রবিবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২২, ১৯:১১

মহাত্মা জীন হেনরী ডুনান্ট ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি

মোঃ নূর ইসলাম খান অসি
মহাত্মা জীন হেনরী ডুনান্ট ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি

জ্ঞানী-গুণীজনেরা বলেছেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য-জীবন জীবনের জন্য’ এবং সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ যা করতে পারে পৃথিবীর অন্য কোন প্রাণীর পক্ষে তা করা সম্ভবপর নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক জ্ঞানীগুণী সমাজসেবক মহৎপ্রাণ মানুষ জন্মগ্রহণ করেছেন। মহাত্মা জীন হেনরী ডুনান্ট সেই সব শ্রেষ্ঠ মানব সন্তানের একজন।

১৮২৮ সালের ৮ই মে তার জন্ম হয়েছিল। তিনি ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ সমাজসেবক, মানব হিতৈষী ও মহামানব। সেই জন্যই তিনি পেয়েছিলেন শান্তিতে প্রথম নোবেল পুরস্কার। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বর্তমানে সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানব সন্তান বিপন্ন মানবতার সেবায় নিয়োজিত। তিনি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষকে এক পতাকাতলে একই কর্মসূচীতে একত্রিত করেছিলেন। সাম্য মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন মানব সন্তানদের। তাঁর এ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯০১ খ্রীঃ ডিসেম্বর মাসে শান্তিতে প্রথম ‘নোবেল’ পুরস্কার লাভ করেন। বর্তমানে সারা বিশ্বে তাঁর জন্ম দিন ৮ই মে ‘বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

১৮৫৯ সালের ২৪ শে জুন তৎকালীন ইউরোপের দুই বৃহৎ শক্তি ফ্রান্স ও অষ্ট্রিয়ার মধ্যে ইতালীর এক পল¬ী প্রান্তর সলফারিনোতে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ফরাসী বাহিনীর জয় হয়। মোট তিন লক্ষ সৈন্যের মাত্র ১৫ ঘন্টা যুদ্ধে শুধু মাত্র আহতদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪২ হাজার। একদিকে বিজয়ী সৈন্যরা বিজয় উৎসবে মত্ত আর অন্যাদিক ৪২ হাজার আহত মানুষের মৃত্যু যন্ত্রণার আর্তনাদ। সে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। ঐ সময়ে ব্যবসা সংক্রান্ত জরুরী প্রয়োজনে তৃতীয় নেপোলিয়ানের সাথে দেখা করার জন্য ইতালীতে আগত সুইস যুবক হেনরী ডুনান্ট নিতান্ত কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রের এই মর্মান্তিকদৃশ্য অবলোকন করেন। মানব জীবনের প্রতি এই চরম অবজ্ঞা মানবসেবী ডুনান্টের হৃদয়ে দারুণভাবে রেখাপাত করে। তিনি তাৎক্ষণিক তার সকল কর্মসূচী বাতিল করে আহতদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।

১৮৬২ সালে হেনরী ডুনান্ট মর্মান্তিক এই যুদ্ধের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে এ ‘মেমোরি অফ সলফেরিনো’ নামে একটি বই লিখে বিশ্বব্যাপী আর্তের সেবামূলক নিরপেক্ষ একটি স্বেচছাসেবী সংগঠন গড়ে তোলার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আকুল আবেদন জানান। এই মহৎ কাজ তিনি আশানুরূপ সর্মথন পান। জেনেভার ‘পাবলিক ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ সর্বপ্রথম এ আহবানে এগিয়ে আসে। হেনরী ডুনান্ট ও অপর চারজন মানব সেবী সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন গঠিত হয়। যা ‘কমিটি অফ ফাইভ’ নামে পরিচিত।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দেশের সমর্থন ও সহায়তার আশায় ১৮৬৩ সালে ২৬ অক্টোবর এই কমিটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহবান করে। মোট ১৬ টি দেশের প্রতিনিধি উক্ত সম্মেলনে যোগদান করেন ও হেনরী ডুনান্টের প্রস্তাব অনুযায়ী একটি আন্তর্জাতিক সেবামূলক নিরপেক্ষ সংস্থা গঠিত হয়। বর্তমান বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক মানব সেবা মূলক সংস্থা রেডক্রস এমনি ঘটনাবলীর মধ্যে দিয়ে জন্ম লাভ করে।

