সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৯

চাঁদপুর লেখক পরিষদের দু দশকপূর্তিতে শুভ কামনা

অনলাইন ডেস্ক
চাঁদপুর লেখক পরিষদের দু দশকপূর্তিতে শুভ কামনা

‘সাহিত্য রচনায় সভ্যতার পথ বুনি’ এই শ্লোগানকে ধারণ করে চাঁদপুর লেখক পরিষদের দু দশক পূর্তি উপলক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছা, সাহিত্যপাঠ, আলোচনা সভা ও কেককাটা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি ২০২৫) সন্ধ্যায় চাঁদপুর শহরের জোড় পুকুর পাড়স্থ সাহিত্য একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রহিম বাদশা। সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপ্রধানে ও সাধারণ সম্পাদক খোকন চন্দ্র মজুমদারের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন অনেকে। অনুষ্ঠানের শুরুতে অনুষ্ঠানে আগত সকল অতিথি ও লেখকদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। আলোচনা শেষে লেখক পরিষদের দুই দশক পূর্তির কেক কাটেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিসহ অন্য অতিথিবৃন্দ।

চাঁদপুর লেখক পরিষদ হচ্ছে টেকসই অস্তিত্বে চাঁদপুর জেলা শহরের একটি সক্রিয় সাহিত্য সংগঠন। জমজমাট, বর্ণিল, ব্যাপক আয়োজনে এ সংগঠনটি দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েছে--এমনটি ঢালাওভাবে বলা যাবে না। তবে ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যে এই সংগঠনের উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সকলে দৃঢ় মনোবলে কেবল এগিয়ে যাওয়াটাকেই মুখ্য মনে করেছে। যদি বলা হয়, চাঁদপুরে সাহিত্যের মরা গাঙে জোয়ার আনতে এই সংগঠনটি কখনো কখনো বলিষ্ঠ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, তাহলে সেটা মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না। স্থানীয় লেখকদের মধ্যে যারা নানাভাবে অবহেলিত ছিলেন, নানা কারণে পিছিয়ে পড়েছিলেন, চাঁদপুর লেখক পরিষদ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, সাহস-উদ্দীপনা-প্রেরণা সঞ্চার করেছে। ব্যয়বহুল সাহিত্য প্রকাশনার চেয়ে সাদামাটাভাবে প্রকাশনা বের করে স্থানীয় লেখকদের চাঙ্গা রাখতে চেষ্টা করেছে বারবার। স্থায়ী-অস্থায়ী কার্যালয় ছাড়াও যে একটি সংগঠন দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে চাঁদপুর লেখক পরিষদ তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। কিছু না করার চেয়ে সীমিত সামর্থ্যে ন্যূনতম কিছু করে সংগঠনের সদস্য ও স্থানীয় লেখকদের উজ্জীবিত রাখার প্রয়াস চাঁদপুর লেখক পরিষদের বলিষ্ঠ উদ্যোক্তা ও প্রাণশক্তি জাহাঙ্গীর হোসেনসহ তাঁর সমমনাদের মাঝে লক্ষ্য করা গেছে।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা দরকার যে, সাহিত্য একাডেমি, চাঁদপুর ১৯৮৬ সালে গঠন করা হয়েছে সাহিত্য একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদলে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাহিত্য একাডেমি প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে চাকুরিতে বদলিজনিত কারণে চাঁদপুর আসেন অধ্যাপক কবি খুরশেদুল ইসলাম। তিনি ছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রধান এবং পরবর্তীতে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ। সময়টা আশির দশকের প্রথম ভাগ। চাঁদপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমির মতো সক্রিয় কোনো সাহিত্য সংগঠন ছিলো না। তিনি তাঁর ছাত্র কবি আব্দুল্লাহিল কাফীকে