বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২৬

বিষয়টি অনেক উদ্বেগজনক

অনলাইন ডেস্ক
বিষয়টি অনেক উদ্বেগজনক

'মতলব উত্তরে মরে ভেসে উঠছে নদীর মাছ' শিরোনামটিই শিহরণ সৃষ্টিকারী। এমন শিরোনামের সংবাদই গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় গুরুত্বের সাথে ছাপা হয়েছে। সংবাদটিতে মিজানুর রহমান লিখেছেন, মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা নদীর চাঁদপুর সীমানার মতলব উত্তরের ষাটনলের কাছাকাছি পার্শ্ববর্তী জেলা মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া ও নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাট। এখানে বহু শিল্প কলকারখানা অবস্থিত। ঢাকার বুড়িগঙ্গা, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্ম্যা ও মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীর পানি বহু বছর আগে থেকেই দূষিত। কলকারখানার দূষিত কেমিক্যালযুক্ত পানি তথা তরল বর্জ্য মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে আসায় এখন ক্রমান্বয়ে চাঁদপুরের মেঘনা নদীর পানিও দূষণের মধ্য পড়েছে। এর প্রভাবে এখন মতলব উত্তর উপজেলার নদ-নদীর দেশীয় জাতের মাছ মরে ভেসে উঠছে। এতে নদীর তীর এলাকায় দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। শনিবার (২৫ জানুয়ারি ২০২৫) সকালে মতলব উপজেলার মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দশানী, ষাটনল, জেলেপাড়া ও বাবু বাজার এলাকায় নদীতে মরা মাছ ভাসতে দেখেছে স্থানীয়রা। তারা জানান, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্ম্যা নদীর তীরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কলকারখানার দূষিত কেমিক্যালযুক্ত পানি মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে আসছে। সেখানে নদীর পরিবেশ দূষিত হয়ে দেশিয় ছোট-বড়ো মাছ মরে ভেসে উঠছে। পচা মাছের দুর্গন্ধে নদী পাড়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। উপজেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলার নদীর দূষিত পানি চাঁদপুর মেঘনা নদীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দূষিত এই পানি এখানে প্রবেশ করেছে। শহরের বিভিন্ন কারখানার দূষিত বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে এক সপ্তাহ ধরে নদীর পানির রং বদলে যাচ্ছে। দূষিত পানির কারণে পানির পিএইচ ও অ্যামোনিয়া মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রায় শূন্য হয়ে যাওয়ায় নদীতে থাকা বিভিন্ন জাতের বড়ো মাছ, মাছের পোনা ও জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। মাছগুলো মরে ভেসে গেছে এবং নদীর পাড়ে জমাট হয়ে পচে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

মতলব উত্তর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস জানান, মাছ মারা যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হবে। বর্জ্যের কারণে নদীর পানিতে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় মাছ মরে ভেসে উঠে। পানিতে মিশে থাকা দূষিত পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যে পাঠানো হবে।

এ বছর প্রথম নয়, গতবছরও মেঘনা নদীর পানি দূষণের কারণে মতলব উত্তরে মাছ মরে যাবার ঘটনা ঘটেছে। তখন রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় ছিলো। কিন্তু এ সংক্রান্ত সংবাদে তারা কানের মাছিও নাড়ায় নি তথা ন্যূনতম পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি। নদীর তীরে নগর সভ্যতা, শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে--এটা স্বাভাবিক এবং নদীর বহুবিধ আনুকূল্য পাওয়াটা প্রত্যাশিত। কিন্তু সেজন্যে নদীকে নির্বিচারে নীরবে গ্রহণ করতে হবে সকল বর্জ্য? নদী কথা বলতে পারে না, সেজন্যে নদী প্রতিবাদ করতে পারে না। নদীর পক্ষে যারা কথা বলার তারাও বলছে না। পরিবেশবিদরা ছোটখাট বিষয়কে যেভাবে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরেন, সেভাবে কিংবা তারচে' বেশি নদীকে নিয়ে কাজ করা উচিত।

পৃথিবীর যে সকল নদীর মিঠা পানি মানের দিক দিয়ে সেরা, তার মধ্যে মেঘনা রয়েছে। দেশের প্রশস্ততম ও গভীরতম সে নদীতেই প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে অতুলনীয় স্বাদের জাতীয় মাছ ইলিশসহ আরো অনেক সুস্বাদু মাছ। সেই নদীকেই যদি নগর সভ্যতা ও শিল্প বর্জ্যের দূষণ ক্রমশ গ্রাস করতে থাকে, আর তাতে প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, তাহলে সেটি কতো বড়ো উদ্বেগের বিষয় হতে পারে সেটি বুঝিয়ে বলার জন্যে কষ্ট করতে হয় না। নদীকে বর্জ্য থেকে রক্ষা করতে পরিবেশবিদদের সোচ্চার হতে হবে, ব্যাপক জনসমর্থন আদায় করে প্রেসার গ্রুপের সর্বোচ্চ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে, যাতে সরকার প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাগ্রহণে বাধ্য হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়