প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২২, ২৩:১৬
ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসেম্বলিতে চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের অংশগ্রহণ ও রাঙ্গামটি ভ্রমণ
রোটার্যাক্ট জেলা সংগঠন ৩২৮২ বাংলাদেশের উদ্যোগে সকল রোটার্যাক্টরের নতুন বছর, নতুন নেতৃত্বের জন্য দশম রোটার্যাক্ট জেলা অ্যাসেম্বলি ‘টেন আউট অব টেন’ ও পেসেটস-এর আয়োজন করা হয় চট্টগ্রামে। আয়োজনটি ছিলো মে মাসের ২০ তারিখ। কিন্তু তা পরিবর্তন করে একই মাসের ২৭ তারিখ শুক্রবার নেয়া হয়েছে। এর কারণে আমাদের ক্লাবের কিছু সদস্য খুশিও হয়েছে। কারণ ২৭ তারিখটি ২০ তারিখের চাইতে বেশি সুবিধাজনক হয়েছে ক্লাব মেম্বারদের পেসেটস, অ্যাসেম্বলিতে অংশগ্রহণ করার জন্য।
|আরো খবর
অ্যাসেম্বলি ও ১ দিনের ট্যুরে রাঙ্গামাটি ঘুরে আসার জন্য ক্লাব সদস্যরা তাদের চাকুরি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে শনিবার ১ দিনের ছুটি নিয়েছেন।
যাত্রা শুরুর কয়েক দিন আগে থেকে : অ্যাসেম্বলি ও রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্য যাত্রার আগে ক্লাবের আইপিপি দেলোয়ার হোসেন সুমন ভাই কয়েকদিন ধরে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে হোটেল বুকিং, ঘোরাঘুরি সংক্রান্ত বিভিন্ন আপডেট এবং প্রয়োজনীয় জিনিস নেয়া থেকে শুরু করে সব থেকে বড় বিষয় ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে যেতে বলেছেন। এটা দেখে আমি বললাম, আমার তো ভোটার আইডি কার্ড নেই, সরকার এখনো আমাকে ভোটার আইডি কার্ড দেয়নি। জন্মনিবন্ধন নিলে কি হবে ? এটা দেখে ক্লাবের এক সদস্য হেসে দিলো। পরে সুমন ভাই বললো, জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি নিলেই হবে (৪ বছর হয়ে গেলো এখনও ভোটার আইডি কার্ডটা পাচ্ছি না।)যাত্রা শুরুর দিন : যেদিন আমরা ক্লাবের সদস্যরা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করবো, তার আগের দিন হঠাৎ গ্রুপে ছবি দেখি, বন্ধু প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট শাহরিয়ার খান হিমেল এবং রাকিব দুজনে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করেছে এবং ক্লাবের আরো দুজন মেম্বার নিশাত ও নয়ন আগে থেকেই চট্টগ্রাম অবস্থান করছিলো। মনে মনে ভাবলাম, সবার তো একসাথে যাওয়ার কথা ছিলো। এখন চট্টগ্রামে একত্রে যাওয়ার সদস্য সংখ্যা কমে গেলো। (মনটা একটু খারাপ লাগলো)।
পরে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হলো, রাত দুটোয় বাস ছাড়বে, ১টার ভেতর সবাইকে বাস স্ট্যান্ড চলে আসার জন্য। রাতে যখন রওনা দিবো তখন হালকা বৃষ্টি পড়া শুরু হলো। ক্লাব সদস্য সাদিয়া আপুর সাথে যাওয়ার কথা ছিলো বাসস্ট্যান্ড, যখন বের হবো তখন তাকে ফোন দিলাম-কই আপনি ? তখন তিনি বললেন, নাজমুন নাহার আপুর সাথে চলে যাচ্ছি। পরে ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে ১টি রিকশায় উঠে বাসস্ট্যান্ডে সৌদিয়া বাসের কাছে পৌঁছলাম।
বাসের কাছাকাছি সুমন ভাইয়ের সাথে দেখা। পরে দুজনে বাসে উঠে দেখি দুজন নারী সদস্য নাজমুন নাহার আপু এবং সাদিয়া আপু আগেই এসে বসে আছে। আফজাল ভাই, কিরণ ভাই, প্রেসিডেন্ট নিলয় ভাই, রকি ভাই, আল-আমিন ভাই, নতুন সদস্য প্রিয়া এবং তার মা ও ভাই, সবার শেষে আমার বন্ধু ইয়াদগীর রুবেল আসলো।