দিয়ে চাঁদপুরে কোনো সাহিত্য সংগঠন আছে কিনা সেটা জানার চেষ্টা করছিলেন। অবশেষে তিনি খুঁজে পেলেন নির্ঝর সাহিত্য চক্রকে, যেটির অফিস ছিলো বর্তমান হাকিম প্লাজার স্থলে। এই সাহিত্য সংগঠনটি মূলত সাহিত্য মাসিক নির্ঝরের লেখকদেরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিলো। আব্দুল্লাহিল কাফী ছিলেন এই নির্ঝর এবং তার পূর্বে একই সম্পাদকের সম্পাদিত মাসিক নির্ভীকের নিয়মিত লেখক। তিনি তাঁর শ্রদ্ধেয় শিক্ষক খুরশেদুল ইসলামকে নির্ঝর সাহিত্য চক্রের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সংশ্লিষ্ট করেন। পরে খুরশেদুল ইসলামের উপদেশনায় ও পরিকল্পনায় এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক কবি জাকির হোসেন মজুমদারের সর্বাত্মক সহযোগিতায় এই সংগঠনটি জেলার সবচে' সক্রিয় সাহিত্য সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। যার ফলস্বরূপ এই সংগঠনের অধিকাংশ সদস্যদের নিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম শামসুল আলম তাঁর স্ত্রী কবি সাবিনা আলমের প্রণোদনায় ১৯৮৬ সালে সাহিত্য একাডেমি, চাঁদপুর প্রতিষ্ঠা করেন। রাতারাতি চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র জোড় পুকুর পাড়ে সরকারি জমিতে সরকারি অর্থায়নে সাহিত্য একাডেমির ভবন নির্মাণ করে ফেলেন। ক'বছরের মাথায় প্রথমে প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক কবি খুরশেদুল ইসলাম চৌমুহনী সরকারি এসএ কলেজে এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম শামসুল আলম অন্যত্র বদলি হয়ে গেলে সাহিত্য একাডেমি, চাঁদপুর ক্রমশ সক্রিয় অবস্থান থেকে নিষ্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হয়। একাডেমি ভবনে কেয়ারটেকারের সপরিবারে বসবাস ও ছাগল পালন এবং সামনে গরুর ঘাস খাওয়াসহ নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টি চাঁদপুর কণ্ঠসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে সংবাদ হিসেবে প্রকাশিত হয়। নূতন শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে সাহিত্য একাডেমির এমন দুরবস্থার সংবাদ দেখে ও বাস্তবতা জেনে তৎকালীন নবীন সংগঠন চাঁদপুর লেখক পরিষদ সংক্ষুব্ধ হয় এবং মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেনের নজর কাড়ে। তিনি সাহিত্য একাডেমিকে সচল করার সকল উদ্যোগ নেন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে নিয়মিত মাসিক সাহিত্য সভা ও সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার প্রবর্তনসহ কিছু কর্মসূচি হাতে নেন। যার সুদূরপ্রসারী ফলস্বরূপ সাহিত্য একাডেমি এখন চাঁদপুর লেখক পরিষদ সহ অন্যান্য সাহিত্য সংগঠনের কাছে জেলার প্রধান সাহিত্য প্রতিষ্ঠান ও অনুপ্রেরণার জায়গা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। চাঁদপুর লেখক পরিষদ তার দুদশকের অস্তিত্বে অনেক কিছুই করেছে, তবে সাহিত্য একাডেমি, চাঁদপুরকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে যে কাজটি করেছে, সেটি ছিলো অনেক বড়ো। দুদশকপূর্তির শুভলগ্নে লেখক পরিষদের জন্যে এতোটুকু লিখিত মূল্যায়ন করা আমাদের ঔচিত্যবোধের আওতায় পড়েছে বলে আমরা অনুধাবন করেছি। চাঁদপুর লেখক পরিষদের জন্যে আমাদের নিরন্তর শুভ কামনা থাকলো। তাদের প্রতি দাবি, অনাগত দিনে চাঁদপুরের সাহিত্য আন্দোলনের যে কোনো সঙ্কটময় মুহূর্তে (আল্লাহ না করুন) তারা যেনো অতীতের ন্যায় সময়োচিত/যথার্থ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়