মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া, স্ত্রীর আত্মহত্যা
  •   ভারতকে কড়া বার্তা শ্রম উপদেষ্টার
  •   আধুনিক নৌ টার্মিনাল প্রকল্প পরিদর্শনে চাঁদপুরে নৌপরিবহণ উপদেষ্টা
  •   ডাকাতিয়া নদী ও সিআইপি অভ্যন্তরস্থ খাল খননসহ ৫ দফা দাবিতে সংগ্রাম কমিটির সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

বিদ্যমান শোষণমূলক সমাজব্যবস্থায় রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবীদের উদ্বেগ!

শোষণ মুক্তিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

অধ্যাপক মোঃ হাছান আলী সিকদার

শোষণ মুক্তিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
অনলাইন ডেস্ক

যে প্রত্যয় বা চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তা থেকে বাংলাদেশ অনেক দূরে সরে গেছে। এর জন্যে কেবল রাজনীতিকরাই নয়, লেখক বুদ্ধিজীবীরাও দায়ী। অনেকেই বলেননি, বলছেনও না যে আমরা স্বপ্নের বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছি না। বললেও বলছেন মৃদু কণ্ঠে। স্বপ্নটা ছিল একটি যথার্থ গণতান্ত্রিক সমাজ-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ছিল সমাজতন্ত্রের অভিমুখে যাত্রার, অর্থাৎ সম্পদের ব্যক্তি মালিকানার জায়গাতে সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করার। রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব ছিল এই অগ্রযাত্রার জন্য রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রস্তুতিতে সাহায্য করা। সেটা তাঁরা করতে পারেননি। স্বাধীন দেশে উন্নতি অবশ্যই হয়েছে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মানতেই হবে, যত উন্নতি হয়েছে ততই আয় বৈষম্য বেড়েছে। দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার হয়েছে। কর্মসংস্থান জনসংখ্যাবৃদ্ধির তুলনায় তেমন বাড়েনি। শোষণ ও শাসন বেড়েছে। দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যে আশা ১৯৭১ সালে ছিল, সেটা ক্রমাগত কমেছে। আমাদের আশা ছিল দেশ রাষ্ট্রীয় মূল চারনীতি তথা সর্বোপরি সমাজতান্ত্রিক পথে এগোবে। কিন্তু সে পথে না গিয়ে উল্টো-পথ ধরলো। কোনো সমাজব্যবস্থায় বৈষম্য থাকলে শোষণ প্রক্রিয়াও চলমান থাকে। অর্থাৎ বৈষম্যমূলক সমাজ শোষণের হাতিয়ার। পুঁজিবাদী সমাজ বা রাষ্ট্রব্যবস্থায় বৈষম্য সৃষ্টি হতেই থাকে। আর বৈষম্য থাকলে শোষণও চলতে থাকে। বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয়। ওদিকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে সমাজতন্ত্রের যে পতন ঘটেছে এটা অপ্রিয় সত্য। এর প্রধান কারণ হচ্ছে পুঁজিবাদের দৌরাত্ম্য। পুঁজিবাদ ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদে রূপ নিয়েছে। টিকে থাকবার জন্যে যতো রকমের তৎপরতা ও কৌশল গ্রহণ সম্ভব সব করছে।

আমাদের দেশে কি ডান কিংবা বাম ধারার কতেক রাজনীতিক এবং বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একটা উদ্বেগ লক্ষ্য করা যায়। তারা প্রায় এই বলে আক্ষেপ করেন যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেশ থেকে বিচ্যুত হচ্ছে প্রায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে দেশ থেকে বিচ্যুতি বা লোপ পেতে বসেছে কথাটা অপ্রিয় সত্য। আলাপ-আলোচনায় এবং পত্র-পত্রিকায় এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নানাভাবে, যার যেমন খুশি বা সুবিধা তেমন করে উপস্থাপন করে থাকেন। কেউ বলেন এই চেতনা ‘অসাম্প্রদায়িকতা’, কেউ বলেন এই চেতনা ‘মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি ধ্বংস করা’, কেউ বলেন এই চেতনা ‘মৌলবাদকে নির্মূল করা’, আরো বলেন ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা’ ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে কি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা এইগুলো? তবে না; আসলে ঐগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপসর্গ মাত্র। নানা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর নানাবিধ সংজ্ঞায়নের ধূ¤্রজালের আড়ালে বেমালুম হারিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আর তাই এত উদ্বেগ বা হতাশা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আসলে একটি শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ ও দেশ গঠন প্রক্রিয়া।

মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণা ছিল বাংলাদেশের জনগণকে শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। জাতির ওপর জাতির মানুষের ওপর মানুষের শোষণ-বঞ্চনার অবসান করা। আমাদের অভিযোগ ছিল পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠী আমাদের উপর বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। আজ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পরও ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, সে ব্যাধির আছর থেকে আমরা আদৌ মুক্তি পেলাম না; সেটাই আমাদের হতাশা কিংবা উদ্বেগের কারণ। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত-বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা গেল না। সেটাই আক্ষেপের কারণ। বাদবাকি সব রোগের লক্ষণ মাত্র। এই লক্ষণগুলোই অনেককে বিচলিত করে। মূল রোগের দিকে অনেকেই চোখ রাখেন না।

শোষণ মুক্তিই যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তা বুঝা গেছে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের ঘোষণা থেকেই। যদিও সে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের এবং তাদের অনুসারীদের কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবে রূপ দেয়া তাদের যেমন ইচ্ছাও ছিল না তেমন তা বাস্তবায়নে প্রস্তুতও ছিলেন না। লোক দেখানোর জন্য হলেও সে সরকার শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সংকল্প ব্যক্ত না করে পারেননি। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির প্রথম সম্মেলন (১৯৭৪)-এর সভাপতির ভাষণে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মাযহারুল হক সে সময়ের বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে মূল্যবান কিছু কথা বলেন। তাঁর পুরো বাংলা ভাষণটি Political Economy, Vol. 1. (Conference 1974)- এ পৃষ্ঠা (১-১১) মুদ্রিত। ভাষণটির একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরেই লুটতরাজ যেমন চলছে, তার সাথে সাথে সমাজতন্ত্রের দাবি, শোষণহীন সমাজব্যবস্থার শপথ সমান সমান চলছে।’ এরপর তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কি সোসালিস্ট পার্টি? এদের যে পার্টি ক্যাডার রয়েছে, তাদের কার্যকলাপ নিতান্তই সমাজতন্ত্রবিরোধী। অথচ আওয়ামী লীগ কেন যে, সোসালিজম চাই বলল, সেটা আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না। এটা কি প্রহসন? প্রবঞ্চনা? না প্রহেলিকা? ইত্যাদি’ (পৃঃ ৯) তিনি এও লক্ষ করেন, ‘আমাদের শাসক গোষ্ঠী যেমন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্পূর্ণ অযোগ্য তেমন আমাদের পরিবেশও অনুপযুক্ত’। তিনি আরও বলেন, ‘বস্তুত গত দু’বছরে সমাজকে শোষণহীন করার নামে লুণ্ঠন চলেছে এবং দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে।’ (পৃঃ ৭) মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর আজও তাই চলমান।

আওয়ামী লীগ ‘সোসালিস্ট পার্টি’ ছিল না সত্য কিন্তু সেদিন ‘সমাজতন্ত্র’ চাই ভিন্ন অন্য কোনো স্লোগান দেয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। সাধারণ জনগণ হয়তো সমাজতন্ত্র বুঝে না, কিন্তু ‘শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা’ ঠিকই বুঝে। শতাব্দীর পর শতাব্দী এ দেশের সাধারণ জনগণ শোষণ বঞ্চনার নানাবিধ উপসর্গের শিকার। সমাজতন্ত্র শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের পদ্ধতি। শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের কথা ইসলামও বলে। দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ ধর্মভীরু মুসলমান এটিই বুঝে। এ বিষয়টি মাথায় ছিল বলেই ছয় দফায় দেশের স্বাধীনতা বিষয়ে যেমন স্পষ্ট কিছু বলা ছিল না, তেমনি ‘সমাজতন্ত্র বা অসাম্প্রদায়িকতা’ বিষয়েও কোনো কথা ছিল না। যুদ্ধকালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন (টঝঝজ) বাংলাদেশের পক্ষে উপর্যুপরি ভেটোর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আওয়ামী লীগকে ‘সমাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার স্লোগান দিতে বাধ্য করেছিল; আর ভারতের সশস্ত্র সহযোগিতা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা তথা অসাম্প্রদায়িকতা’ উল্লেখ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং কিছু বামপন্থী নেতা আজও ক্রমাগত সে দাবি করে যাচ্ছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সময়ের দাবি ‘সমাজতন্ত্রের’ স্লোগান দিলেও কাজ করেছিল পুরানো স্টাইলে অর্থাৎ উল্টো। আজ ভারতের বিজেপি সরকার তাদের সংবিধানের ‘অসাম্প্রদায়িক’ চেতনা ছুড়ে ফেলে উগ্র-হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক নীতির পথে হাঁটছে।

