শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

নারী ফুটবল দলের হিমালয় জয়

--পীযূষ কান্তি বড়ুয়া--

নারী ফুটবল দলের হিমালয় জয়
অনলাইন ডেস্ক

ফুটবল খেলাকে আগে পুরুষদের জন্যে প্রযোজ্য মনে করা হলেও ধীরে ধীরে তা নারীদের জন্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের নারীদের বেশ বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং আজও হচ্ছে। বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের সামনে বাধা হয়ে আছে সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা আর দারিদ্র্য। আজও এ সমাজে নারীকে সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র এবং জৈবিক চাহিদা পূরণের সঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমরা আজও নারীর পোশাকের দৈর্ঘ্য মেপে দিন ক্ষয় করি, যেখানে বিশ্বে নারীরা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। নারীরা ফুটবল খেলা মানেই পরকালে নরকে যাওয়ার টিকেট নিশ্চিত করা, সমাজের অধিকাংশ মানুষের কাছে এটাই আজও বদ্ধমূল ধারণা। পাশাপাশি দারিদ্র্য তাদের অভিভাবকদের ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখে এবং খেলোয়াড়দের শারীরিক দক্ষতায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এসবকে জয় করে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা তবুও খেলার মাঠে নেমে নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দেয় কেবলমাত্র লাল-সবুজের পতাকার মানকে সমুন্নত রাখার জন্যে।

২০১০ সালে দক্ষিণ এশীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বড় আসর সাফ গেমসে নারীদের ফুটবল অন্তর্ভুক্ত হয়। বাংলাদেশের নারীদল নেপালের কাছে ২০১০ সালে ১-০ ব্যবধানে হেরে যাত্রা শুরু করলেও ধীরে ধীরে তারা নিজেদের জাত চেনাতে শুরু করে। মূলত নারী ফুটবলের এই জাগরণের সূচনা হয় ২০১০ সালের বঙ্গমাতা বালিকা ফুটবল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। প্রায় চৌষট্টি হাজার কন্যাশিশু এই খেলায় অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্য থেকেই বের হয়ে আসে আমাদের সেরা প্রতিভাগুলো। এর পাশাপাশি ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামের স্কুলটি হয়ে ওঠে নারী ফুটবলার তৈরির কারখানা। তারা মারিয়া মান্দার নেতৃত্বে অনূর্ধ্ব ১৯ নারী ফুটবল দলের আন্তর্জাতিক সাফল্যের মাধ্যমে এদেশকে জানিয়ে দেয় নারী ফুটবল দলের সম্ভাবনার কথা। কলসিন্দুর স্কুলের সহকারী শিক্ষক ও কোচ মফিজউদ্দিন, স্কুল দলের ম্যানেজার আরতী রাণী সরকার ও নারী ফুটবল দলের প্রধান প্রশিক্ষক গোলাম রাব্বানী ছোটনের অবদানে বাংলার দামাল মেয়েরা আজ জয় করেছে সাফ ফুটবলের শীর্ষ।

ষষ্ঠ সাফ নারী ফুটবলে বাংলার বীর নারীরা মালদ্বীপকে ৩-০, পাকিস্তানকে ৬-০, ভারতকে ৩-০, ভুটানকে ৮-০ গোলে হারিয়ে উঠে যায় ফাইনালে। উত্তেজনাকর ফাইনালে হিমালয়কন্যা নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে বাংলার মেয়েরা করে স্বর্ণজয়।

তাদের এ স্বর্ণজয়ের কাহিনী যত সহজ মনে হচ্ছে তা আসলে তার চেয়ে বেশি কঠিন। এই কঠিন বন্ধুর পথে হাঁটতে গিয়ে পদে পদে রক্ত ঝরেছে মেয়ে খেলোয়াড়দের পা থেকে। কিন্তু তবু কৃষ্ণা, সানজিদা, সাবিনা, মারিয়া, মাসুরা, ঋতুপর্ণা, রূপনা, আনা মগিনি, আনুচিং মগিনিরা হার মানেনি, পিছিয়ে আসেনি। তাদের এই প্রত্যয় আজ আমাদের এনে দিয়েছে প্রথম সাফ শিরোপা।

যারা শিরোপা নিয়ে দেশে আসবে তাদের চাহিদা ছিলো অতি অল্প। লড়াকু সানজিদার অনলাইনে দেয়া স্ট্যাটাসের কথাগুলো মানুষের মনে দ্রুত বিঁধে যায়। ছাদখোলা বাস তৈরি হয়ে যায় শেষমেষ। কিন্তু তবুও কয়েকটি ঘটনা আমাদের মনকে বেদনায় ভারাক্রান্ত করে তোলে। কৃষ্ণার মাথা কেটে গিয়ে তাতে সেলাই দেয়া, বিমান বন্দরে তাদের ব্যাগ হতে হতে ডলার চুরি যাওয়া এবং সংবাদ সম্মেলনে কোচ ও অধিনায়ককে দাঁড় করিয়ে রাখা জাতি হিসেবে আমাদের বর্বরতাকেই প্রকাশ করে। যে মেয়েরা খেলতে গেছে দেশের জন্যে, এদেশের এবং এ সমাজের কীট দুষ্ট মানুষেরা তাদের পরিবারকে দোজখে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু সাফল্যের শক্তি মহৎ। সেই শক্তির বলেই তাদের কঠোর জবাব দিয়ে মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে নারী খেলোয়াড়দের নানী-দাদীরা।

বাংলার নারীদের এই শিরোপা জয় আজ কেবল শিরোপাতে সীমাবদ্ধ নেই। ইরানে যেমন মাশা আমিনি নারীমুক্তির দূত হয়ে উঠেছে, তেমনি বাংলাদেশেও নারী ফুটবল দল হয়ে উঠেছে নারী প্রগতির শক্তিসুধা। আজ বাঙালি মায়েরা তাদের কিশোরী মেয়ের মুখে সাবিনা-কৃষ্ণা-রূপনার ছবি দেখে। এই মেয়েগুলো ফুটবল খেলেই পরিবারের দারিদ্র্য বিমোচনের পবিত্র সুযোগ পেয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘর করে দিবেন রূপনাকে, মাসুরার ঘর বা ভাঙার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সেনাবাহিনীর আর্থিক পুরস্কারে মিটে যাবে তাদের আর্থিক দৈন্য। হয়তো বা এদের চাকরি হয়ে যাবে কর্পোরেট হাউজগুলোতে। এভাবেই নারীদের বিজয়রথ এগিয়ে যাবে ভবিষ্যতের ঊর্ধ্বপানে।

ইরান আজ কর্তিত মাথার কেশ দিয়ে পতাকা বানিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে নারীমুক্তির বাণী। তেমনি বাংলার সাবিনা-সানজিদা-কৃষ্ণারা আর প্রতীক হয়ে উঠেছে বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে স্বপ্ন জয়ের। ধীরে ধীরে নারী ফুটবল দল হয়ে উঠেছে সম্মানের প্রতীক, বিপ্লব-বিদ্রোহের প্রতীক। পরকালের স্বর্গ-নরক নয়, বর্তমানের সাফল্যই হোক আমাদের ভবিষ্যতের বাধার বিন্ধ্যাচল টপকানোর অমৃত শক্তি। জয় বাংলা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়