সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩

গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল: স্বচ্ছতার অভাবে মূল লক্ষ্য কি ক্ষতিগ্রস্ত?

প্রতিবেদন : মো. জাকির হোসেন
<B>গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল: স্বচ্ছতার অভাবে মূল লক্ষ্য কি ক্ষতিগ্রস্ত?</B>

বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ভূমিকা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সেই ধারাবাহিকতায় নতুন একটি অধ্যায় যুক্ত করেছে। এই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যে গঠিত ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ এক উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ। তবে, এই সেলের অর্থব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গত ২৭ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই বিশেষ সেল গঠনের ঘোষণা দেয়। এর প্রধান দায়িত্ব হলো অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের তালিকা তৈরি, আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, এবং তাদের পরিবারের পুনর্বাসন। এ ছাড়া, আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণ এবং ডকুমেন্টেশনও সেলের দায়িত্বের মধ্যে ছিল। কিন্তু মাত্র দেড় মাসে ৪৪ লাখ টাকারও বেশি খরচের খবর প্রশ্ন তোলে, এই অর্থ কি যথাযথভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে?
স্বচ্ছতার অভাব ও প্রশাসনিক দুর্বলতা

সেলের খরচের খাত নিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম নিজেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ফার্নিচার, ইন্টেরিয়র সাজসজ্জা, এবং আপ্যায়নের মতো খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় প্রমাণ করে যে অর্থ ব্যবহারে যথাযথ পরিকল্পনার অভাব ছিল। অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা বন্ধ রাখার নির্দেশ এবং অডিট কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হলেও, এ ধরনের পদক্ষেপ প্রাথমিক পর্যায়েই নেওয়া উচিত ছিল। বিশেষ সেলের কার্যক্রমে ছাত্র প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত না করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় একপাক্ষিকতা থাকা আরও একটি উদ্বেগের বিষয়। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্মৃতি সংরক্ষণে সকল অংশীজনের সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি।
মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতির আশঙ্কা
বিশেষ সেলের কাজ ছিল শহীদ ও আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। অথচ আলোচনায় উঠে এসেছে ডকুমেন্টারি তৈরিতে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনার বিষয়। এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, তবে এর জন্য বরাদ্দ অর্থ যেন মূল লক্ষ্য—আহতদের পুনর্বাসন ও সহায়তা—থেকে দৃষ্টি সরিয়ে না নেয়।
উন্নতির পথ
গণ-অভ্যুত্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গঠিত এই সেল সঠিকভাবে কাজ করলে এটি একটি মাইলফলক হতে পারে। তবে সেজন্য প্রয়োজন:
১. স্বচ্ছ অর্থব্যবস্থাপনা: অর্থ ব্যয়ে রিকুইজিশন ও প্রাক-অনুমোদনের প্রক্রিয়া কঠোরভাবে অনুসরণ করা।
২. অডিট ও তদারকি: সেলের খরচের সঠিকতা নিশ্চিত করতে স্বাধীন অডিট কমিটির কার্যকর ভূমিকা অপরিহার্য।
৩. সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: ছাত্র প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে হবে।
৪. মূল লক্ষ্যে অটুট থাকা: শহীদ ও আহতদের সহায়তা এবং তাদের পরিবারের পুনর্বাসনকেই প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ধরে রাখতে হবে।

গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্মৃতি সংরক্ষণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর মতো উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। তবে এটি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা, এবং অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণই প্রকৃত সাফল্য বয়ে আনতে পারে। বিশেষ সেল যেন তার মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না হয়—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়