আজকের আওয়ামী লীগ একদিকে বাজার অর্থনীতিকে গ্রহণ অন্যদিকে মৌলবাদীদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সাথে তাদের পার্থক্যকে মুছে দিয়ে চিরায়ত রূপে আত্মপ্রকাশ করছে। বর্তমান পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বভঙ্গিতে আওয়ামী লীগের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করা সম্ভব হলেও সেদিন তা সম্ভব ছিল না। তাই আওয়ামী লীগ ‘সোসালিস্ট পার্টি’ না হওয়া সত্ত্বেও কাজে কর্মে না হলেও স্লোগানে অন্তত মুক্তিযুদ্ধের শোষণ ও বৈষম্য নিরসনের চেতনাকে সে দিন জনসমক্ষে তুলে ধরতে বাধ্য হয়েছিল। আজকের রাশিয়া সে সময়ের সোভিয়েত রাশিয়া নয়। তেমনি আজকের আওয়ামী লীগ সেই আওয়ামী লীগ নয়। নানা চড়াই-উতরাইয়ে ৫০ বছর পার হওয়ার পর আজ সে চেতনা মুমূর্ষু। মুমূর্ষের ভার আওয়ামী লীগ নেবে কেন? আর এ লাশ তো তাদের নয়, একে নিয়ে তারা মিছিল করবে বা আন্দোলন চালাবে।

মুক্তিযুদ্ধে পুঁজিবাদী ভারতের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও যুদ্ধজয়ের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘সমাজতন্ত্র’কে আওয়ামী লীগ একটি উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলো। এর মধ্যেই আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বের সার্থকতা এবং এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধের বিজয় বাঙালির নিজস্ব বিজয় বলে চিহ্নিত। নতুবা মুক্তিযুদ্ধ ’৭১-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়তো হয়ে যেত যে দ্বিজাতিতত্ত্ব’র ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাকে নাকচ করার ভারতের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন মাত্র। বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দুটি বিষয় বা কথা প্রমাণ করতে চেয়েছিল। প্রথমত, বাঙালি কোনো বহিঃশক্তির নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ করেনি এবং মুক্তিযুদ্ধে বিজয় একান্ত তাদেরই অর্জন। আর দ্বিতীয়ত, জনজীবনে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে বাঙালি একটি স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে আবির্ভূত হতে চেয়েছিল, যা এই উপমহাদেশে আর কোনো জাতি পারেনি। কিন্তু এর কর্মফল এমনই দাঁড়াল যে, তারা এর কোনোটাই কাঙ্ক্ষিত বাস্তবায়ন করতে পারলো না। কারণ আওয়ামী লীগ কোনো দিনই সমাজতান্ত্রিক দল নয়। উপরন্তু বর্তমানে পৃথিবীর কোথাও সমাজতন্ত্র বলতে যা বুঝায় তা নেই।

বর্তমানে দেশে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকট চলছে তার মূলেও এই বৈষম্য ও শোষণমূলক ব্যবস্থাটাই দায়ী। ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশের মানুষকে শোষণ করা যায়। বিদ্যমান ব্যবস্থায় ক্ষমতার বাইরে থাকলেও তা পারা যায়। তবে ক্ষমতায় যেতে পারলে বাড়তি সুবিধা আছে। দেশটি যেহেতু নির্ভরশীল পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা বা অনেকটা বিদেশী সাহায্যনির্ভর, দেশের মানুষকে শোষণ করার সুবিধা দুনো। উন্নয়নের নামে ঋণ করা যায় ও দেশের লোকের দারিদ্র্য দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা আনা যায় এবং আত্মসাৎ করা সহজ হয়। এমনকি অহেতুক প্রশংসাপত্রও বিদেশিরা দিয়ে থাকে। যদি সত্যিকার অর্থেই দেশে শোষণের ও আধিপত্যের অবসান হতো তবে সমাজে দায়িত্বশীলতাণ্ডজবাবদিহিতাও প্রচলন হতো। আর ক্ষমতা নিয়ে এত কাড়াকাড়িও হতো না। ক্ষমতায় গিয়ে যে যা খুশি তাই করতে পারে বলেই সবাই ক্ষমতায় যেতে চায়। উন্নত দেশের মতো দেশের বাইরের ভিন্ন দেশে শোষণমূলক আচরণ না করতে পারলেও দেশের ভেতর জনগণকে তা পারছে। ফলে বিশ্বাসের সংকটে দেশ আজ এমনই নিমজ্জিত যে, বিরোধী দল নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাচ্ছে, তেমন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যদি তারা হেরে যায়, তবে সে ফলাফল তারা মানবে বলে মনে হয় না। বর্তমান সরকারি দলও হেরে গেলে তা মানবে না। অতীত-অভিজ্ঞতা তা-ই বলে দেয়।