দেরি করে বাস ছাড়া : বাস রাত দুটোয় ছাড়বে ছাড়বে করে ২০ মিনিট লেইট করে বাসটি ছাড়লো। যাত্রা পথে হাজীগঞ্জ রোটার্যাক্ট ক্লাবের কয়েকজন সদস্য উঠলো। বাসে খাওয়ার জন্য চিপস, বিস্কুট দিলো দায়িত্বসম্পন্ন বড় ভাইয়েরা, আল-আমিন ভাই কয়েকটি কাঠ বাদাম দিলো আমাকে। তার পাশে বসেই পৌঁছালাম চট্টগ্রামে এক ঘুমে। যদিও পথিমধ্যে ড্রাইভারের গালিগালাজ, অন্যান্য গাড়ির আওয়াজ সবই শুনতে পেলাম। কিন্তু যাত্রা বিরতিতে ক্লাবের ক’জন সদস্য বাস থেকে রেস্টুরেন্টে নেমেছিলো। তখন আর আমার নামার সুযোগ হলো না, তখন বাসে গভীর ঘুমে মগ্ন ছিলাম।বৃষ্টির ভেতর চট্টগ্রাম : সকাল ৬টায় বাসে করে যখন চিটাগাং পৌঁছি তখন বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। বাসে বসে বৃষ্টি ভালোই উপভোগ করলাম। মনে মনে ভাবলাম, বৃষ্টি যদি এরকম সারাদিন থাকে অ্যাসেম্বলি অনুষ্ঠানটি কীভাবে হবে। পরে যখন বাস থেকে চট্টগ্রামের একে খান মোড়ের রোডে নামি, তখন বৃষ্টি কিছুটা কমে গিয়েছিলো। পাশেই ছিলো বুকিং করা হোটেল সুপার ইন। ক্লাবের সদস্যরা মিলে হোটেলে যার যার ভোটার আইডি কার্ড, আমার জন্মনিবন্ধন এন্ট্রি করে রুমে প্রবেশ করলাম।
কে কোন্ রুমে : হোটেল সুপার ইন-এ নারী সদস্যরা এক রুমে ছিলো-নাজমুন নাহার আপু, সাদিয়া আপু এবং প্রিয়ার পরিবার। আমি ছিলাম ৪১৩ নম্বর রুমে। আমার সাথে ছিলেন প্রেসিডেন্ট নিলয় ভাই, বন্ধু রুবেল, আফজাল কাজী ভাই। আমার দুবন্ধু রাকিব এবং হিমেলকে মিস করেছি। প্রথমে ভেবেছিলাম তারা দুজন আমাদের জন্য হোটেলে অবস্থান করছে। পরে দেখি তারা হোটেলের আশেপাশেই নেই। তারা অন্য কোথাও উঠেছে। ৪০১-এ ছিলেন সুমন ভাই, রকি ভাই, কিরণ ভাই এবং হাজীগঞ্জ ক্লাবের দুজন সদস্য। যদিও তাদের আমাদের সাথে থাকার কথা ছিলো না। পরে তাদের রুমে জায়গা হয়নি দেখে সুমন ভাই কিছুটা রাগান্বিত হয়ে মন খারাপ করে চুপচাপ আমাদের রুমে চলে আসলেন। আমাদের সাথে রুম শেয়ার করলেন এবং সবাইকে বললেন ৯টা পর্যন্ত একটা ঘুম দাও। ঘুম থেকে উঠে সবাই নাস্তা সেরে অ্যাসেম্বলির উদ্দেশ্য রওনা দিবো। যেই বলা সেই কাজ। দেরি না করে সবাই একটি সুন্দর ঘুম দিলাম।
অ্যাসেম্বলির উদ্দেশ্য যাত্রা : ক্লাবের সদস্যরা হোটেলের পাশেই একটি রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলো নাস্তা খাওয়ার জন্য। সুমন ভাই এবং ইয়াদগীরের অ্যাসেম্বলিতে কাজ থাকার কারণে তারা নাস্তা না খেয়ে চলে গেলো। পরে অন্য সদস্যরা নাস্তা খাবো, কিন্তু হোটেলে কোনো ভাজি ছিলো না ডিম ওমলেট ছাড়া। পরে পরোটা, ডিম এবং নাস্তার শেষ পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট নিলয় ভাইয়ের স্যুপ অর্ডারের মাধ্যমে নাস্তা শেষ করে সকলে সিএনজি যোগে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি পৌঁছালাম। যেখানে ডিস্ট্রিক্ট রোটার্যাক্ট অ্যাসেম্বলি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
অ্যাসেম্বলিতে অংশগ্রহণ : অ্যাসেম্বলিতে আমরা অংশগ্রহণ করার পর চাঁদপুরের দু-একটি ক্লাবের সদস্যদের সাথে দেখা হলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হিলশা সিটি রোটার্যাক্টরদের সাথে। আমরা প্রথমে যখন অ্যাসেম্বলির অডিটোরিয়াম রুমে ঢুকি তখন হলটি পরিপূর্ণ ছিলো রোটার্যাক্টরদের সমাগমে। কোথাও বসার জায়গা ছিলো না (যদিও তখন অনুষ্ঠানটি শুরু হয়নি)। পরে হঠাৎ রোটার্যাক্টর তাহমিনা এবং তাদের ক্লাবের সদস্যদের সাথে দেখা। তখন তাহমিনা বললো, আপনারা এতো দেরি করেছেন কেন ? আপনারা জানেন না রেজিস্ট্রেশন ৭০০ প্লাস। পরে হাসা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না আমার। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দায়িত্বে থাকা সার্জেন্টরা চেয়ার এনে সবাইকে বসার ব্যবস্থা করে দিলেন এবং উপভোগ করতে থাকলাম বিভিন্ন সেশন, ছবি তোলাসহ বিভিন্ন কথাবার্তা বলে। সেই সময় নজর পড়লো বন্ধু হিমেল এবং রাকিবকে। হিমেল অ্যাসেম্বলিতে সার্জেন্টের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত ছিলো। সেশন ১ টায় শেষ হওয়ার পর নামাজ এবং খাবার বিরতি দেয়া হয় ৩টা পর্যন্ত। ৩টার পর দ্বিতীয় সেশন শুরু হয়। সেশন শেষ হওয়ার আগে নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়।
