প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২২, ১৮:৪৮
দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষম জাতি গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান
ভৌগলিক অবস্থান, জনসংখ্যার আধিখ্য,অসচেনতা,অসাবধানতা প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এই দুর্যোগের কারণে প্রতি বৎসর বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক জীবন,সম্পদ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। মানুষের পক্ষে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পূর্ণরুপে প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। দুর্যোগের পূর্বে ব্যাপক প্রস্তুতি, জনসচেতনতা সৃষ্টি, দুর্যোগ চলাকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে তদনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬২, ১৯৬৩ এবং ১৯৬৫ সালে তিনটি ঘূর্ণিঝড়ে এক লাখের বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। এই তিনটি ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে ১৯৬৬ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত এক সিদ্ধান্তে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা দিতে লীগ অব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে (এলওআরসিএস) নির্দেশ দেয়া হয়।
বাংলাদেশ তথাকালীন পূর্ব বাংলা ছিলো একটি নদীবিধৌত নীঁচু সমতলভূমি এবং অগভীর উপকূল বিশিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ একটি জনবহুল দেশ। প্রায় ৭১০ কিঃ মিঃ উপকূল রেখা বিশিষ্ট বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ক্রান্তীয় নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় এর লীলাভূমি। প্রতি বছর এপ্রিল-মে মাসে এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় এবং কোনো কোনো বছর বৃহদাকারে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস সংঘটিত হয়ে থাকে। নিয়মিত এই প্রাকৃতিক দুর্যোগেটি শুধুমাত্র উপকূলীয় অধিবাসীদের জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি সংঘটিত করে না, সেই সাথে সমগ্র দেশের অর্থনীতির উপরেও এক বিরাট নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর সবোর্চ্চ ২২৪ কিলোমিটার বেগে তৎকালীন বৃহত্তর বরিশালে আঘাত হানা এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ১০-৩৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। যে হিসেব পাওয়া যায়, তাতে ১৯৭০ এর প্রবলতম ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১০ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে এবং বিপুল সম্পদ বিনষ্ট হয় এবং অসংখ্য গবাদি পশু এবং ঘরবাড়ি জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়টা সরাসরি বরিশালের মাঝখান দিয়ে উঠে আসে। ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ অনেক এলাকা ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বাঙালি জাতির জন্য এটি ছিল এক মর্মান্তিক ইতিহাস। এই ঘূর্ণিঝড়ে পাকিস্তানীদের অবহেলায় বাঙালিদের জীবন ও সম্পদহানিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুবই বেদনাহত হয়েছিলেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে একটি একতলা লঞ্চে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান এবং বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্যের জন্য আকুল আবেদন জানান । তিনি পাকিস্তানের শাসকদের ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের সিডিউল বদলাতে চাপ প্রয়োগ করেন যার ফলে এই নির্বাচন ১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় এবং বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দল সারা দেশে অভূতপূর্ব বিজয় লাভ করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর্তমানবতার সেবায় রেড ক্রস সোসাইটির কার্যক্রমকে পূর্ব থেকেই জানতেন এবং অনেক পছন্দ করতেন। তাই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁরই স্নেহভাজন,ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহোচর, ১৯৭০ সালে ভোলা সাইক্লোনে ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ ও বিতরণ কার্যক্রমে অন্যতম বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা গাজী গোলাম মোস্তফা, এমপি -কে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটির প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। তিনি ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) এর কার্যক্রমকে আরো জোরদার এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষম জাতি গঠনে ঐতিহাসিক নজির স্থাপন করেছেন। ঘূর্ণিঝড়,বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জীবন ও সম্পদহানি কমিয়ে আনার মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশকে সক্ষম করে তুলতে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যে দিকনির্দেশনা ও ভিষণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখিয়ে গেছেন তারই ধারাবাহিকতায় তাঁর সুযোগ্যা কন্যা দেশরতœ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফল বাস্তবায়ন করে পৃথিবীর ইতিহাসে ‘মানবতার জননী’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন।