আইসিআরসি একটি নিরপেক্ষ সংস্থা হিসাবে পৃথিবীর দেশে দেশে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিরাপত্তার সুবিধার্থে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি প্রতীকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এই প্রয়োজনবোধ থেকেই সহজেই চেনা যায় এমন একটি প্রতীক নির্ধারণ করা হয় এবং তা হল সাদা জমিনের উপর লাল ক্রস চিহ্ন। যা স্বেচ্ছাসেবকদল বাহুবন্ধনী হিসেবে ব্যবহার করবে। এই অসাধারণ চিহ্ন কার দ্বারা প্রস্তাবিত তা পরিস্কার নয়। তবে যাই হোক প্রতীকটি সুইস পতাকার অনুরূপ বিপরীত রঙের (অর্থাৎ সাদা জমিনে লাল ক্রস চিহ্ন)। উক্ত সম্মেলনের প্রতিনিধিবৃন্দ আজকের পৃথিবীতে সর্বাধিক পরিচিত একটি প্রতীকই শুধুমাত্র নির্বাচন করেননি বরং যে মাটিতে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই সুইজারল্যান্ডের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন।

পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ১৮৬৪ সালে জেনেভা কনভেনশনে সার্বজনীন প্রতীক হিসেবে কোন প্রকার আপত্তি ছাড়াই সকল দেশ কর্তৃক ‘রেড ক্রস’ প্রতীকটিকে স্বীকার করে নেয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও ১৮৭৬ সালে রাশিয়া ও তুরস্কের সাথে যুদ্ধ হলে থেকে বিভিন্ন মহল উক্ত প্রতীকটিকে খ্রীস্টান ধর্মের একটি ‘চিহ্ন’ বলে উল্লে¬খ করতে থাকে। এবং ভিন্ন প্রতীক ব্যবহারের দাবী তুলতে থাকে। তখন তুরস্কের জাতীয় পতাকার অনুরূপ বিপরীত রঙের রেড ক্রিসেন্ট প্রতীক ব্যবহার করেন। অতঃপর ১৯২৯ সালের কুটনৈতিক সম্মেলনে কিছু আপত্তি সত্ত্বেও আরো দুইটি প্রতীককে মেনে নেয়া হয়। সেগুলো হল রেড ক্রিসেন্ট এবং ও রেড লায়ন এন্ড সান। ১৯৪৯ সালের কুটনৈতিক সম্মেলনে প্রতীক দুইটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থা তিনটি প্রতীককে একই লক্ষ্য ও আর্দশ ব্যবহারের অনুমোদন লাভ করে। কিন্তু আবার ১৯৮০ সালে রেড লায়ন এন্ড সান সোসাইটি (ইরান) তাদের প্রতীক পরিবর্তন করে। এছাড়া ইজরাইল তাদের প্রতীক পরিবর্তন করে রেড ক্রিস্টাল ব্যবহার করছে । ফলে বর্তমানে এই সংস্থার প্রতীক তিনটি (১) রেড ক্রস (২) রেড ক্রিসেন্ট এবং (৩) রেড ক্রিস্টাল।

রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের ৭টি মূলনীতি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ১) মানবতা ২) নিরপেক্ষতা ৩) পক্ষপাতহীনতা ৪) স্বাধীনতা ৫) স্বেচ্ছামূলক সেবা ৬) একতা এবং ৭) সার্বজনীতা।

১৯৬৫ সালে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত ২০তম আন্তর্জাতিক রেডক্রস সম্মেলনে রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের মৌলিক নীতিমালাসমূহ গৃহীত হয়। সব নীতিমালার উপর ভিত্তি করেই রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি) ও জাতীয় রেড ক্রস / রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সমন্বয়ে বিশ্বব্যাপী রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে।

এক নজরে মহাত্মা জীন হেনরী ডুনান্ট:

­ জন্ম: ১৮২৮ খ্রীঃ ৮ই মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের রুভার দেইনিতে

