সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭

সক্রিয় বার্ধক্য অর্থনীতির সহায়ক

হাসান আলী
সক্রিয় বার্ধক্য অর্থনীতির সহায়ক

বার্ধক্যে সক্রিয় থাকার অর্থ হলো কম খরচে শান্তিতে স্বস্তিতে জীবনযাপন। বার্ধক্যে সক্রিয় থাকতে হলে জীবনের শুরুতেই ভালো একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করা অধিক নিরাপদ। পরিকল্পনাহীন বার্ধক্যে উপনীত হওয়া মূর্খতা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। মানুষের জীবন মূলত তিন ভাগে বিভক্ত, যথা শিক্ষা, কর্ম ও অবসর।শিশুকে শিক্ষিত করে তোলার জন্যে অভিভাবকদের ২৫/৩০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।চাকরি কিংবা ব্যবসা শুরু করে ৩০ বছরের কাছাকাছি সময়ে এবং ষাটোর্ধ্ব হয়ে অবসর জীবনে প্রবেশ করতে হয়।

চাকরিতে বাধ্যতামূলক অবসর আছে। ব্যবসা বাণিজ্যে একটা সময় আসে, যখন আর কাজ করার শারীরিক মানসিক সক্ষমতা থাকে না। স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরাও একটা সময়ে অবসরে চলে যান। দেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। দিন দিন মানুষের দীর্ঘায়ু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক প্রবীণ জনগোষ্ঠী অর্থনীতির জন্যে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। প্রবীণরা অবসরে যাওয়ায় রাজস্ব আয় কমতে থাকে, অপর দিকে সামাজিক ব্যয় অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকলে অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ে।

একাকী প্রবীণের দেখভাল, সেবা-যত্ন, দীর্ঘমেয়াদী পরিচর্যার জন্যে সরকারের বড়সড় টাকা খরচ হয়। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্যে আমাদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর কাঁধে নির্ভরশীল শিশু, নারী ও প্রবীণ ব্যক্তিদের দায়ভার রয়েছে। শিশু ও নারীদের নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে পারার

সম্ভবনা থাকলেও প্রবীণদের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

যতদিন যাবে প্রবীণের নির্ভরশীলতা তত বাড়বে। এই নির্ভরশীলতা যত কম হবে, ততই অর্থনীতির ওপর চাপ কমবে।

দেশে বর্তমানে প্রায় দুই কোটি প্রবীণ রয়েছে। প্রতি মাসে প্রত্যেকের গড়ে পাঁচশ' টাকার ওষুধ লাগলে বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ। চিকিৎসা খাতে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্যে বিপুল পরিমাণ ব্যয় অর্থনীতির জন্যে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

বয়স যত বাড়তে থাকবে, শরীরের কর্মক্ষমতা তত কমতে থাকবে। রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও দিন দিন কমতে থাকবে। জীবনযাপন, চলাফেরা, খাওয়া দাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন সক্রিয় বার্ধক্যের সহায়ক।

বেশির ভাগ মানুষের ধারণা হলো, কাজ কর্ম করতে পারাই হলো সক্রিয় বার্ধক্য। কথাটা আংশিক সত্যি। সক্রিয় বার্ধক্য বলতে আমরা বুঝবো, দৈনন্দিন কাজ কর্ম কারো প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া করতে পারা, খাবার, বাসস্থান, বিনোদন, চিকিৎসা, সেবা পাওয়ার সুযোগ বিদ্যমান এমন একটি অবস্থা।

সক্রিয় বার্ধক্য ব্যক্তিকে আনন্দময় জীবনযাপনের সুযোগ তৈরি করে দেয়। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে চাপমুক্ত রাখতে সহায়তা করবে। সক্রিয় বার্ধক্যে থাকা ব্যক্তির জন্যে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যক্তির ভূমিকা প্রশংসনীয়।

কথায় আছে, জল জল গঙ্গার জল/ বল বল নিজের বাহুবল। বার্ধক্যের চ্যালেঞ্জ শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিকেই মোকাবিলা করতে হবে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটি ভ্রমণ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এই সময়টায় কখন কোন্ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে তা বিবেচনায় রাখা। নিষ্ক্রিয়, অনাকাঙ্ক্ষিত, অকার্যকর, অপ্রয়োজনীয় কোনো কিছুই মানুষ গ্রহণ করতে চায় না। বিশেষ করে বার্ধক্যের শেষ দিনগুলোতে রোগশোক মানুষকে বড়ো বেশি কাবু করে ফেলে। চলাচল সীমিত হয়ে যায়। নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে। প্রাত্যহিক কাজ কর্মে অন্যের সাহায্য অপরিহার্য হয়ে যায়। এই সময়ে দৈনন্দিন ব্যয় বাড়তে থাকে। স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে যখন তখন। চিকিৎসা সেবার জন্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যয় হতে পারে। ব্যয় মেটানোর পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে। অসুস্থ হয়ে টাকা পয়সা জোগাড় করে চিকিৎসা নিতে গেলে সময়ক্ষেপণ হতে পারে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলাফেরা, খাবার দাবার গ্রহণ, কথা বলতে পারা, নির্দেশনা দিতে পারা, নিজের ভালো মন্দ বুঝতে পারার সক্ষমতাই সক্রিয় বার্ধক্য।

বিপুলসংখ্যক প্রবীণকে হাসপাতালে রেখে দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা ও পরিচর্যা দেয়া খুবই কঠিন এবং ব্যয়বহুল। মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা বজায় রাখা দুরূহ ব্যাপার। একজন প্রবীণকে ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে রেখে বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবার খরচ ব্যক্তি, পরিবার এবং রাষ্ট্রকে বহন করা সম্ভব কিনা তা আমাদের বিবেচনা করতে হবে।

পৃথিবীতে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকবে, অপর দিকে তরুণের সংখ্যা কমতে থাকবে। বিপুল সংখ্যক প্রবীণের দায়ভার তরুণরা বহন করতে পারবে কিনা সেটাও সক্রিয় বিবেচনায় আনতে হবে। জাতীয় বাজেটের বড়ো একটি অংশ প্রবীণের কল্যাণে ব্যয় হতে থাকলে উন্নয়নমূলক অনেক কাজ হাতে নেয়া সম্ভব হবে না। বার্ধক্যে সক্রিয় থাকা অর্থ পরিবারের জন্যে, রাষ্ট্রের জন্যে বোঝা হয়ে না যাওয়া। যতটুকু সম্ভব দেশের অর্থনীতিকে সজীব রাখতে সক্রিয় বার্ধক্যে থাকতে হবে।

হাসান আলী : প্রবীণ বিষয়ে লেখক ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়