বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৬

পড়তে গিয়ে পুড়তে হলো শিশু সামিয়াকে, দায়ী কে?

অনলাইন ডেস্ক
পড়তে গিয়ে পুড়তে হলো শিশু সামিয়াকে, দায়ী কে?

কচুয়ায় ৫দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা গেলো আগুনে দগ্ধ হওয়া স্কুল শিক্ষার্থী সামিয়া (৬)। রোববার (২৬ জানুয়ারি ২০২৫) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নিহত শিক্ষার্থী সামিয়া কচুয়া উপজেলার তেতৈয়া গ্রামের মিজানুর রহমানের মেয়ে। সে ছিলো ৪১নং তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদালয়ের শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থী। গত ২১ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে স্কুল ছুটি হওয়ার পর বড়ো বোনের জন্যে অপেক্ষা করতে গিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে খেলার ছলে ময়লার স্তূপে লাগানো আগুনে পড়ে গিয়ে তার শরীর ঝলসে যায়। তার চিৎকারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা ছুটে এসে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় । পরে কর্মরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রেফার করেন।

সামিয়ার বাবা মিজানুর রহমান জানান, আগুনে দগ্ধ আমার মেয়ে সামিয়া ৫দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আল্লাহর ডাকে রোববার সকাল ১০টায় বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরপারে চলে গেছে। এই কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুক হাসান জানান, শিক্ষার্থী সামিয়া শিশু শ্রেণীর ছাত্রী। দুপুর ১২ টায় বিদ্যালয় ছুটির পর সে বড়ো বোনের জন্যে অপেক্ষা করতে গিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে মাঠে খেলা করে। বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে আমি ক্লাসে থাকাকালীন দেখতে পাই, মেয়েটি শরীরে আগুন নিয়ে চিৎকার দিতে দিতে বিদ্যালয়ের বারান্দার দিকে ছুটে আসছে। আমি ও নতুন বই নিতে আসা বরুচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সোহেল রানা সহ তাৎক্ষণিক ছুটে গিয়ে মেয়েটির জামা ছিঁড়ে ফেলি। এ সময় আমাদের উভয়ের দুহাত ঝলসে যায়। ততক্ষণে মেয়েটির শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা রেফার করেন। তার চিকিৎসার জন্যে আমরা শিক্ষকরা নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা প্রদান করেছি এবং সার্বক্ষণিক তার খোঁজ খবর রেখেছি। তার অকাল মৃত্যুতে আমরা শিক্ষক পরিবার মর্মাহত ও শোকাহত। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা জানান, শিশু শিক্ষার্থী সামিয়া অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর থেকে তার চিকিৎসার খোঁজ খবর সবসময় নিয়েছি। তার অকাল মৃত্যুতে আমি ও শিক্ষক পরিবার মর্মাহত ও শোকাহত। আমরা অফিসের কর্মকর্তা ও শিক্ষক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে নিহত শিক্ষার্থী সামিয়ার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জ্ঞাপন করেছি। এদিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে আগুনে ঝলসে যাওয়ার ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা গেছে। তাদের দাবি, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অসাবধানতার কারণে শিশু শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তারের মৃত্যু হয়েছে।

সকল মৃত্যুতে মানুষ বেশি শোকার্ত হয় না। তবে কিছু কিছু মৃত্যুতে সমব্যথী মানুষ শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে, আবার বিক্ষুব্ধও হয়। এমন একটি মৃত্যু কচুয়ার শিশু শিক্ষার্থী সামিয়ার মৃত্যু। ক্লাসশেষে ছুটির পর মধ্যাহ্নে শিশু শিক্ষার্থী সামিয়া সহপাঠীদের সাথে খেলতে গিয়ে ময়লার স্তূপের আগুনে গিয়ে পড়লো, আর ঝলসে গেলো এবং তারপর পাঁচদিন পর মারা গেলো--এটা নিতান্তই সরল বিবরণ। কিন্তু এতে আছে গরল। সেমতে প্রশ্ন, এই ময়লার স্তূপে আগুন লাগিয়েছে কে, স্কুল সংলগ্ন স্থানে স্কুল চলাকালীন আগুন লাগানোর এমন কী প্রয়োজনীয়তা ছিলো। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে অবশ্যই জেলা/উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগকে তদন্ত কমিটি করতে হবে এবং স্বল্প সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। তাদের অপারগতায় কচুয়া উপজেলা প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অসাবধানতাই সামিয়ার মৃত্যুর কারণ কিনা-অভিভাবকদের এমন দাবির নিষ্পত্তি তদন্তেই খুঁজতে হবে।

আগুনে ঝলসে শিশু সামিয়ার মৃত্যুর মর্মান্তিকতা পাষাণের হৃদয়কেও বিগলিত না করে পারে নি। ফুটফুটে শিশু সামিয়া বিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে পুড়তে হবে, এটা কি মানা যায়? যদি শিশু সামিয়ার পুড়ে যাবার জন্যে ময়লার স্তূপে আগুন লাগানো ব্যক্তি/ব্যক্তিদের আইন ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা না হয়, তাহলে সেটি অনেক বেশি বিবেক বিরুদ্ধ কাজ হবে বলে সচেতন ও সংবেদনশীল প্রতিটি মানুষ মনে করে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়