অ্যাসেম্বলিতে মেজবান খাবার : দুপুরের খাবারের দায়িত্বে ছিলো আমাদের সুমন ভাই, তার কথা অনুযায়ী নামাজ শেষ করে খাবারের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। আমি হিলশা সিটি রোটার্যাক্ট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট তাহমিনাকে ফোন দিয়ে তাদের ক্লাবের সকল সদস্যসহ আমাদের ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে দুপুরের মেজবান খাবার উপভোগের জন্য পৌঁছালাম। মেজবানে মুসলিমদের জন্য গরুর মাংস এবং অসুমলিমদের জন্য খাসির মাংস। গরুর মাংস যদিও আমার খুবই প্রিয়। ইদানিং এলার্জি থাকার কারণে গরুর মাংস বাদ দিয়ে চলি। কিন্তু যখন খেতে বসবো সুমন ভাইকে আশেপাশে পেলাম না, যদি গরুর মাংসের পরিবর্তে খাসির মাংস নেয়া যায়। তাকে না পেয়ে বাধ্য হয়ে ১ পিচ গরুর মাংস এবং ১ চামচ ভাত দিয়ে খাওয়ার কাজটা সারলাম। তখন উপস্থিত সদস্যরা বলাবলি শুরু করলো, আরে একদিন খান কিচ্ছু হবে না, খাবারটা খুব মজা হয়েছে। পরে খেয়ে উঠে দেখি লম্বা সিরিয়াল খাওয়ার জন্য, সকল রোটার্যাক্টর দাঁড়িয়ে আছে। তখন ক্লাব সদস্যদের ও তাহমিনাদের উদ্দেশ্য বললাম, দেরিতে খেলে এরকম অ্যানাকন্ডা লাইনে রৌদ্রে দাঁড়ানো লাগতো। তখন তাহমিনা বললো, ভাইয়া আপনাকে ধন্যবাদ। না হলে কী যে হতো।
খাওয়া দাওয়া শেষে ছবি তোলা : দুপুরের খাবারের পর ক্লাবের সদস্যরা ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম এবং অন্যান্য ক্লাবের সদস্যদের সাথেও ছবি তোলাসহ চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি উপভোগ করলাম। এর মধ্যে বন্ধু ইয়াদগীর এতোই কাজে ব্যস্ত ছিলো, তার খেতে খেতে বিকেল ৪টা বেজে গেছে, যখন খাবার প্রায় শেষ।
পুনরায় সেশনে অংশগ্রহণ : দুপুরে খাবারের পর বিভিন্ন সেশন উপভোগ করি। প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, সার্জেন্ট, ডিরেক্টরদের কার কী দায়িত্ব সে বিষয়ে কয়েকটি রুমে আলাদা আলাদা করে সেশন নেয়া হয়। চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে সাবেক সভাপতি রেজাউল ইসলাম রকি সকল ডিরেক্টরের সেশন নেয়ার সুযোগ পান। সেশনের পর পুনরায় আবার সকল রোটার্যাক্টর একই অডিটোরিয়ামে মিলিত হয়। সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে রোটার্যাক্টরদের নাম নেয়া হয় পার্টিসিপেট করার জন্য, হিমেল এবং ক্লাবের নতুন সদস্য প্রিয়া এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আগে : প্রিয়া ম্যাসেজ দিয়ে বলে, ভাই ড্যান্স করবেন? আমি বলি, কিসের ড্যান্স? এখানে পার্টিসিপেট করবেন ? আমি বলছি, না! প্র্যাকটিস ছাড়া পারবো না। আমি ভাবছি দুষ্টামি করছে। কিন্তু প্রথমে শুনলাম র্যাম শো হবে, হিমেল আর প্রিয়া করবে। চা খাওয়ার বিরতিতে বিকেলে ক্যান্টিনে মজা করতে ছিলাম সবাই মিলে। তখন বললাম, তুমি এই গানে নাইচো-আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’, হিমেল পারবে। ও বললো, আপনে করেন। আল-আমিন ভাই পাশে ছিলো। তিনি মজা করে বললেন, সুমন ভাইকে নেও। সুমন ভাই হেসে দিলো। পরে চা খাওয়ার পর আমি আর রাকিব বাইরে থেকে কিছুক্ষণের জন্য ঘুরে এসে হলরুমে বসি। তখনই শুরু হয়ে গেলো প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় প্রথমেই চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাব থেকে প্রিয়া আর হিমেলকে ডাকলো। আমি আর রাকিব তো বসে হাসাহাসি আর টেনশনও করতে ছিলাম। বলছিলাম, বন্ধু হিমেল পারবে নি! পরে দেখি প্রিয়া গিয়ে উপস্থাপকের কাছ থেকে কয়েক মিনিট সময় চেয়ে নিয়েছে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য। তখন আমি ভাবলাম, র্যাম শো প্রাকটিস করবে মনে হয়। পরে প্রতিযোগিতা শুরু হলো। একটি একটি করে ৩ মিনিটের চমৎকার প্রতিযোগিতা শেষে সবশেষে আসলো হিমেল এবং প্রিয়া জুটির র্যাম শো। কিন্তু অবাক করে দিয়ে তারা হাজির হলো সেই গান ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’ নৃত্য নিয়ে। আমি আর রাকিব তো টেনশনে অস্থির। যখন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে গানটা নাচের মাঝখানে মাঝখানে থেমে যায়। পরে নাচে একটু অসুবিধা হওয়ায় পরে গানটি পুরোপুরি ঠিক করে স্টেজে পারফর্ম করলো। পারফর্মটি ভালোই হয়েছে প্রিয়ার সহযোগিতায়। কারণ প্রিয়া আগে থেকেই নাচের স্টেপ জানতো। হিমেলকে সহযোগিতা করায় নৃত্যটি চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। তাদের এই প্রতিযোগিতায় রকি ভাই এবং কিরণ ভাই সাহস ও উৎসাহ দিয়েছে। পরে ফলাফলের সময় সকল প্রতিযোগীর মধ্যে তারা দুজন তৃতীয় স্থান অর্জন করে এবং দুজনেই আন্তর্জাতিক রায়েলা প্রোগ্রামে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অংশগ্রহণের জন্য সিলেক্টেড হয়েছে পুরস্কার স্বরূপ।
হিমেল দৌড়ে আমার এবং রাকিবের কাছে এসে উল্লাসে ফেটে পড়ে। তখন বললাম, বন্ধু তুই এটা কী দেখালি!কুত্তা পার্ক : বিকেল বেলা চা বিরতির সময় কিরণ ভাই একটা লোকের কাছে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই এখানে দেখার মতো কী আছে? তখন লোকটি বললেন, ভাই কিছু যদি মনে না করেন এখানে দেখার মতো কুত্তা পার্ক আছে। লোকটির কথা শুনে তো সবাই অবাক! পরে তারা সবাই মিলে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি পাশের বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘুরতে গিয়ে দেখে গেটের কাছে একটি কুকুর বসা। কী দেখতে গেলো আর কী দেখলো। তখন কিরণ ভাইয়ের এবং লোকটির কথা স্মরণ করে নাজমুন নাহার আপু ও সাদিয়া আপু মজা করে কুকুরকে উদ্দেশ্য করে আঙ্গুল দিয়ে-এই কুত্তা আর সাইনবোর্ডের দিকে আঙ্গুল ঘুরিয়ে এই পার্ক, কুত্তা পার্ক। বিষয়টি অনেক মজার ছিলো। তখন উপস্থিত সকলের অট্টহাসিতে কুকুরটি মনে হয় ভয়ই পেয়েছিলো। চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের অর্জন : অ্যাসেম্বলিতে একশ’ পারসেন্ট ক্লাব সদস্য রেজিস্ট্রেশন করায় প্রথমেই চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবকে মঞ্চে ডাকা হয় পুরস্কার (অ্যাওয়ার্ড) দেয়ার জন্য। আর পেসেটস্ এ বেস্ট এসিএলওর পুরস্কার অর্জন করেন চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রোঃ নিলয় দে।
অনুষ্ঠান শেষে যা শুনলাম : অ্যাসেম্বলি অনুষ্ঠান শেষে রাতের খাবার লুসা লুসা ওরশ্শে বিরানির প্যাকেট এবং মুরগির বিরানীর প্যাকেট নিয়ে ক্লাব সদস্যদের নিয়ে হোটেলে যাবো এমন সময় শুনি, ক্লাবের নতুন সদস্য প্রিয়া তার পরিবারসহ কোনো এক কারণে আজ রাতেই চাঁদপুর চলে যাবে। এছাড়া রকি ভাইয়ের চাঁদপুরে জরুরি কিছু কাজ থাকার কারণে এবং আল-আমিন ভাইয়ের অফিস খোলার কারণে রাতেই তারা চাঁদপুরের উদ্দেশ্য রওনা দিবে। এখন ৫ থেকে ৬ জন সদস্য কমে যাওয়ায় এবং ৪ জন সদস্য পরের দিন পেসেটস্-এ অংশগ্রহণ করবে বলে রাঙ্গামাটি যাওয়া হবে কিনা সেটা নিয়ে দি¦ধাদ্বন্দ্বে পড়লো সবাই। তখন সবাই বললো, হোটেলে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।
