প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০৯
৭ জন ডাক্তারে ৪০০ রোগীর চিকিৎসাসেবা!
![৭ জন ডাক্তারে ৪০০ রোগীর চিকিৎসাসেবা!](/assets/news_photos/2025/02/12/image-58863-1739333430bdjournal.jpg)
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সঙ্কটের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসকসহ সহায়ক কর্মীর সংখ্যা কম। নেই গাইনি চিকিৎসক, নেই সার্জারি ডাক্তার ও কনসালটেন্ট। এতো সঙ্কটের মাঝেও প্রতিদিন এই হাসপাতালে গড়ে ৪০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে। ফলে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ৩১ শয্যাবিশিষ্ট মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে বিগত সরকারের সময় ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। সে অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামও দেয়া আছে। কিন্তু জনবল নিয়োগ নেই দীর্ঘদিন ধরে। ফলে অব্যবহৃত চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, ৩১ শয্যাবিশিষ্ট এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক-সার্জন মিলিয়ে জনবল থাকার কথা ২৫৪ জন। বর্তমানে গাইনি, সার্জারি ও কনসালটেন্ট চিকিৎসকসহ ৭৮টি পদ শূন্য রয়েছে। চিকিৎসক-সার্জন মিলিয়ে ২৪জন থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১১জন। এই ১১জনের মধ্যেও বিভিন্ন কারণে অনুপস্থিত থাকেন ৪জন। কার্যত এ হাসপাতালে ডাক্তার আছেন মাত্র ৭জন। এর বাইরে ৩৫জন নার্স ও মিডওয়াইফারির বিপরীতে আছেন ৩১জন। নেই প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক, স্টোরকিপার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও পরিসংখ্যানবিদ, স্যাকমো, টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য পদের প্রায় ৩৩ জন। এদিকে ৭৫জন স্বাস্থ্য সহকারী থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৪৫ জন। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারজন জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ আছে। কাগজে কলমে পূরণ আছে তিনজন। কিন্তু বাস্তবে আছে একজন। জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. তাসলিমা আফরোজের কর্মস্থল এ হাসপাতালে হলেও তিনি প্রেষণে আছেন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেসিয়া) ডা. ইফতেখার শামীমের কর্মস্থল এ হাসপাতালে হলেও তিনি ১ আগস্ট ২০২২ সাল থেকে অনুপস্থিত। মেডিকেল অফিসার (সাব সেন্টার) ডা. কামরুজ্জান প্রেষণে আছেন নারায়ণগঞ্জে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশন শুরু হয়। জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. তাসলিমা আফরোজ প্রেষণে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চলে গেলে সিজারিয়ান অপারেশন ২৫ এপ্রিল ২০২৪ থেকে বন্ধ হয়ে যায়।সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকায় হাসপাতালে আসা প্রায় সকল গর্ভবতী নারীকে প্রাইভেট হাসপাতালে নিতে হয়। গাইনি চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী মায়েরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে আর্থিকভাবে বিপদে পড়েন নিম্ন মধ্যবিত্তরা। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা বলেন, রোগীর চাপ অনেক বেশি। ডাক্তার কম। ফলে ডাক্তাররা চাইলেও রোগীর জন্যে বেশি সময় দিতে পারেন না। এছাড়া ডাক্তাররা যে ওষুধ লেখেন, তা হাসপাতালে সবসময় পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ ঔষধ বাইরে থেকে কিনতে হয়।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা হানিরপাড়ের এক রোগী বলেন, হাসপাতালটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় উন্নত হয়েছে। তবে টয়লেট এবং বাথরুমের পরিবেশ আরো ভালো হওয়া দরকার। গাইনি, সার্জারি ও কনসালটেন্ট চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদ শূন্য থাকায় রোগীরা পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা। অনেক রোগী বাধ্য হয়ে ফিরে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান তথা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. একেএম আবু সাইদ বলেন, গাইনি চিকিৎসক না থাকায় জরুরি সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। চিকিৎসক ও অন্যান্য একাধিক পদ শূন্য থাকায় রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। জনবল সঙ্কটের বিষয়ে আমরা একাধিকবার কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখেছি। নানা সমস্যার মধ্যেও হাসপাতালটিকে রোগীদের জন্যে সেবাবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যায় উন্নীত হবার বাস্তব কার্যক্রম চালু হলে এলাকার মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী স্বাস্থ্য সেবা পাবে।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭জন ডাক্তার দিয়ে প্রতিদিন ৪০০ রোগীর চিকিৎসাসেবা প্রদানের বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক, বলা যায় আপত্তিকরও। এতে রোগীরা যথার্থ চিকিৎসাসেবা থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি চিকিৎসকদেরকে রোগীদের চাপে চিড়েচ্যাপটা বানানো হচ্ছে। ভাগ্যিস, ডাক্তারদের কেউ মানসিক রোগীতে পরিণত হন নি কিংবা পালিয়ে যান নি। তবে একজন চিকিৎসক দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন কোনো কারণ জানানো ছাড়াই। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা একটি হাসপাতালে জনবল সঙ্কটের এমন করুণ চিত্র নিয়ে আদৌ ভাববার কোনো অবকাশ পান কিনা জানি না। আমরা মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল সঙ্কট নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হিসেবে সিভিল সার্জন মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং তাঁর পক্ষে সর্বোচ্চ যতোটুকু সম্ভব সেটা করার জন্যে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।