১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা এবং ধ্বংসযজ্ঞ দেখে বঙ্গবন্ধুর হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল এবং তিনি উপকূলীয় এলাকার অসহায় মানুষের সেই ভয়াবহতার কথা কখনো ভুলে যাননি। তাই বঙ্গবন্ধু লীগ অব রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং বাংলাদেশ রেড ক্রসের সহায়তায় ঘূণিঝড় প্রস্তুত কর্মসূচি (সিপিপি) গঠনের প্রক্রিয়ায় জোরালো সমর্থন জানান। ‘সিপিপি’ শুরু করার সাথে সাথে একটি কার্যকর ও টেকসই কর্মসূচি গ্রহণে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির উপায় বের করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একটি সমীক্ষা চালানোর নির্দেশনা প্রদান করেন। এই সমীক্ষায় একটি কমিউনিটিভিত্তিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম তৈরির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। এই কার্যক্রমে তরুণ ও যুব সমাজ হবে প্রধান চালিকা শক্তি।
সরকারি নথি থেকে দেখা যায় যে, প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)’-কে সমর্থন ও সহায়তা দান বঙ্গবন্ধুর একটি সাহসী উদ্যোগ ছিল। আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের আর্থিক সঙ্কটের প্রাক্কালে স্বাধীন বাংলাদেশের মাত্র এক বছর ছয় মাস বয়স অতিক্রমকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি’ (সিপিপি)’র কার্যক্রম অক্ষুণ্ন রেখে অর্থনৈতিক বাধা কাটিয়ে উঠতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত রাখেন।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা চালান। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি বিশেষ করে দেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি, লাখ লাখ ঘরবাড়ি ও সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
১৯৭২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চর হেয়ারে কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবকের উপস্থিতিতে তৎকালীন ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মাননীয় মন্ত্রী এবং স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মতিউর রহমান ও বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফা,এমপি এবং মানবতাবাদী সুইস ডেলিগেট মিঃ ক্ল্যাস হেগস্টম ( যিনি সিপিপি কার্যক্রম নিয়ে প্রথম জরিপ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন) এর উপস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। এক বছরান্তে লীগ অব রেড ক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ ৩০ জুন ১৯৭৩ সালে মাঠ পর্যায়ে কর্মসূচির আর্থিক সহযোগিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে এর দায়িত্বভার গ্রহণের অনুরোধ জানায়। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)’র জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আর্থিক সহযোগিতার অঙ্গীকার এবং ওয়ারলেস ও বাংলাদেশ বেতারের মাধ্যমে সরাসরি স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি উদ্দীপনামূলক বক্তৃতা ও উদাত্ত আহবান ২০,৪৩০ জন স্বেচ্ছাসেবককে মানবিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করে, যা এখনো চলমান। বর্তমানে সিপিপি’র প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক সংখ্যা ৭৬,১২০ জন যার অর্ধেকই নারী।
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস শুধুমাত্র উপকূলীয় অধিবাসীদের জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি সংঘটিত করে না, সেই সাথে সমগ্র দেশের অর্থনীতির উপরেও এক বিরাট নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানী ও ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটির সহায়তায় উপকূলীয় অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে উঁচু মাটির ঢিবি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করেন। যেখানে মানুষ নিজে ও তাদের গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে আশ্রয় নিতে পারে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদেশে নির্মিত মাটির দুর্গ যা স্থানীয়ভাবে ‘মুজিবকিল্লা’ নামে পরিচিত। সাধারণতঃ চর অঞ্চলের ১-৪ একর সরকারি খাস জমি বা বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে স্থানীয় বিত্তশালীদের দানকৃত জমিতে ‘মুজিবকিল্লা’ নির্মাণের লক্ষ্যে এর সংলগ্ন একটা পুকুর/দিঘি খনন করা হয়। উপকূলীয় এলাকার চর অঞ্চলে শুস্ক মৌসুমে সুপেয় পানির প্রচন্ড অভাব দেখা দিতো। ‘মুজিবকিল্লা’ সংলগ্ন পুকুর/দিঘির পানি সে অভাব অনেকটা পূরণ করতো। ‘মুজিবকিল্লা’ ও এর সংলগ্ন পুকুর/দিঘির পাড়ে নারিকেল, খেজুর, তাল, সেগুন, করই, কলা, পেঁপে গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়। যা পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত হতে দেশকে রক্ষা করতে সহায়তা করেছে।
১৯৭৩-১৯৭৪ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৯৯৫ কোটি টাকা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের পুনর্বাসনের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যেভাবে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন সেটি ছিল ঐতিহাসিক এবং সাহসী পদক্ষেপ।