হোটেলে যাওয়ার পর : ক’জন চাঁদপুর চলে যেতে লুসা লুসা ওরশ্শে বিরানি খেয়ে তৈরি হতে লাগলো। আল-আমিন ভাই আমাদের সাথে প্রথমে হোটেলে না উঠে তিনি তার আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেন। সেখান থেকে বাসের টিকিট কেটে শেষমেষ আমাদের সকলের সাথে মিলিত হন এবং রাত ১২টায় তারা ৫ জন চাঁদপুরের উদ্দেশ্য রওনা দেন।
পাবর্ত্য জেলা রাঙ্গামাটি যাওয়ার সিদ্ধান্ত : ক্লাব সদস্যরা কয়েকজন চলে যাওয়ার পর আমরা সদস্য সংখ্যা ৮ জন হয়ে গেলাম। সুমন ভাইয়ের অ্যাসেম্বলি অনুষ্ঠানস্থলে কিছু কাজ থাকায় কিরণ ভাইসহ সেখানে চলে গেলেন। রুমে ছিলাম আমি, নিলয় ভাই, নাজমুন নাহার আপু এবং সাদিয়া আপু। আমরা তারা আসার আগে অনেক হাসি-ঠাট্টার কথাসহ বিভিন্ন কথা বলতে লাগলাম। এই সময় আফজাল ভাই তার পরিচিত একজনের সাথে দেখা করে আমাদের সাথে যুক্ত হলেন। তিনি এসে দেখেন তার প্যাকেটের খাবার অন্য কেউ খেয়ে ফেলেছে। পরে কী আর করা। তিনি বাইলা মাছ দিয়ে হোটেলে গিয়ে খাবার খেয়ে আসেন এবং ফিরার সময় রুমে অবস্থান করা আমাদের জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসলেন।
তার কিছুক্ষণ পর রুবেলসহ কিরণ ভাই, সুমন ভাই, হোটেলে প্রবেশ করলেন এবং কিরণ ভাইয়ের জোরালো উদ্যোগে সকলের সম্মতি নিয়ে রাঙ্গামাটি যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। সকাল ৬টায় থেকে ৭টার ভেতর রওনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো এবং সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো।পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা : রাঙ্গামাটি যাবো সেজন্য সকাল ৬টায় ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। উঠে সাদিয়া আপুকে ফোন দিয়ে সুমন ভাইকে ডাকতে বললাম এবং রেডি হতে বললাম। উনি বললো ওনারা রেডি। পরে আমি উঠে নিলয় ভাইসহ সবাইকে ডাকলাম। নিলয় ভাই বলেন, কিও তোমার কি ঘুম কম ? এতো সকালে ঘুম নষ্ট করলা। আমি বললাম, আরে ভাই উঠেন, রাঙ্গামাটি যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, ৬ টার বেশি বাজে।
পরে সবার রেডি হতে হতে ৮টা বেজে গেলো। ওদিকে আমি আগে তৈরি হয়ে নাজমুন নাহার আপুর রুমে গিয়ে দেখি তারা রেডি হয়ে শুয়ে আছে। তখন তারা বললেন, মেয়েরা সব সময় ফার্স্ট। কখন রেডি হয়ে বসে আছি। তারা বললেন, কখন যাবে আর কখন আসবে ?
আমি বললাম, যাবেন কি না সিদ্ধান্ত নেন। কারণ বাইরে আকাশ মেঘলা, বৃষ্টি পড়বে মনে হয় । এরকম বলতে বলতে কিছুক্ষণ পর সবাই একত্রিত হয়ে আবার বলাবলি শুরু করলো যাবে নাকি যাবে না। পরে আমি বললাম, কী করতে এখন যাবেন, একটু পর বৃষ্টি নামবে (মনে মনে তো আশা আছে যাবো)। তখন কিরণ ভাই বললেন, বৃষ্টি পড়ুক, নাই পড়ুক যাওয়ার যখন সিদ্ধান্ত হইছে তখন যাবো। তখন সবাই বললো, চলেন (সুমন ভাই মুচকি হাসে আর বলেন, সবাই গেলে তিনি যাবেন)। নিলয় ভাই পেসেটস্ বাদ দিয়ে আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য রাজি হলেন। চট্টগ্রাম পেসেটস্ অনুষ্ঠানে ক্লাবের ৪ জনকে না জানিয়ে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ৮টা ৪০মিনিটে বাসযোগে রওনা দিলাম।
