হানাহানি ইত্যাদি গর্হিত কাজ থেকে বিরত হয়নি। তারাই আবার ঈদের কেনাকাটা মহাধুমধামের সাথে করছে। বস্তুত এদের জন্যে ঈদ হলো বাহ্যিক আনন্দ। প্রকৃত ঈদুল ফিতরের আনন্দের ছিটেফেঁাটাও তাদের ভাগ্যে জুটবে না। কারণ তাদের ঈদের সাথে সিয়াম সাধনার লেশমাত্র সম্পর্ক নেই। রোজা, সাহরি, তারাবীহ, ইফতার, জাকাত, ফিতরা যাদের মধ্যে এই এক মাস ছিল না, তাদের ঈদ পালন বাহুল্যমাত্র।

           আমাদের চিন্তার জগতে এই ভাবনাটা আসতে হবে, রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা তাকওয়া অর্জন করতে কতটুকু পেরেছি। দেখা যায় যে, রমজান মাসে নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জাকাত, ফিতরা, দান-খয়রাত তথা নফল ইবাদতের মাধ্যমে দিন অতিবাহিত করতে সচেষ্ট থাকি। কিন্তু রমজান শেষে পুনরায় অনিয়মের মধ্যে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ি। মিথ্যা, পরনিন্দা, পরচর্চা, জুলুম, প্রতারণার গড্ডালিকা প্রবাহে জড়িয়ে পড়ি। এমন রোজা পালনে এবং ঈদ উদযাপনে কোনো সার্থকতা নেই।

           প্রকৃত ঈদ হচ্ছে তাদের জন্যে যারা তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা করে। ইবাদত বন্দেগী করতে ভুলে না যায়, সব সময় আল্লাহ জাল্লাশানুহুকে ভয় করে ও ক্ষমা প্রার্থনায় রত থাকে, সেই হচ্ছে সফলকাম ব্যক্তি।

           ঈদের রাত বছরের পঁাচটি মর্যাদাপূর্ণ রাতের মধ্যে অন্যতম। এ রাতে ইবাদত বন্দেগী করে আল্লাহর নিকট আগামী জীবন পার করার জন্যে দো’আ করাই উত্তম কাজ। অথচ আমরা ঈদের রাত এবং পরদিন সকল প্রকার অনৈতিক অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ি, কী দুর্ভাগ্য আমাদের! একবার এক ঈদের দিন আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে ঈদের নামাজান্তে না দেখে জনৈক সাহাবী ঘরে গিয়ে দেখেন, হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ঘরের মধ্যে কান্নাকাটি করছেন। অবস্থা দেখে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, আমীরুল মুমিনীন! এ দিনে সবাই খুশি উদযাপন করছে, আর আপনি ক্রন্দন করছেন কেন? এ কথা শুনে হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমার রোজা-তারাবীহ, ইবাদত-বন্দেগী আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে কবুল হয়েছে কিনা জানি না, এজন্য আমি ক্রন্দন করছি।’ দুনিয়াতেই বেহেশত প্রাপ্তির সুখবর পাওয়া সত্ত্বেও একজন আমীরুল মুমিনীনের যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে আমাদের কী রকম হওয়া দরকার একবার ভেবে দেখুন। ঈদের দিন আমাদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ববোধের আবহ সৃষ্টি হয় তা যদি ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকে তাহলে সমাজে শান্তি ফিরে আসবে ইনশাল্লাহ্। রামাদ্বানের সিয়াম সাধনার শিক্ষাকে যদি আমরা আগামীদিনের পাথেয় করি, তাহলেই ঈদ উদযাপন আমাদের সার্থক হবে। আল্লাহ্ আমাদের হিদায়াত করুন। আ-মী-ন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়