প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৫০
চাঁদপুর অযাচক আশ্রমে ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের শুভ জন্মোৎসব
'তুমি হিন্দু না মুসলিম, বৌদ্ধ না খ্রিস্টান, তা জানিতে চাহি না বন্ধু', 'জানিতে চাই তুমি কতোটুকু মানুষ।' এমন মহান চিন্তা- চেতনা ও জাত, পাত, ঊর্ধ্বে রেখে যিনি সর্বধর্মের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রেখে মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন, সেই মহান সাধক, অন্ধকারাচ্ছন্ন পথের আলোর দিশারী, বিশ্বের কোটি ভক্ত হৃদয়ের স্পন্দন শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের শুভ জন্ম উৎসব উদযাপনে আগামী ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর সোম ও মঙ্গলবার দুদিনব্যাপী ব্যাপক ধর্মীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
|আরো খবর
উৎসবের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৬টায় আশ্রমাঙ্গনে ঊষা কীর্তন ও হরি ওঁ কীর্তন, সকাল সাড়ে ৭ টায় নবীন যুগের নববেদ শ্রীশ্রী অখণ্ড সংহিতা পাঠ, সকাল সাড়ে ৮টায় অখণ্ড মণ্ডলেশ্বর শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের শুভ জন্মোৎসব দিবসের বিশেষ সমবেত উপাসনা হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় হরি ওঁ কীর্তন সহযোগে চাঁদপুর শহরে বের হবে সম্প্রীতির র্যালি নগর পরিক্রমা হবে। দুপুর সাড়ে ১২ টায় রয়েছে মহাপ্রসাদ বিতরণ ও হরি ওঁ কীর্তন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় সান্ধ্য কীর্তন ও শান্তি বাচনের মাধ্যমে জন্মোৎসবের শুভ সমাপ্তি ঘটবে।
উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষ সকলের আন্তরিক উপস্থিতি ও সহযোগিতা কামনা করেছেন পুণ্য জন্মস্থান চাঁদপুর অযাচক আশ্রম বোর্ড অব ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত অখণ্ড সংগঠনের সেবক সেবিকাবৃন্দ।
জন্মোৎসবের পরের দিন নতুন বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি বুধবার অনুষ্ঠিত হবে শ্রী শ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব প্রবর্তিত চরিত্র গঠন আন্দোলন দিবস।এই দিবস উদযাপনে চাঁদপুর জেলা চরিত্র গঠন আন্দোলন পরিষদের আয়োজনে ওইদিন সকাল ৭ টায় চরিত্রগঠন আন্দোলনের শুভ সূচনা উপলক্ষে চাঁদপুর শহরের ঘোড়ামারার মাঠে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। পরে সকাল ৮টায় অযাচক আশ্রম হতে স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের ভক্ত, অনুরাগী, সুহৃদ, সুধীজনদের অংশগ্রহণে র্যালি চাঁদপুর রেলওয়ে লেকে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য 'অঙ্গীকারে'র বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। সকাল ১০টায় অযাচক আশ্রম প্রাঙ্গণে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ও ব্যাপক ভক্ত-হৃদয়ের উপস্থিতিতে হবে চরিত্রগঠন আন্দোলন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা।