রাঙ্গামাটি গিয়েও বৃষ্টি : রাঙ্গামাটি পৌঁছানো পর্যন্ত সকলেই কম-বেশি একটু ঘুমালো। সবাই পেছনের সিটে বসলাম। দু-আড়াই ঘন্টা ঝাঁকুনি খেতে খেতে রাঙ্গামাটি পৌঁছলাম সবাই। সারা রাস্তা জুড়ে আফজাল ভাই বাসের সামনেই বসে রইলো বমির হাত থেকে বাঁচার জন্য। চট্টগ্রামের মতো রাঙ্গামাটিতে বৃষ্টিতে পড়লাম। তখন সবাই বললো, এখন কী হবে ? বৃষ্টিতে কই ঘুরবেন ? এতো বৃষ্টি ছিলো যে, কই নামবো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না কেউ। নিলয় ভাই বললেন, নাহিন তোমার যা মুখ। আমি হাসলাম। কিন্তু বৃষ্টির ছোঁয়ায় প্রকৃতি অন্যরকম সুন্দর দেখাচ্ছিল। পরে বাস কন্ডাক্টরকে বলে রাঙ্গামাটি বাসস্টেশন গিয়ে শেষমেষ নামলাম বৃষ্টির মধ্যে। বৃষ্টিতে নেমে একটি হোটেলে খাবার খেতে ঢুকে ভাত এবং কয়েকটি ভর্তা দিয়ে সকালের নাস্তা সারলাম। তখন বাজে সকাল ১১ টা।
বন্ধু হিমেলের ফোন : আমরা যখন রাঙ্গামাটি তখন হিমেল ফোন দিয়ে বলে, কই তুমি ? আমি দুষ্টামি করে বললাম, রাঙ্গামাটি আসছি বন্ধু, বাসে। পরে আমার কথা বিশ^াস না করে একে একে সুমন ভাই, নিলয় ভাই, ইয়াদগীরকে ফোন দিতে লাগলো। সুমন ভাই ফোন রিসিভ করে বললেন, হ্যাঁ বল। হিমেল বললো, আপনারা রাঙ্গামাটি গেছেন আমাকে বলবেন না। সুমন ভাই ত্যাড়া উত্তর দিয়ে বলেন, তোরে কেন বলমু, তুই না পেসেটস্ করোস্। আর গেছি, মন চাইছে তাই আইছি। তখন হিমেল বললো, কখন আসবেন? তখন সুমন ভাই বললো, আসমু মন যতক্ষণ চায় ততক্ষণ থেকে আসমু। তখন উপস্থিত সবাই শুনে মিটিমিটি হাসতে লাগলো। আর তখন সবাই বলতে লাগলো, হিমেল নির্ঘাত চলে আসবে। যদিও আসলে আমাদের পেতো না, কারণ ততক্ষণে আমরা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য আবার রওনা দিতাম। ইচ্ছে ছিলো হিমেল, রাকিব, নিশাত, নয়নকে আনা। কিন্তু তাদের পেসেটস্ প্রোগ্রামের জন্য তাদেরকে আনা হলো না। আলু ভর্তার অভাব : হোটেলে অন্যান্য ভর্তা দিয়ে ভাত খেলেও আমি শুধু আলু ভর্তা চাইলাম। কারণ আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে খেলেই আমার চলে (আলু আমার খুবই প্রিয়)। হোটেলের বয় বললো, আলু ভর্তা নেই। কিন্তু যখন খাওয়া শেষ পর্যায়ে তখন পাশের টেবিলে দেখি আলু ভর্তা দিয়ে আরেক কাস্টমার ভাত খাচ্ছিল। তখন বললাম, কিও আলু ভর্তা তাকে দিলেন, আমাকে যে দিলেন না ? তখন হোটেল বয় ধরা খেয়ে আর কী বলবে, চুপচাপ আলু ভর্তা নিয়ে আসলো খাওয়ার শেষ মুহূর্তে (অন্যান্য ভর্তার দাম বেশি আর আলুর দাম কম সেজন্য)। দিতে চাইলো না, এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বললো, আমরা খাওয়ার জন্য একটু রেখেছি।কম দামে মিষ্টি আনারস : খাবার খেয়ে যখন সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম রাঙ্গামাটির কই যাওয়া যায়। ঐদিকে আকাশ কিছুটা মেঘলা এবং দুপুরও হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সকলকে সন্ধ্যা হওয়ার আগে রওনা দিতে হবে। এজন্য সকলে মিলে রাস্তা দিয়ে রাঙ্গামাটি অঞ্চলের লোকদের জিজ্ঞেস করে লঞ্চঘাট, রিজার্ভ বাজার খুঁজতে চেষ্টা করছিলাম। খুঁজতে খুঁজতে রাস্তায় চোখে পড়লো একটি ভ্যানে আনারস। আনারসগুলো দেখতে মাঝারি সাইজের ছিলো এবং দাম ছিলো মাত্র ১০ টাকা। ১০ টাকা দেখে একটি আনারস কাটিয়ে সবাই অল্প অল্প করে ভাগ করে খাচ্ছিল। আমিও এক পিচ ট্রাই করতে গিয়ে দেখি আনারসগুলো খুবই মিষ্টি এবং রসালো। তখন উপস্থিত সবাই তৃপ্তি সহকারে অনেক আনারস খেয়ে মন ভরালো এবং পাশেই ছিলো কাপ্তাই লেক। কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য এবং স্নিগ্ধ বাতাস ওপর থেকে দেখে ক্লাবের সদস্যরা অনেক খুশি হলো। মন ভরে উপভোগ করে কিছুক্ষণ ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তখন উপস্থিত সবাই বললো, রাঙ্গামাটি আর ঘোরা দরকার নাই, এটা দেখেই শান্তি।
