সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৫৬

এমন তাণ্ডবে প্রয়োজন খাণ্ডব দাহন

অনলাইন ডেস্ক
এমন তাণ্ডবে প্রয়োজন খাণ্ডব দাহন

আমাদের দেশে ভূমিদস্যুতার নানা রূপ। কেউ আইল ঠেলে পাশের জমির কিয়দংশ দখল করে, কেউ গায়ের জোরে অন্যের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে কিংবা চাষাবাদ করে, কেউ মাটি বা বালি কেটে নিয়ে যায়, ড্রেজিং করে, কেউ অন্যের জমিতে ড্রেজার দিয়ে বালি বা কাদা মাটি ফেলে ভরাট করে ইত্যাদি ইত্যাদি। এর মধ্যে জমি থেকে মাটি কাটা, জমিতে বালি বা কাদা মাটি ফেলাটা তাণ্ডবরূপেই এখন বেশি দেখা যায়। ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি, কচুয়ায় এমন তাণ্ডব সংক্রান্ত খবর বেশি পাওয়া গেলেও বস্তুত এমন তাণ্ডব চাঁদপুরের অন্য সকল উপজেলাসহ দেশের সর্বত্রই দেখা যায়। বিচ্ছিন্নভাবে এমন তাণ্ডবের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চললেও লাগাতার চলছে না কিংবা চালানো সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে এমন তাণ্ডবলীলা প্রকৃত অর্থে বন্ধ হয় না। কারণ, ভূমিদস্যুরা অনেক তৎপর, কৌশলী, আর প্রভাবশালী তো বটেই। 'কচুয়ায় বন্ধ হচ্ছে না ভূমিদস্যুদের তাণ্ডবলীলা' শিরোনামে বুধবার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদে তেমনটিই ধারণা করা যায়।

সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, কচুয়া উপজেলায় বন্ধ হচ্ছে না ভূমিদুস্যদের তাণ্ডবলীলা। সম্প্রতি এ নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা বারবার সংবাদ প্রকাশ করলেও দেখা যায়নি প্রশাসনের বড় কোনো ভূমিকা। উপজেলার সর্বত্র চলছে ভূমিদস্যুদের ভেকু দিয়ে আবাদী ফসলি জমি থেকে ও বিভিন্ন কৃষি জমির প্রজেক্ট থেকে মাটি কাটা। এসব মাটি পরিবহনে অবৈধ ট্রাক্টর ও হাইড্রলিক পিকআপ চলাচলে কাঁচা-পাকা সড়ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই।

এ সংবাদের প্রতিবেদক সম্প্রতি তথ্য সংগ্রহে ঘুরে-ফিরে দেখতে পান, কচুয়া-গৌরিপুর সড়কের মাঝখানে কচুয়া উপজেলার ৪নং পালাখাল মডেল ইউনিয়নের বাছাইয়া ব্রিকফিল্ড সড়কের পূর্বপাশে বিশাল কৃষি জমির মাঠের প্রজেক্ট থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ ভেকু দিয়ে কতিপয় ভূমিদস্যু প্রকাশ্যে ও রাতের অন্ধকারে মাটি কেটে অবৈধ ট্রাক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে কড়ইয়া, গোহট উত্তর, গোহট দক্ষিণ, আশ্রাফপুর ইউনিয়নসহ উপজেলার অন্য ইউনিয়নগুলোতেও চলছে ভূমিদস্যুদের রমরমা ব্যবসার তাণ্ডবলীলা। এদিকে পালাখাল মডেল ইউনিয়নের রুস্তম আলী ডিগ্রি কলেজ সড়ক গেইটের পূর্ব পাশে একটি বিশাল কৃষি জমির মাঠের মাঝখানে চলছে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন।

বিষয়টি পালাখাল মডেল ইউপি চেয়ারম্যান হাবীব মজুমদার জয় নিশ্চিত করে বলেন, আমার ইউনিয়নসহ পাশাপাশি অন্য ইউনিয়নগুলোতে মাটি কেটে ও ড্রেজারে মাটি উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কৃষি জমি বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। কিন্তু কিছু লোক এ নির্দেশনা অমান্য করে ভেকু ও ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে কৃষি জমি বিনষ্ট করে যাচ্ছে। আমরা জনপ্রতিনিধিরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

কচুয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ সোফায়েল হোসেন বলেন, সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন বাড়ির মাটি ভরাট ও ব্রিকফিল্ডসহ অন্যান্য ডেভেলপমেন্ট কাজ করার জন্য ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যা একটি ক্ষতিকর ও আত্মঘাতী কাজ। একজন কৃষক কৃষি মাঠ থেকে মাটি বিক্রি করলে, পাশাপাশি জমির কৃষকরাও মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। কৃষকরা যেন মাটি বিক্রি না করে সেজন্যে আমরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে আমরা উপজেলা প্রশাসনেরও সহযোগিতা চাচ্ছি। এদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে যেন এসব বন্ধ করা হয়। যদি এসব মাটি বিক্রি বা মাটি কাটা বন্ধ করা না হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে যতই সার কীটনাশক ব্যবহার করি না কেন, আমাদের আবাদী জমিগুলো অনাবাদী হয়ে পড়বে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুল হাসান জানান, আমরা যেখানে অবৈধভাবে মাটি কাটার খবর পাচ্ছি, সেখানেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং তা চলমান রয়েছে।

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, যেমন কুকুর তেমন মুগুর। সেজন্যে ভূমিদস্যুদের তাণ্ডবলীলা বন্ধে খাণ্ডব দাহন তথা চরম কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ অনিবার্য। যেমন-পুলিশের উপস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কেবল ভূমিদস্যুতায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অর্থদণ্ড দিলে চলবে না, ব্যবহৃত উপকরণ (ভেকু, ড্রেজার, ট্রাক্টর, মিনি ট্রাক ইত্যাদি) পুরোপুরি ধ্বংসের কিংবা বিকল করার কাজটিও করতে হবে। আর অর্থদণ্ডের পাশাপাশি ভূমিদস্যুতায় সংশ্লিষ্টদের কারাদণ্ড দিতে প্রয়োজনে আইনের সংশোধনও করতে হবে। অন্যথায় ক্রমবর্ধমান ভূমিদস্যুতার তাণ্ডবলীলায় পরিস্থিতি দিনের পর দিন ভয়াবহই হতে থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়