১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের অনুষ্ঠিত সাধারণ পরিষদের সভায় তিনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তার চিন্তা ভাবনা তুলে ধরে বাংলায় নাতিদীর্ঘ ভাষণ দান করেন। পরে হলেও জাতিসংঘ বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবের আলোকে ‘ইউএনডিআরআর’ কার্যক্রম গ্রহণ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর এই পথিকৃতের ভূমিকা পালনের কারণে বাংলাদেশ আজ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিশ্বের স্বীকৃতি পেয়েছে।
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশেষতঃ উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণের মাঝে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কবার্তা প্রচার,উদ্ধার ও অনুসন্ধান প্রাথমিক চিকিৎসা, আশ্রয়দানসহ স্থানীয়ভাবে মোকাবিলা প্রস্তুতি, ত্রাণ ও পূনর্বাসন কার্যক্রমের মাধ্যমে দুর্যোগে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক অনুমোদিত ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) বর্তমানে বিডিআরসিএস এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায় কাজ করছে। এটি বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যৌথ কর্মসূচি হিসেবে আর্ত মানবতার সেবায় পরিচালিত হচ্ছে।
জাতির পিতার নির্দেশিত পথে দক্ষ জনবল ও স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে দুর্যোগে পূর্ব প্রস্তুতির কারণে জীবন-সম্পদ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায়, সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি এবং নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে বিশেষ অবদান রাখছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর “সোনার বাংলা”, বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ মানবতার জননী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং ২০৪১ সালে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করবে। এজন্য সকলকে সততা, আত্মবিশ্বাস, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সাথে দেশ এবং জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মতো বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনবান্ধব নেত্রী শেখ হাসিনাও অধিকতর গুরুত্বারোপ ও অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। ২০১৮ সাল হতে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে ও ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতি উপজেলায় বছরে দুইবার (৩১ মার্চ জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস ও ১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস) জাতীয় পর্যায়ে একজন পুরুষ ও একজন নারী স্বেচ্ছাসেবক নির্বাচিত করে তাদেরকে পুরস্কৃত ও সম্মানিত করা হয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ১৩ অক্টোবর-২০২২ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২২’। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য “ঊধৎষু ধিৎহরহম ধহফ বধৎষু ধপঃরড়হভড়ৎ ধষষ” দুর্যোগ প্রশমনে প্রতিপাদ্যটি সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।
মানব জাতির অস্তিত্ব রক্ষা ও জাতীয় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার কঠিন সংগ্রামে চলমান কোভিড-১৯ অতিমারির মধ্যেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এখন দুর্যোগ ব্যব¯’াপনায় বাংলাদেশ বিশ্বে আদর্শ। আর্ত-মানবতা ও জনসেবায় অবদান রাখার জন্য জাতিসংঘের সম্মানজনক ‘জাতিসংঘ জনসেবা পদক-২০২১’ পেয়েছে দুর্যোগ ব্যব¯’াপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে ‘এসডিজি অর্জনে জেন্ডার-রেসপন্সিভ সেবা’ ক্যাটাগরিতে এ পদক পেয়েছে। গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে জাতিসংঘ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ পদক হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিলো আত্মার বন্ধন। যুদ্ধবিধ্ধস্ত দেশ গঠনে আইসিআরসি ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের সহযোগিতার কথা তিনি কখনো ভুলে যাননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারিদের কু-প্ররোচনায় একদল বিপদগামী বিশ্বাসঘাতক সেনাসদস্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে তাঁর মরদেহ পিতৃনিবাস টুঙ্গিপাড়ায় দাফনের জন্য পাঠায়, তখন তাঁরই গর্ভধারিণী মায়ের নামে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত শেখ সাহেরা খাতুন রেড ক্রস হাসপাতালের ৫৭০ সাবান ও নার্সদের ডিউটিকালীন সময়ে ব্যবহারের জন্য পাঠানো সাদা শাড়ী কাফনের কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য যে, ঐ সময়ে টুঙ্গিপাড়ায় এতো দোকানপাট ছিলোনা, কিছু থাকলেও হায়েনাদের ভয়ে ও কার্ফুর কারণে সব কিছুই বন্ধ ছিলো।
বঙ্গবন্ধু মুজিব চিরঞ্জীব- মুজিব অমর।
কবির ভাষায়, ‘এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ, মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান’।
তাইতো উপমহাদেশের প্রখ্যাত কবি ও প্রশাসক অন্নদা শঙ্কর রায় বলেছেন, ‘যতোদিন রবে পদ্মা, মেঘনা/গৌরি যমুনা বহমান,
ততোদিন রবে কীর্তি তোমার/শেখ মুজিবর রহমান’।জয় বাংলা – জয় বঙ্গবন্ধু।
- প্রবন্ধে ব্যবহৃত ছবিসমূহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: দৈনিক ইত্তেফাক, প্রখ্যাত ফটো সাংবাদিক জনাব আব্দুর রশিদ তালুকদার ও সিপিপি’র সাবেক পরিচালক জনাব হারুন-অর-রশিদ।
লেখক:
মোঃ নূর ইসলাম খান অসি
পরিচালক- ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
মোবাঃ ০১৮১১-৪৫৮৫৪৫ ও ০১৭১১-৫৮৫৮৭৫ ।