পলওয়েল পার্ক : লঞ্চঘাট খুঁজতে খুঁজতে পলওয়েল পার্কের কাছে এসে পৌঁছি সিএনজি করে। আমরা যেখানে অবস্থান করছিলাম, সেখান থেকে অল্প কিছুটা পথ, কিন্তু ভাড়া ৫০ টাকা। আমি, ইয়াদগীর, সুমন ভাই ছাড়া অন্যান্য সদস্যদের একটি সিএনজিতে উঠিয়ে দিয়ে হাঁটতে থাকি। তখন ঐ সিএনজি আবার তাদের রেখেই ফিরে আসছিলো। ততক্ষণে আমরা হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর চলে গিয়েছিলাম, কিন্তু তিনজনের ভাড়া সেই ৫০ টাকাই রাখা হয়েছে।
বোটের ভাড়া নিয়ে : পলওয়েল পার্কটি পুলিশরা তৈরি করেছে। ওখানে বোট দিয়ে কাপ্তাই লেকে ঘুরতে হয়। কাপ্তাই লেকে ঝুলন্ত ব্রীজ, পলওয়েল পার্ক, সুবলং ঝর্ণা, জুম পাহাড়, চাংপাং, পেদা টিং টিং, নির্মাণ নগর, বৌদ্ধ মন্দির, ইয়ারিং ইত্যাদি স্পট বোটের মাধ্যমে ঘুরে দেখা যায়। কিন্তু বোটের ভাড়া অস্বাভাবিক বেশি। কারণ এখানে নাকি কিছু কমিশন পুলিশকেও দিতে হয় বোটব্যানকে। বোটের ভাড়া পর্যাপ্ত বেশি, তাই ইয়াদগীর রুবেল তার পরিচিত এক লোকের কাছ থেকে বোটের অরিজিনাল ভাড়া এবং কম দামে বোট ভাড়া পাওয়া যায় কিনা জানতে চেষ্টা চালালো। পরে কোনোভাবে না পেয়ে ওখানকার বোট ভাড়ার শর্তানুযায়ী ৫টি স্পট ঘুরে দেখাবে, ভাড়া ২০০০ টাকা। পরে দর কষাকষি করে ভাড়া ১৮০০ টাকায় ঠিক করা হলো। সদস্য সংখ্যা ৮ জন। পরে আর দেরি না করে দ্রুত মাঝারি সাইজের একটি ট্রলারে সকলে মিলে উঠে পড়লাম। তখন খুশিতে কিরণ ভাই, নিলয় ভাই বলাবলি করলো, দুষ্টামি করে আজকে এই পানিতে আমরা গোসল করবো, শুধু মেয়েরা বাদে। নিলয়, কিরণ, সুমন ভাই, ইয়াদগীর দ্রুত জামা কাপড় চেঞ্জ করে ফেললো বোটে বসেই। মনে হচ্ছিল চলন্ত অবস্থায় ঝাঁপ দিবে পানিতে।
চার ঘন্টা যখন বোটে : দুপুর ১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কাপ্তাই লেকে ট্রলারে অবস্থান করছিলাম। বোটটি আস্তে আস্তে করে চলছিলো। ট্রলারে বসেই সবাই দেখলাম কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য, স¦চ্ছ পানি, লেকের মাঝখানে গাছের গুড়ি এবং লেকের ভেতরেই ছোট ছোট লাল মাটির টিলা, সবুজ গাছপালা, টিলার ভেতর গরুর বিচরণ, পাথরের পাহাড় যা মাটি শুকিয়ে পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে। স্পীড বোট কিংবা অন্য কোনো বোটের ঢেউ খাওয়া সবাই উপভোগ কছিলাম। তখন সবাই ছবি তোলায়, প্রকৃতির দৃশ্য, গান গাওয়াসহ লেকটি উপভোগ করায় ব্যস্ত ছিলো। সুমন ভাই, নিলয় ভাই তো পানির পিপাসায় কাপ্তাই লেকের পানিই খেয়ে ফেলেছে (যতোই পানি স্বচ্ছ হোক না কেন জীবাণু ভরা একশ’ পার্সেন্ট)। অবশেষে তারা স্বচ্ছ জীবাণু পানি খেয়ে তৃপ্তি মিটালো।
বোটে যখন চোখ বন্ধ করে রাখি : আমি কিছুক্ষণ পর পর প্রকৃতির দৃশ্য দেখে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করে রাখি শরীরের এনার্জি বাড়ানোর জন্য। সবাই যখন প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত সেই ফাঁকে আমি কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি। ঠিক এই সময় নাজমুন নাহার আপু এবং সুমন ভাই তাদের মোবাইলে আমার ঘুমের দৃশ্য ধারণ করতেই আমি চোখ খুলে অবাক হয়ে দেখি, তারা আমার দিকে মোবাইল ধরে বসে আছে। পরে তাদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে সময়টাকে উপভোগ করলাম।
সুবলং ঝর্ণা এবং চাকমাদের সাথে সময় কাটানো : দীর্ঘক্ষণ বোটে অবস্থান করে ছোট ঝর্ণা, ঝুলন্ত ব্রিজ, বৌদ্ধ মন্দির এবং আমরা সুবলং ঝর্ণার কাছে পৌঁছি। ঝর্ণার কাছে গিয়ে আমাদের সকলের মনটা শীতল হয়ে গেলো। সবাই এক পলকে ঝর্ণার দৃশ্য দেখতে থাকলো। ঝর্ণার পানি পায়ে লাগিয়ে শরীরটাকে সতেজসহ দুচোখকে ঠাণ্ডা করলো ক্লাবের সদস্যরা। পরে ফেরার পথে আদিবাসী চাকমাদের সাথে কিছুটা সময় কাটালাম ক্লাব সদস্যরা। ক্লাব সদস্যদের নিজের হাতে তৈরি ব্যাগ, গামছা কিনাসহ তাদের সাথে কিছুটা দুষ্টামি করে আবার রওনা দিলাম পলওয়েল পার্কের দিকে। পৌঁছাতে সাড়ে ৫টা বেজে গেছে। সবাই বোট থেকে নেমে কাপ্তাই লেকের পরিষ্কার পানি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে রওনা দিলাম বাসস্ট্যান্ডের দিকে।
বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে যা হলো : বাসস্ট্যান্ডে যখন পৌছি তখন বাজে ৫টা ৪৫। তখন কোনো বাস ছিলো না। ৬টা ৫০ মিনিটে শেষ বাস। এখন সবাই টেনশনে পড়ে গেলো। এখান থেকে রওনা দিয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে চাঁদপুরের বাস পাবে কিনা। কারণ কাপ্তাই লেক ঘুরতেই বেশি সময় লেগে গেছে। পরে কী আর করা। আরো ১ ঘন্টা রাঙ্গামাটির বাসস্ট্যান্ড অবস্থান করি। এখানে পরিচয় হয় ভোলার একজন মানুষের সাথে, যিনি এখানে পরিবারসহ থাকেন এবং পিঁয়াজু, বুট, চপ বিক্রি করেন। সেখানকার পাহাড়ী আম, ডাব খেয়ে এবং আনারস কিনে ৬টা ৫০ মিনিটে রাঙ্গামাটি থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম সকলে।বন্ধু যখন আমার কাঁধে ঘুমায় : বাসে করে যখন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম তখন সবাই টায়ার্ড ছিলাম এবং পেছনের সিট পেলাম। পেছনের সিটে ইয়াদগীর আমার পাশে বসা ছিলো। গান শুনতে শুনতে সে আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো ভরসা সহকারে। আমিও দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দী করে রাখলাম।
যখন পুলিশ ব্যাগ খুলতে বলে : রাঙ্গামাটি থেকে পাহাড়ের ভেতর থেকে উঁচু নিচু, আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিচ্ছি অনুভব করতে করতে কিছুটা সময় ঘুমিয়ে পড়ি সকলে। হঠাৎ দেখি এক পুলিশ আমার পাশে। আমার ব্যাগটি আমার পায়ের কাছে ছিলো। পুলিশ বললো, আপনার ব্যাগটি খোলেন। ব্যাগটি খুলে ব্যাগটি চেক করলো। আরো কিছু ব্যাগ আমাদের পাশেই ছিলো। তখন নিলয় ভাইকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিবরণ দিয়ে সবকিছু বলে পুলিশকে বিদায় করলেন। তখন মনে মনে ভাবি, আর মানুষ পেলো না চেক করার। পরে বাসায় এসে দেখি, একটি চকলেট আমার ব্যাগে নেই!
চট্টগ্রাম পৌঁছানোর পর : রাঙ্গামাটি থেকে চট্টগ্রাম বাস কাউন্টারের কাছে যেতে রাত ১০টা ভেজে গেছে। সেখানে গিয়ে সবাই টেনশনে পড়ে গেলো। কারণ চাঁদপুরের কোনো ভালো বাসই তেমন ছিলো না, সব বুকিং হয়ে গেছে। সৌদিয়া, বিআরটিসি কোনো কিছুই ছিলো না। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাত ১১টার প্লাটিনামা বাসে করে রাতের সুস্বাদু খাবার খেয়ে সামনের সিটে আফজাল ভাইয়ের সাথে বসে সকলে নিরাপদে ভোর ৫টায় চাঁদপুর পেঁৗঁছলাম এবং পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে যে যার বাসায় গিয়ে এই দুই দিনের ভ্রমণটি সম্পন্ন করলাম।
ভ্রমণটির মূল উদ্দেশ্য ছিলো পেসেটস্ এবং ‘টেন আউট অব টেন’ অ্যাসেম্বলিকে কেন্দ্র করে। শুক্রবার চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ^বিদ্যালয় মিলনায়তেন দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান হয়। রোটার্যাক্ট জেলা প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং প্রোগ্রাম চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ. জ. ম. নাছির উদ্দিন। শেষ পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের উপ-কমিশনার আমির জাফর। অতিথি ছিলেন রোটারী জেলা গভর্নর আবু ফয়েজ খান চৌধুরী, গভর্নর ইলেক্ট রুহেলা খান চৌধুরী ও মোহাম্মদ শাহজাহান।
উক্ত অনুষ্ঠানটিতে চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের সদস্যরা অংশগ্রহণ করে অনেক কিছু শিখেছেন, বুঝেছেন। এভাবে ভবিষ্যতেও শিখবেন বলে আশাবাদী।