বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৮

ইলিশ সংকট বনাম ক্রেতা সংকট

কাজী শাহাদাত
ইলিশ সংকট বনাম ক্রেতা সংকট

গতকাল 'ক্রেতার অপেক্ষায় ইলিশ ব্যবসায়ীরা' শিরোনামে চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এমন সংবাদ চাঁদপুর কণ্ঠে এর আগে কখনো প্রকাশিত হয়েছে বলে সংরক্ষিত রেকর্ডে খুঁজে পেলাম না। মূল্য আকাশচুম্বী হোক আর যা-ই হোক, চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশ থাকলেই হলো, ক্রেতার কোনো অভাব নেই। কেননা চাঁদপুর সবসময় ভোগে ইলিশের খ্যাতির বিড়ম্বনায়। প্রসঙ্গক্রমে এ তথ্যটি জানাতে হয় যে, ক'দিন আগে চাঁদপুরে বিভিন্ন জেলার লোকজনের অংশগ্রহণে হলো একটি অনুষ্ঠান, যেখানে স্পন্সরের প্রতি দাবি ছিলো, ইলিশ খাওয়াতেই হবে। অগত্যা স্পন্সরকে ২৮০০ টাকা কেজিতে ইলিশ কিনে খাওয়াতে হলো অংশগ্রহণকারীদের। সত্যি কথা বলতে কি, এটাই 'ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর'-এ ইলিশ সংকট ও দুর্মূল্যের প্রকৃত চিত্র। এমন দুর্মূল্যের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত নানা অনুষ্ঠানে খাবারের তালিকায় ইলিশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের স্থান দখল করেছে ভারতের কোনো কোনো রাজ্যের প্রধান মাছ বলে স্বীকৃত রুই।

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের সংবাদটিতে ইলিশ সংকট বনাম ক্রেতা সংকট নিয়েই লিখা হয়েছে। সংবাদ-বিবরণী হচ্ছে, চাঁদপুর ইলিশ অবতরণ কেন্দ্রে (বড় স্টেশন মাছঘাট) সারা বছরই ইলিশের চাহিদা থাকে। জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের সময় ইলিশ বেচাকেনা বন্ধ থাকে। এছাড়া বছরের অন্য সময়ে বেচাকেনা থাকে। গত ২-৩ বছর ধরে চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় জেলেদের জালে ইলিশ কম ধরা পড়ছে। যার কারণে দামও বেড়েছে দ্বিগুণ। স্থানীয় নদ- নদীতে বড়ো ইলিশ কম ধরা পড়লেও নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই তিন মাসে ইলিশের ছোট পোনা যা টেম্পু ইলিশ নামে পরিচিত, সেগুলো ধরা পড়ে। জাটকা ইলিশ ব্যাপক নিধন হবার সুবাদে হাটবাজারে এই পোনা ইলিশে সয়লাব থাকছে। এই পোনা ইলিশের দামও বেশি। ৪০০- ৫০০ টাকার নিচে না। ইলিশের ছোট পোনা বড়ো হবার সুযোগ না দেয়ায় চাঁদপুরের নদ নদীতে বড়ো ইলিশ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে বলে অভিমত পর্যবেক্ষক মহলের।

চাঁদপুর মাছঘাটে কিছুটা ইলিশ সরবরাহ থাকলেও ক্রেতাদের সাড়া পাচ্ছে না মৎস্য ব্যবসায়ীরা। সোমবার (২০ জানুয়ারি ২০২৫) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেশের অন্যতম বৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চাঁদপুরের বড়স্টেশন মাছঘাটে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ইলিশ নিয়ে বসে অলস সময় পার করছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। ইলিশের দাম বৃদ্ধি থাকায় ক্রেতা সমাগম কমেছে এই আড়তে। যদিও বরাবরই ক্রেতাদের অভিযোগ দাম নাগালের বাইরে। যার কারণে ইলিশ কেনায় অনাগ্রহ ক্রেতাদের। ক্রেতা মো. শোয়াইব খান জানান, বেশ কয়েকজন মিলে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে ইলিশ কিনতে আসি, কিন্তু দাম শুনে আমাদের অনাগ্রহ এসেছে। যেখানে ১০-১২টি ইলিশ কেনার কথা, সেখানে ৫-৬টি ইলিশ কিনতে হয়েছে। এখন ইলিশের মৌসুম নয়, তবে প্রতি আড়তে কিছু কিছু ইলিশ আছে। দাম প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি। দাম নাগালের মধ্যে না আসলে ধীরে ধীরে ইলিশ কেনার আগ্রহ কমে যাবে।

