প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৫
নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার : কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ
‘গল্লাকে ডাকাতিয়া নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার ॥ নদী দখল ও বর্জ্যের হুমকিতে কৃষি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ শিরোনামের সংবাদটি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ছাপা হয়েছে বেশ গুরুত্বের সাথে। সংবাদের সাথে জুড়ে দেয়া ছবি যেনো কথা বলছে অনুচ্চারিত শব্দাবলির ব্যঞ্জনায়। সংবাদটি লিখেছেন চাঁদপুর কণ্ঠের ব্যুরো ইনচার্জ, ফরিদগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক প্রবীর চক্রবর্তী। তিনি লিখেছেন, এককালের প্রমত্তা ডাকাতিয়া নদী এখন অনেকটা খালে পরিণত হয়েছে। সেটাও রক্ষা হচ্ছে না। নদী দখল এবং বর্জ্য ফেলে নদীর অস্তিত্ব বিলীন করে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারের মহোৎসবও চলছে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নদী দখল করে গড়ে তুলেছে অট্টালিকা। আবার বাজারের সকল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। ফলে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের জনজীবন বিপর্যস্ত ও কৃষি আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে।
ফরিদগঞ্জের গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের গল্লাক বাজারের চিত্র এটি। যদিও পুরো ডাকাতিয়া জুড়েই এই দৃশ্য রয়েছে। খননের অভাবে ডাকাতিয়া অনেক স্থানেই খালে পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি ২০২৫) সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, গল্লাক বাজারের পূর্ব পাশের ব্রীজের এক পাশে পানি রয়েছে, অপর পাশে একটি চক্র বেআইনীভাবে নদীতে বাঁধ দিয়ে মোটর ও শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি সেচে মাছ শিকার করছে। এতে নদীপাড়ে বসবাসকারী কয়েকশ' পরিবার পানি ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে রোপা আমন, শাকসব্জিসহ নানা কৃষি আবাদ হুমকিতে পড়েছে। আবার নদীপাড়ের বাজারের অংশে অধিকাংশ স্থাপনাই নদী দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর পানি শুকিয়ে ফেলায় বাজারের সকল বর্জ্য ফেলার দৃশ্য ও দখলের দৃশ্য ভেসে উঠেছে।
নদীপাড়ের বাসিন্দা তাজিয়া বেগম, আবুল কালাম, গোলাম কিবরিয়াসহ আরো কয়েকজন জানান, নদীতে পানি নেই। শুষ্ক মৌসুমে এমনতিইে পানি কম থাকে। তার ওপর এখন বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। আমরা গোসল করতে পারি না, থালা বাসন ধুতে পারি না। তাছাড়া বাজারের সমস্ত ময়লা আবর্জনা এই নদীতে ফেলায় আমাদের এলার্জিসহ নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছে। নদী খননসহ দ্রুত পানির ব্যবস্থা করা হোক। সুকুমার সেবা নামে এক কৃষক বলেন, নদী ময়লা আবর্জনায় ভরপুর হয়ে গেছে, নদী খনন জরুরি হয়ে পড়েছে। আমাদের কৃষি আবাদের স্বার্থে দ্রুত পানির ব্যবস্থা করা হোক। কৃষক নেতা আ. ওয়াদুদ বলেন, কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে নদীটি খনন এবং নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, বিগত সরকারের সময়ও এভাবে নদীতে বাঁধ দিতে দেখিনি। সর্বশেষ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরেও দেখা গেছে নদীর একটি অংশে মাছ ধরা চলছে। স্থানীয় স্কীম ম্যানেজার মোহসীন বলেন, নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার হচ্ছে তা সত্য। বাঁধ দেয়ার আগে আমি টের পেয়ে আমার কৃষকদের স্বার্থে কিছু পানি জমিতে উঠিয়ে রেখেছি। খাল খনন জরুরি। এছাড়া দ্রুত পানির ব্যবস্থা না করা হলে আমাদের পূর্ব এলাকার কৃষকদের রোপা আমনে প্রভাব পড়বে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান পাটওয়ারী বলেন, নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার মহোৎসবে রূপ নিয়েছে। উপজেলা বিএনপি নেতা ডা. আবুল কালাম আজাদের নির্দেশে একটি চক্র নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করছে। এতে নদীর পাড়ের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত ও কয়েকশ' একরের কৃষি আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। যদিও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নদীতে আগে আওয়ামী লীগের লোকজন মাছ ধরতো। এখন বিএনপির কাঁধে ভর করে পতিত আওয়ামী লীগের দোসররা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। মানুষের ক্ষতি হয় এমন কর্মকাণ্ডের সাথে কখনো জড়িত ছিলাম না, ভবিষ্যতেও থাকার প্রশ্নই উঠে না।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া বলেন, নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন অপরাধ। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি ২০২৫) বিষয়টি আমার নজরে আসলে আমি তাৎক্ষণিক তহশীলদারকে পাঠিয়ে বাঁধ কেটে দিতে বলেছি।
একটি সংবাদের ন্যূনতম মানরক্ষায় বস্তুনিষ্ঠতা তুলে ধরার জন্যে যা যা করণীয় প্রবীর চক্রবর্তী তাঁর গল্লাকে বাঁধ দিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে মাছ শিকার বিষয়ক সংবাদটিতে সেটি সম্পন্ন করেছেন। এ সংবাদটিতে এককালের খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদীর করুণ হাল, বিশেষ করে অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে প্রকটভাবে। নদী যখন নদীর মতোই থাকে, তখন তাতে প্রকৌশলগত যান্ত্রিক সহযোগিতা ছাড়া মানুষের পক্ষে বাঁধ দেয়া সম্ভব নয়। আর যখন খালের মতো হয়ে যায়, তখন নদীর উপকারভোগী মানুষই নদীর প্রতি কেমন কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ করে সেটা গল্লাকের প্রেক্ষাপট থেকেই অনুধাবন করা যায়। যেখানে যেখানে ডাকাতিয়া খালরূপে আছে, সেখানে সেখানে খনন করে, দখল ও বর্জ্যমুক্ত করে নদীর ন্যূনতম রূপ দেয়ার জন্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের প্রতি যেমন অনুরোধ জানাচ্ছি, তেমনি স্থানীয় উপকারভোগী মানুষদেরকে নদীবান্ধব হতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে করণীয় নির্ধারণ করতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।