শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩, ০০:০০

মৌমিতা আচার্যী : অরুণিমায় নক্ষত্রজ্যোতি

পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

মৌমিতা আচার্যী : অরুণিমায় নক্ষত্রজ্যোতি
অনলাইন ডেস্ক

গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া, প্রণব রায়ের লেখা গানের বাণী যখন মৌমিতা আচার্যীর কণ্ঠে ‘মধুমালতী ডাকে আয়’ হয়ে আমার কানে প্রবেশ করে তখন আমার কেবল একটি ধারণারই জন্ম হয়, গানটি আর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের না থেকে আজ থেকে মৌমিতারও হয়ে গেলো। অতি পরিচিত, অতি গীত ও শ্রুত গানটি গেয়েও মৌমিতা বুঝিয়ে দিতে পেরেছিল তার কণ্ঠ, গায়কী ও মগ্নতা সম্পূর্ণ তার নিজস্ব। সুরে রেখে নিজস্বতা ধারণ করে কিংবদন্তি কণ্ঠকে এড়িয়ে মঞ্চ জিতে নেয়া চাট্টিখানি কথা নয়। মৌমিতা সেদিন সফল হয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল, সে বহুদূর যেতে এসেছে, থামতে নয়। যোগ্যতাহীন ভাগ্য আর ভাগ্যহীন যোগ্যতা কোনো কাজে আসে না। মৌমিতার দুটোই ছিলো বিধায় তার সফলতা কেবল সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র। যদিও ভাগ্যের পরিবর্তনে বাধা এসেছিল তার নিজ পরিবার থেকেই, তবুও শেষমেষ নিয়তিরই জয় হয়। পুরাণবাজারের মৌমিতা আর পুরাণবাজারে আটকে থাকেন না। তিনি হয়ে উঠেন রবীন্দ্র ভারতীর মৌমিতা আচার্যী।

শংকর আচার্যীর হাতে তৈরি হওয়া শিল্পী, মৃণাল সরকারের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানগুলোয় হয়ে উঠেন অনিবার্য। এ অনিবার্যতা সুযোগের সদ্ব্যবহারে কণ্ঠের উৎকর্ষে সম্ভব হয়ে উঠে। জীবিকার সংগ্রামে জয়ী হতে যোগ দেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে মিউজিক টিচারের পদে। কিন্তু নিয়তির পা-ুলিপি ছিল ভিন্ন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ দূতের আবির্ভাবে মৌমিতা পেয়ে যান আইসিসিআরের স্কলারশিপ। হাঁটি হাঁটি পায়ে যে শিল্পী হাতের তালুর মতো একটা শহরের সংস্কৃতিতে প্রতিষ্ঠা পেতে লড়াই করছিলেন, নিয়তি তাকে নিয়ে যায় মহাসমুদ্রের মহীসোপানে। অদৃষ্ট যাকে পৌঁছাবে চূড়ায় তাকে তো বাধা অতিক্রম করতেই হবে। পরিবার তাকে রুখে দাঁড়ায় সুনাম হানির মেকি আতঙ্কে। চারপাশের চেনামুখগুলো বানাতে থাকে কল্পকাহিনী। যারা কখনো সিঁড়ি এগিয়ে দিতে পারেনি উপরে ওঠার, তারাই কেড়ে নেয় দৈবক্রমে পাওয়া সিঁড়ির নাগাল। বাঙালির চিরকালীন ধর্মে পরচর্চা হয়ে উঠে সবার পবিত্র ব্রতের মতো। সুরের পাখি মৌমিতাও পরচর্চার বিষয়ে পরিণত হন অনেকের মুখরোচক আসরে। কিন্তু নিয়তি তাতে থমকে দাঁড়াবে কেন? পঙ্গুরেও যিনি পার করান গিরি, তিনি তো বসে থাকার জো নেই। তাহলে তো বিশ্ব সংসার থমকে যেতো গতি হারিয়ে। গতিই যে জীবন। মৌমিতার স্বপ্নও গতি পায় সেই আদ্যাশক্তির কাছে। তার দৃঢ়তা হয়ে উঠে মৌমিতার উড্ডয়নের পাখনা। অতএব, আর পিছু ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। মৌমিতাকে যে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ডাক দিয়েছেন!

কোলকাতা এবার পরম মমতায় কোলে টেনে নেয় আমাদের গীতশ্রীকে। বিএ সম্মান শ্রেণিতে সংগীত বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। উপাচার্য মহোদয় স্বয়ং নিজ হাতে পুরস্কার তুলে দেন মৌমিতার হাতে। সমাবর্তনে মৌমিতা পান সনদ, স্বর্ণপদক আর গুরুজনদের স্নেহাশিস। সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় সময়। আমাদের সময় পেয়ে যায় একটা নূতন রাবীন্দ্রিক কণ্ঠ।

পুরাণবাজারের মৌমিতা আজ সারাদেশজুড়ে আরো অসংখ্য মৌমিতার জন্যে আশার দীপাবলি। মৌমিতাদের সমাজ টেনে ধরে পিছে। তবে তা একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত। এরপর আর পিছুটানের শক্তি থাকে না টেনে ধরার। সুরের কোকিল মৌমিতা আজ আমাদের গৌরবের উপলক্ষ।

যে সমাজে যুগপৎ সংস্কৃতি ও পরচর্চার অনুশীলন হয় সে সমাজে প্রকৃত শিল্পীর জন্ম হয় না। এ হেন সমাজে সংস্কৃতির নামে যা চর্চা হয় তা আসলে জাহিরের আত্মণ্ডপ্রবঞ্চক প্রবণতা। প্রগতিশীলতা মানে কেবল সংস্কৃতির নামে চেয়ার দখলে রাখার চর্চা নয়, বরং সবার জন্যে সংস্কৃতিচর্চা উন্মুক্ত করে দিতে পারাই প্রগতিশীলতা। স্কুল-কলেজে এবার যে শিক্ষা সপ্তাহ প্রতিযোগিতা হলো তাতে শোনা গেছে, কতিপয় অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে একই মুখ বার বার আনা হয়েছে। এই চর্চা বড্ড আত্মঘাতী চর্চা। এ রকম পরিবেশে, এ রকম সমাজ রবীন্দ্র-ভারতী জয় করা মৌমিতাদের জন্ম দিতে ও যত্ন নিতে পারে না। একজন মৌমিতার ভারত বিজয় আজ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে, প্রতিভা ও প্রচেষ্টা থাকলে ন্যূনতম ভাগ্যেই বহুদূর যাওয়া যায়। অরুণিমার নক্ষত্রজ্যোতি মৌমিতা আচার্যী হোক সুরের ছায়াপথ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়