প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২১, ১০:৩৭
সাড়ে ৭ মাসে ৪টি সুস্থ সন্তান প্রসব করলেন সাদিয়া
অন্তঃসত্ত্বা হবার পর মাত্র সাড়ে ৭ মাসে (৭ মাস ২০ দিনে) ৪টি সুস্থ সন্তান প্রসব করলেন ২৪ বছর বয়সী মা সাদিয়া আক্তার। এর মধ্যে ২টি ছেলে ২টি মেয়ে। মঙ্গলবার ( ৩ আগস্ট ২০২১) দুপুর ২টায় কুমিল্লা শহরের শাকতলাস্থ মডার্ন হসপিটালে সম্পূর্ণ নরমাল ডেলিভারিতে এ সন্তানগুলো ভূমিষ্ঠ হয়।
|আরো খবর
সাদিয়া হচ্ছেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলাধীন ৬নং পূর্ব জোড়কানন ইউনিয়নের লালবাগ গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার আবুল হাশেম মজুমদার বাড়ির জিল্লুর রহমান সোহান (৩৫)-এর স্ত্রী।
সাদিয়া গৃহিণী, তার স্বামী সোহান একটি ঔষধ কোম্পানির মেডিকেল প্রমোশন অফিসার। এই দম্পতির আতিফা জাহান নামে সাড়ে তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে, যে কিনা সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ হয়।
৪টি সন্তান প্রসবের পর সাদিয়া সুস্থ রয়েছেন। এক সঙ্গে তার এতোগুলো সুস্থ সন্তান প্রসবের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সাদিয়া যে দুজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তারা হচ্ছেন : ডাঃ চন্দনা রাণী দেবনাথ ( কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টার) ও ডাঃ শাহিদা আক্তার রাখি।সদ্যজাত চার সন্তানের জনক জিল্লুর রহমান সোহানের নানী মোসাম্মৎ মনোয়ারা বেগম জানান, সোহানের স্ত্রী সাদিয়া অন্তঃসত্ত্বা হবার কিছুদিন পর ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার বলেন যে, তার গর্ভে তিনটি সন্তানের অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে, তবে চারটিও হতে পারে। তাকে সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকতে হবে। ডাক্তারের কথা মেনে প্রসবের কাছাকাছি সময়ে গিয়েও আলট্রাসনোগ্রামে সাদিয়ার তিনটি সন্তানের অস্তিত্বই দেখা যায়। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় ৪টি সন্তানই সুস্থাবস্থায় প্রসব হয়, যাতে সৃষ্টি হয় ব্যাপক আলোড়ন। অপরিণতভাবে প্রসূত বাচ্চাগুলো হাসপাতালের ইনকিউবেটরে মাশাল্লাহ ভালো আছে।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের নিয়মিত আয়োজন 'চিকিৎসা কণ্ঠে'র বিশেষ প্রতিবেদক টেলিফোনে ডাঃ শাহিদা আক্তার (যিনি ডেলিভারি সম্পন্ন করেন)-এর কাছে একসাথে চারটি সুস্থ বাচ্চা প্রসব করার ব্যাপারে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মাল্টিপল্ প্রেগন্যান্সিতে অর্থাৎ দ্বিযমজ, ত্রিযমজ, চতুর্যমজ ইত্যাদি গর্ভ ধারণের ক্ষেত্রে সাধারণত নির্দিষ্ট গর্ভকাল তথা নয়মাস দশদিন পূর্ণ হওয়ার আগেই অপরিণত সময়ে ভূমিষ্ঠ হয়ে যায়। এই মায়ের ক্ষেত্রে তা-ই ঘটেছে। তার গর্ভকাল একত্রিশ সপ্তাহ পুরিয়েই স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। প্রথম বাচ্চাটি গর্ভে স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল, না নরমাল ডেলিভারি হয়ে যায়। এর পরের তিনটি বাচ্চা গর্ভে ব্রিচ এক্সট্রাকশন পর্যায়ে ছিল, যা বিশেষ প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক ডেলিভারি করানো সম্ভব হয়েছে। গর্ভের প্রথমদিকের দুটো আল্ট্রা সনোগ্রামে চারটি ফিটাসের ছবি আসলেও শেষের দিকের আল্ট্রা সনোগ্রামে তিনটা ফিটাসের ছবি পাওয়া যায়, যদিও চূড়ান্ত ডেলিভারিতে চারটা সুস্থ বাচ্চা ডেলিভারি করানো হয়। এটা হতেই পারে। কারণ শেষের দিকের আল্ট্রা সনোগ্রামে বাচ্চার মাথাগুলো ওভারল্যাপ অবস্থায় দেখা যায়, ফলে মাথা তিনটা দেখা গেছে। বাচ্চাগুলোর কোনো জন্মগত ত্রুটি বা অ্যানোম্যালি আছে কি না তা আমরা পাঁচ মাসকালীন গর্ভে স্ক্যান করে নিশ্চিত হয়েছি। যদিও সোহান-সাদিয়া দম্পতির প্রথম বাচ্চাটা সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনে জন্ম নিয়েছে, এটা স্বাভাবিক যে পরের বাচ্চাটিও সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনে জন্মদান করাটাই নিরাপদ। কিন্তু পূর্ণগর্ভ হওয়ার আগেই তথা সাড়ে সাত মাস গর্ভকালে মায়ের স্বাভাবিক প্রসব বেদনা ওঠার কারণে আগেই প্রসব হয়ে যায়। বাচ্চাগুলো অপরিণত বলে তাদের কিছুদিন নিওনাটাল আইসিইউতে রাখতে হয়েছে। তিনি বাচ্চা ও মায়ের সুস্বাস্থ্য কামনা করেন এবং এরকম ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভের নিরাপদ প্রসবে সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকদের কাছে নবজাতকদের জন্যে দোয়া কামনা করেন।