বড়স্টেশন মাছঘাটের ইলিশ ব্যবসায়ী হাজী শবে বরাত বলেন, মূলত এখন ইলিশের মৌসুম না, তাই ইলিশের আকাল থাকা স্বাভাবিক। এছাড়া পুরো ইলিশের মৌসুমে আকাল ছিলো। যার কারণে দাম আর কমেনি। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ঘাটে ক্রেতা কমেছে। ইলিশ নিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতাদের সাড়া পাওয়া যায় না। ইলিশ থাকলেও ক্রেতা নেই বললেই চলে। আরেক ব্যবসায়ী স্বপন বলেন, ইলিশ খুবই কম। দাম কমার আর সম্ভাবনা নেই। এখন এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২৭০০ টাকায়। আর ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ ১২০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। সারাদিনে ২০ থেকে ৩০ কেজি মাছও বিক্রি হয় না। ইলিশ কিন্তু পিঁয়াজ, রসুন, লবণ, মরিচ, হলুদ, চাল, আটা ইত্যাদির মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নয় যে, এটি প্রত্যেককে বাধ্য হয়ে কিনতে হবে। এটি সুদূর অতীতে চাঁদপুরবাসীর জন্যে সহজলভ্য ও সুলভ মূল্যের পণ্য ছিলো। এখন আর নয়। পূর্ণ মৌসুমেও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে ইলিশের দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালের মধ্যে আসে না। ইলিশের চেয়ে গরু, খাসি ও মহিষের মাংসের মূল্য অনেক কম। সেজন্যে এই মাংস খাবারের তালিকায় অনিবার্য স্থান দখল করেছে, আর ইলিশ নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে। অবস্থা এখন এমন, চাঁদপুরের আছে ইলিশের খ্যাতি, যেটি নেই প্রত্যাশা অনুযায়ী খাবার পাতে। ইলিশ পাঁচ তারকা হোটেলে খাওয়ার মতো বিলাসী পণ্যেই কার্যত পরিণত হয়েছে। তারপরেও ইলিশে পাওয়া যায় না প্রকৃত স্বাদ। কেননা ইলিশ নিয়ে প্রতারণাও পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে। অনলাইনে ইলিশ বিক্রির প্রতারণার পাশাপাশি চলছে অন্য প্রতারণাও। যেমন- মায়ানমার, ওমান, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার সহ এমন কিছু স্থানে বড়ো আকারের চকচকে ইলিশ পাওয়া যায়, যাতে থাকে না ইলিশের প্রকৃত স্বাদ। সেসব স্থান থেকে কিছু ব্যবসায়ী ইলিশ আমদানি করে চাঁদপুরের ইলিশ বলে বিক্রি করে চড়া দামে। অনেক সরল ক্রেতা সেসব ইলিশ কিনে স্বাদ না পেয়ে প্রতারিত হয়ে ইলিশ থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছে মুখ। বস্তুত দুর্মূল্য ও প্রতারণার কারণে ইলিশ সংকটের মধ্যেই সৃষ্টি হচ্ছে ক্রেতা সংকট, যা ক্রমশ বাড়তেই থাকবে। ইলিশের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সহ মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য ও ধারাবাহিক তৎপরতা না থাকায় ক্রেতাদের অন্তত নব্বই ভাগের কাছে সেই বাজার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। এমনটি পর্যবেক্ষকরা অনুধাবন করলেও ইলিশ ব্যবসায়ীরা সেটি পুরোপুরি অনুধাবন করছে বলে মনে হচ্ছে না। তবে ব্যবসায়ীরা ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির অনুকূলে জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমের সফলতা নিয়ে মৎস্য বিভাগের অবাস্তব প্রতিবেদন ও গবেষণার নামে প্রহসনে কম-বেশি বিরক্ত। নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, ডুবোচর কেটে দেওয়া এবং নদীকে দূষণমুক্ত করার দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম না থাকায় ইলিশের উৎপাদন যে কমছে, সে ব্যাপারে মৎস্য ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবী নেতারা কথা বললেও সরকার তাতে কর্ণপাত না করে ভাসা ভাসা কিছু কর্মসূচি পালন করছে, যাতে আছে প্রদর্শনেচ্ছা, কাঙ্ক্ষিত ফলাফল যায় না পাওয়া। তাই ইলিশ নিয়ে ভাবতে হবে বিস্তারিতভাবে এবং সকল সংকট নিরসনের কার্যকর উপায় খুঁজতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়