উক্ত অনুষ্ঠান সমূহে সকলের উপস্থিতি একান্তভাবে কামনা করেছেন চাঁদপুর জেলা চরিত্রগঠন আন্দোলন পরিষদ নেতৃবৃন্দ।উল্লেখ্য, অখণ্ড মণ্ডলেশ্বর শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব পৌষ মাসের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের কোনো একদিন (যার সঠিক দিন, তারিখ, ঠিকুজি, কোষ্ঠী, সময় সকলই অজ্ঞাত) চাঁদপুর শহরের পুরাতন আদালত পাড়ার পুণ্য ভূমিতে, পরমারাধ্যা মাতা শ্রীশ্রী মমতা দেবীর গর্ভ হতে অষ্টম মাসে অবতীর্ণ হন। অবতীর্ণ হওয়ার সাত দিন অবচেতন অবস্থায় থাকার পর ৮ম দিনে তাঁর মাঝে চেতনা পরিলক্ষিত হয়। তাঁর বাবা ছিলেন আদর্শ সাধক গৃহীত পিতা স্বর্গীয় সতীশ চন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় ও ঠাকুর দাদা ছিলেন চাঁদপুরের স্বনামধন্য উকিল ঋষিতুল্য স্বর্গীয় হরিহর গঙ্গোপাধ্যায়। ছোটকাল থেকেই স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের মাঝে অনেক অলৌকিক কার্যক্রমসহ সেবা কার্যক্রম পরিলক্ষিত হতে দেখা যায়। তাঁর সেবা, শিক্ষা ও মানবতার কারণে তিনি হয়ে উঠেন জগৎ সেরা মহামানব। তাঁর পুণ্য জন্মস্থান চাঁদপুর হওয়ায় জেলা শহর চাঁদপুর ও দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেন। এই মহান সাধক বিশ্ব মাঝে আজ ব্যাপকভাবে সমাদৃত। লাখ লাখ ভক্ত-অনুরাগী আজ তাঁর মহৎ কর্মে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিঃস্বার্থে মানব কল্যাণে কাজ করছেন নীরবে নিভৃতে। তিনি দৃঢ়তার সাথে সমাজে প্রচার করেছেন চরিত্রহীনের ঈশ্বর সাধনা ভুল, স্বদেশ সাধনা মিথ্যা। তিনি মানুষকে অযাচক হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছেন , বেকারত্ব দূরীকরণে মানুষকে কর্মে উদ্বুদ্ধ করেছেন, সৎ চরিত্রবান আদর্শ মানুষ হতে চরিত্র গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি নির্দ্বিধায় প্রচার করেছেন, আমি পৃথিবীতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করিতে আসিয়াছি, গতানুগতিকতা আমার পন্থা নহে। আজ তাঁর লিখিত পাঠ্যপুস্তক পৃথিবীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই মহান সাধকের পুণ্যভূমি দর্শনে দেশ-বিদেশের অগণিত মানুষ ছুটে আসছেন চাঁদপুরে। আজ তাঁর অগণিত ভক্ত অখণ্ড সংঘ প্রধান শ্রীশ্রী দাদামণি তপন ব্রহ্মচারী মহারাজের সম্মতিক্রমে শ্রী শ্রী বাবামণি ও শ্রীশ্রী মা মণির অশেষ কৃপায় চাঁদপুরের পুণ্য জন্মস্থানে বিশ্বমানের ধ্যান মন্দির নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেছেন। যার সিংহভাগ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ সম্পন্নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন পুণ্য জন্মস্থান চাঁদপুর অযাচক আশ্রম বোর্ড অব ট্রাস্ট ও বাংলাদেশ সম্মিলিত অখণ্ড মণ্ডলের সেবক-সেবিকাবৃন্দ। তাঁরা মনে করেন, বিশ্বমানের ধ্যান মন্দির নির্মিত হলে দেশবিদেশের অগণিত ভক্ত- অনুরাগী এই পুণ্য জন্মস্থান দর্শনে ছুটে আসবেন এবং মহান সাধকের জন্মস্থান হিসেবে চাঁদপুরের পরিচিতিও বিশ্ব মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরবে। পৌষ মাস মহান সাধক অখণ্ড মণ্ডলেশ্বর স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের জন্মমাস হওয়ায়, এই মাসটি স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের ভক্তদের কাছে পুণ্য মাস হিসেবেও বিবেচিত। তারা অনেকেই এই মাসে নিরামিষ আহার থেকে শুরু করে মানুষের কল্যাণে দান ধ্যানও করে থাকেন।