রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৩

যাকাতের শাড়ি গরিবের জন্য, নাকি কাঁথার উপকরণ?

বিশেষ প্রতিবেদন, আব্দুল মান্নান সিদ্দিকী
যাকাতের শাড়ি গরিবের জন্য, নাকি কাঁথার উপকরণ?
ছবি : প্রতীকী

পবিত্র রমজান মাসের শেষ প্রান্তে এসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরেও চলছে যাকাতের কাপড় বিতরণ। ঈদের আগে দরিদ্রদের হাতে নতুন কাপড় তুলে দেওয়ার এই প্রথা বহু বছর ধরে চলে আসছে। কিন্তু হতদরিদ্র মানুষের অনেকেই বলছেন, যাকাতের নামে বিতরণ করা শাড়িগুলো তাদের উপকারের চেয়ে অপমানের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নিম্নমানের শাড়ি কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ব্যবহার করেন, আবার অনেকে সেগুলো বিক্রি করে দেন। আর এই বিক্রি হওয়া শাড়িগুলো চলে যায় ধনী পরিবারের মহিলাদের হাতে, যারা সেগুলো দিয়ে কাঁথা তৈরি করেন।

ফলে প্রশ্ন উঠেছে, যাকাতের শাড়ি কি সত্যিই দরিদ্রদের জন্য, নাকি এটি কাঁথার উপকরণ জোগাড়ের মাধ্যম হয়ে উঠেছে?

"এই শাড়ি পরলে মানুষ হাসবে!"

শ্রীনগরের বিভিন্ন এলাকায় যাকাতের শাড়ি পাওয়া নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এই শাড়িগুলো নিয়ে সন্তুষ্ট নন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে আসা এবং শ্রীনগরে দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করা জরিনা বেগম বলেন, "এই শাড়ি এত পাতলা আর নিম্নমানের যে কয়েকবার ধুলেই ছিঁড়ে যায়। এগুলো পরে বাইরে বের হলে মানুষ হাসে।"

তার মতে, যাকাতের উদ্দেশ্য হলো দরিদ্রদের সাহায্য করা, কিন্তু যদি সেই সাহায্য তাদের জন্য কোনো উপকারই না আনে, তাহলে সেটা কেমন যাকাত? "আমাদের যদি নগদ টাকা দেওয়া হতো, তাহলে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী ভালো একটা শাড়ি কিনতে পারতাম বা সংসারের খরচ চালাতে পারতাম। কিন্তু ধনী লোকেরা কমদামের শাড়ি দিয়ে দায় সেরে নিচ্ছে।"

"গরিবদের জন্য দেওয়া শাড়ি, শেষ পর্যন্ত ধনীদের কাঁথায়!"

হতদরিদ্ররা এই শাড়ি অনেক সময় রেখে দেন না, বরং সেগুলো বিক্রি করে দেন—এমন তথ্য উঠে এসেছে মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধানে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গ্রামের অনেক ধনী পরিবারের গৃহবধূরা এই শাড়িগুলো সস্তায় কিনে নেন এবং পরে সেগুলো দিয়ে কাঁথা তৈরি করেন।

স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, "প্রতি বছর ঈদের আগে এমন অনেক যাকাতের শাড়ি আসে, যা গরিবরা পরতে চায় না। তারা এগুলো এনে আমাদের কাছে বিক্রি করে দেয়, কারণ এগুলো টেকসই নয়। আর গ্রামের কিছু ধনী পরিবার এই সস্তা কাপড় দিয়ে কাঁথা বানানোর জন্য নিয়ে যায়।"

যাকাত বিতরণ পদ্ধতিতে পরিবর্তন প্রয়োজন

বিশ্লেষকদের মতে, যাকাতের আসল উদ্দেশ্য যদি গরিবদের উপকার করা হয়, তাহলে কমদামের কাপড় বিতরণের পরিবর্তে নগদ টাকা বা প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী দেওয়া উচিত।

সমাজকর্মী আব্দুল হাকিম বলেন, "যাকাতের নামে যদি এমন শাড়ি দেওয়া হয়, যা দরিদ্ররা পরতে চায় না এবং তা শেষ পর্যন্ত ধনীদের কাঁথার উপকরণ হয়ে যায়, তাহলে এই সহায়তার অর্থ কী? দরিদ্রদের আত্মমর্যাদা রক্ষার জন্য তাদের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেওয়া দরকার, যাতে তারা নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করতে পারে।"

বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান

শুধু নামমাত্র শাড়ি বিতরণ করলেই কি যাকাতের উদ্দেশ্য সফল হয়? হতদরিদ্ররা মনে করেন, যাকাত দেওয়ার আগে বিত্তবানদের তাদের প্রকৃত প্রয়োজন বোঝা উচিত। যাকাত যদি শুধুমাত্র দায়সারাভাবে দেওয়া হয়, তাহলে তা দরিদ্রদের কল্যাণের পরিবর্তে অপমানের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এই বিষয়টি নিয়ে বিত্তবানদের নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। তারা যদি দরিদ্রদের প্রকৃত চাহিদা বিবেচনা করেন এবং তদনুযায়ী যাকাত বিতরণ করেন, তাহলে তা সত্যিকার অর্থেই দরিদ্রদের উপকারে আসবে এবং যাকাতের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে। অন্যথায়, দরিদ্রদের জন্য দেওয়া শাড়িগুলো কাঁথার কাপড় হিসেবেই থেকে যাবে।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়