প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৩, ২২:৩৩
১৫ বছর ধরে খাঁচায় বন্দি প্রতিবন্ধী পুত্র ফাহাদ ॥ সোয়া দু বছর আগে হয়েছে স্বামীর মৃত্যু ॥ দেড় মাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু ঘটেছে দু সন্তানের
প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করছেন নাছিমা বেগম
জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী ২৩ বছর বয়সী আঃ আজিজ ফাহাদ পিতা-মাতার আদরের বড় সন্তান। হাঁটা চলা সহ কথাও বলতে পারে না সে। ছোট থেকে বড় হওয়ার পর এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে ক'বার পুকুরে পড়ে গিয়েছিল। বড় হওয়ার সাথে সাথে পরিবারের সদস্যরা তাকে ঘরে আটকে রাখতে না পেরে ঘরের ভেতরে খাঁচায় বন্দি করে রাখছে। প্রায় ১৫ বছর যাবৎ সে লোহার খাঁচায় বন্দি হয়ে আছে। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে তার এলোমেলো ডাকে ছুটে আসেন মা নাছিমা বেগম। পরিবারের পক্ষ থেকে জন্মের পর চিকিৎসা করা হলেও বর্তমানে নাছিমা বেগম স্বামী-সন্তান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে কোনো মতে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
|আরো খবর
২০২০ সালে চার সন্তানের জননী নাছিমা বেগমের বড় মেয়ের বিয়ে হলে হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখালের রামপুর এলাকায় স্বামীর বাড়িতে চলে যায় এবং সেখানে বসবাস করছে। তারপর হঠাৎ করেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় নাছিমা বেগমের সংসার। সাজানো গোছানো সংসার নিমিষেই তছনছ হয়ে যায়। স্বামী ছিলেন শাহরাস্তি উপজেলার ঠাকুর বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহজাহান ভূঁইয়া। ২০২১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তিন সন্তান নিয়ে জীবন যুদ্ধ শুরু করেন নাছিমা বেগম। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! এ বছরের ১৮ মার্চ নিজ বাড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নাছিমার দুই সন্তান ১৬ বছর বয়সী ফাহিমা আক্তার ও ৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী আঃ রহমান মৃত্যুবরণ করে। সেই থেকেই একা হয়ে পড়েন নাছিমা বেগম।
শাহরাস্তি পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের উপলতা ভূঁইয়া বাড়িতে স্বামীর ভিটায় অসুস্থ প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে জীবনযাপন করছেন নাছিমা বেগম। চোখে মুখে শুধুই অন্ধকার। স্বামীর ঋণ ও সংসার চালাতে প্রতিদিনই বোঝা বাড়ছে তার। হতাশার চাদরে ঢাকা নাছিমা বেগম জানান, ১০ লাখ টাকার ঋণ মাথায় নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি। ঘরে প্রতিবন্ধী সন্তান ও স্বামীর সম্মানের দিকে তাকিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে পারছেন না। দিনদিনই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে বসতঘরটি। আশপাশের দু-একজন ও বাবার বাড়ি থেকে মাঝেমধ্যে সহযোগিতা নিতে হয় তার। প্রতিবন্ধী ফাহাদ দিনভর লোহার খাঁচায় বন্দি থেকে রাতে মায়ের আঁচলের নিচে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লেও নাছিমা বেগমের চোখে মুখে শুধুই অন্ধকার। কতটা রাত তার নির্ঘুমে কাটছে সেই হিসেব জানা নেই তার।
জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাওয়া স্বামী ও আদরের দুই সন্তানের স্মৃতি বুকে নিয়ে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছেন নাছিমা বেগম। সমাজের সচেতন মহল ও সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আলোর মুখ দেখতে পারে নাছিমা ও ফাহাদের জীবন।