শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৭

মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ১

মুন্সিগঞ্জ ও চাঁদপুর সীমান্তে উত্তেজনা চরমে

মো. জাকির হোসেন
মুন্সিগঞ্জ ও চাঁদপুর সীমান্তে উত্তেজনা চরমে
গুলিবিদ্ধ আহতদের মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

মুন্সিগঞ্জ, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫: মুন্সিগঞ্জ সংলগ্ন চাঁদপুরের মোহনপুর এলাকায় মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনায় দুজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন চাঁদপুরের মতলব থানার দশানি গ্রামের রিফাত (২৯) ও ভাষানচর গ্রামের রাসেল (৩০)। গুলিবিদ্ধ আহত আইয়ুব আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। গুলিবিদ্ধ আহতদের মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে দায়িত্বরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

মুন্সিগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) বিল্লাল হোসেন বলেন, "ঘটনাটি চাঁদপুরে ঘটেছে। আমরা সংবাদ পেয়ে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এসে দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরেছি। আরেকজন গুলিবিদ্ধকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।"

বালু উত্তোলন নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ: মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ চলছে। চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন জানান, গত চার মাসে মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু তোলার সময় ২০টি ড্রেজার, ৩০টি বাল্কহেড, ২টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ২টি স্পিডবোট জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া, এসব ড্রেজার ও বাল্কহেডে থাকা ১৪০ জন নাবিক-শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তবে, প্রশাসনের এই তৎপরতা সত্ত্বেও মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের পাহারা থাকার পরও নদীর প্রাকৃতিক সম্পদ বালু লোপাট হচ্ছে। বালু খেকোরা রাতের আঁধারে এমনকি দিনের বেলায় ড্রেজার ভাসিয়ে চাঁদপুর নৌ সীমানার মতলব উত্তর, চাঁদপুর সদর এলাকা দিয়ে গোপনে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিচ্ছে।

প্রশাসনের নজরদারি ও স্থানীয়দের উদ্বেগ: চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. বছির আলী খান বলেন, "সম্প্রতি ফেনীর সাগর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী পরিচয় দিয়ে অমর আচার্জী নামে এক ব্যক্তি ২০০৭ সালের একটি বালু তোলার চিঠি নিয়ে আমাদের দপ্তরে হাজির হন। সেই চিঠিতে তাঁরা উল্লেখ করেন, তাঁরা তখন মতলব উত্তর উপজেলার এখলাসপুর মৌজায় মেঘনা নদী থেকে ২০ লাখ ঘনফুট বালু তোলার অনুমোদন পেয়েও সেই বালু ওঠাতে পারেননি। কারণ, তখন সরকার পরিবর্তন হয়ে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায় দেশ। এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ জন্য নতুন করে ওই চিঠির আলোকে বালু তুলতে চাইছেন তাঁরা; কিন্তু আমরা তাঁদের বালু তোলার কোনো অনুমোদন এখনো দিইনি।"

স্থানীয়রা মনে করছেন, প্রশাসনের নজরদারি আরও জোরদার করা প্রয়োজন। তারা অভিযোগ করেন, প্রতিদিনই নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন চলছে। বাল্কহেড ড্রেজার জব্দ ও বালুর জাহাজের স্টাফ ধরা হলেও যারা নদীতে ড্রেজার ভাসিয়ে চুরি করে বালু উত্তোলন করাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে আসল গডফাদারদের প্রশাসন কেন ধরছে না, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন এবং নদী সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

নদী ও পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান: নদী ও পরিবেশ রক্ষায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশবিদ ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা মনে করেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া উচিত এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা নিয়ে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা প্রয়োজন।

এদিকে, মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ও আহতের ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তদন্ত শুরু করেছে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়