রাজনীতি যদিও অর্থনীতির নির্দেশেই চলে, কিন্তু অর্থনীতির পরিবর্তন আনাটা হচ্ছে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও দায়িত্ব। কারণ রাষ্ট্রই পাহারা দিচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে। পাহারাটাকে বদলাতে হলে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বদলাতে হবে। সেটা অবশ্যই একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের ভিতর দিয়ে ঘটবে। কিন্তু সমাজ বিপ্লবের রাজনৈতিক আন্দোলন সফল হবে না যদি না উপযুক্ত রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি থাকে। একাত্তর যা করেছে সেটা হলো সাতচল্লিশের দেশভাগের যে অন্যায় সেটাকে নাকচ করেছে। একাত্তর ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের জয় ঘটেছে এবং তদবিপরীতে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সেটা একটা বড় অর্জন এবং ইতিহাসে বিরল।

ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নিয়ে আমরা আশাবাদী। সেটা কেবল ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নয়, এ কারণেও যে সমাজ-পরিবর্তনের বস্তুগত শর্তগুলো পূরণ হচ্ছে, মানুষ কেবল যে শোষিত ও অসন্তুষ্ট তা নয়, অধিকাংশ মানুষই বিদ্যমান ব্যবস্থার বিপক্ষে নতুন ব্যবস্থার পক্ষে। মানুষ সচেতন হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণদের ভেতর সচেতনতা বাড়ছে। তাদের বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করবার বহু আয়োজন রয়েছে, কিন্তু তার মধ্যেও বহু তরুণ বুঝতে পারছে যে, বিদ্যমান ব্যবস্থায় তাদের মুক্তি নেই। এই তরুণরাই কিন্তু একাত্তরে যুদ্ধ করেছে এবং সব দিক দিয়ে সুসজ্জিত ও সুসংগঠিত মস্তবড় একটি হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করেছে।

লেখক পরিচিতি : অধ্যাপক মোঃ হাছান আলী সিকদার, সভাপতি, চাঁদপুর জেলা জাসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা, চাঁদপুর জেলা শিক্ষক নেতা, সমাজ ও রাজনীতিবিশ্লেষক।

তথ্য সহায়ক :

১. বুর্জোয়া রাষ্ট্রব্যবস্থার সংকট- রেহমান সোবহান, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী, ডিসেম্বর ১৯৮২

২. বাংলাদেশ : রাষ্ট্র ও সমাজ (সামাজিক অর্থনৈতিক স্বরূপ)- অনুপম সেন, অবসর প্রকাশনা সংস্থা, মে ২০১১

৩. বাংলাদেশে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাণ্ড প্রকাশক : স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি, ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯

৪. বাঙালির রাষ্ট্রচিন্তা ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়- ড. হারুন-অর-রশিদ, আগামী প্রকাশনী, ফেব্রুয়ারি ২০০৩

৫. লড়াই (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদণ্ডএর মুখপাত্র), ২১ জুলাই ২০২১

৬. বাংলাদেশের অভ্যুদয় : আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণ- মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, ইমপ্রেস পাবলিশার্স, মার্চ, ১৯৮৩

৭. বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি- অধ্যক্ষ মোঃ জহিরুল ইসলাম সিকদার, কনফিডেন্স প্রকাশনী, ফেব্রুয়ারি, ২০০৬

৮. এশীয় গবেষণা পত্রিকা (এশীয় গবেষণা কেন্দ্রের বার্ষিক জার্নাল), মে, ১৯৮৪

৯. নয়া দিগন্ত ৯ এপ্রিল ২০২২

১০. বাংলাদেশ প্রতিদিন ২৬ মার্চ ২০২১

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়