­ পিতা : জীন জ্যাকুয়াস ডুনান্ট ­ মাতা : এ্যানা এন্টো ইনেট কোলাডন

­ ১৮৫৯ সালের ২৪ শে জুন উত্তর ইতালীর সলফেরিনো নামক স্থানে ফ্রান্স ও অষ্ট্রিয়ার মধ্যে মানব ইতিহাসের ভয়াবহতম যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন

­ ১৮৬২ সালের নভেম্বর মাসে অ গবসড়ৎু ড়ভ ঝড়ষভবৎরহড় (সলফেরিনো স্মৃতি) নামক গ্রন্থ রচনা করেন

­ ১৮৬৩ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি হেনরী ডুনান্ট ও অপর ৪ জন সদস্য নিয়ে ঈড়সসরঃঃঃবব ড়ভ ঋরাব গঠন করেন।

­ ১৮৬৩ খ্রীঃ ২৬ শে অক্টোবর বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেবামূলক অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান রেড ক্রসের জন্ম লগ্নে প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

­ ১৯০১ খ্রীঃ ডিসেম্বর মাসে শান্তিতে প্রথম ‘নোবেল’ পুরস্কার লাভকরেন ।

­ ১৯১০ খ্রীঃ ৩০ শে অক্টোবর পূর্ব সুইজারল্যান্ডের হেইডনে ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি :

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে একটি করে জাতীয় রেড ক্রস বা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি রয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি আদেশ, ১৯৭৩ (পি.ও.নং-২৬) এর মাধ্যমে সংবিধিদ্ধভাবে থেকে, নিজস্ব স্বাধীনতা বজায় রেখে,আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের মূলনীতি অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

ব্রিটিশ ভারতে ভারতীয় রেড ক্রস সোসাইটি গঠিত এ্যাক্ট, ১৯২০ এর অধীনে রেড ক্রস সোসাইটি গঠিত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার ফলে পাকিস্তানের ভৌগলিক এলাকায় পূর্বের আইনের সামন্য রদবদল করে পাকিস্তান রেডক্রস সোসাইটি প্রাদেশিক শাখা গঠিত হয়। পাকিস্তান অংশে পাকিস্তান রেড ক্রস সোসাইটি শাখা হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান রেড ক্রস সোসাইটি গঠিত হয়।

১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তান রেড ক্রস সোসাইটির পূর্ব পাকিস্তান শাখা বাংলাদেশের জাতীয় রেড ক্রস সোসাইটি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০ শে ডিসেম্বর, ১৯৭১ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিকট স্বীকৃতি লাভের জন্য আবেদন করা হয়। ৪ঠা জানুয়ারি, ১৯৭২ বাংলাদেশ সরকারের এক আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি গঠিত হয়। এরপর ৩১ শে মার্চ ১৯৭৩ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতি বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটির আদেশ, ১৯৭৩ (পি.ও.-২৬) জারি করেন। এই আদেশের বলে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি এ্যাক্ট ১৯২০ বাতিল বলে গণ্য হয়। ২০ শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ আন্তর্জাতিক রেডক্রসের ইরানের ‘তেহেরান সম্মেলনে’ বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি পূর্ণ স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৮৮ সালে ৪ঠা এপ্রিল হতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটির নাম পরিবর্তিত হয়ে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি হয় এবং সোসাইটির প্রতীকও পরিবর্তিত হয়ে রেড ক্রস চিহ্নের পরিবর্তে রেড ক্রিসেন্ট হয়।

বাংলাদেশের প্রতিটি প্রশাসনিক জেলায় ৬৪টি ইউনিট ও ৪টি সিটি করপোরেশনে ৪টি ইউনিটসহ সর্বমোট ৬৮টি ইউনিট এর মাধ্যমে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সারাদেশ ব্যাপী নানাবিধ মানবিক ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রতিটি ইউনিটে ১জন ইউনিট লেভেল কর্মকর্তা (ইউএলও) সোসাইটির পক্ষে জাতীয় সদর দপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিটি ইউনিটে ১১ সদস্য বিশিষ্ট ইউনিট নির্বাহী পরিষদ (চেয়ারম্যান- ১জন, ভাইস-চেয়ারম্যান- ১জন ও কার্য নির্বাহী সদস্য- ৮জন) এবং সোসাইটির নীতি নির্ধারণী কার্যক্রম পরিচালনায় পরামর্শ ও উপদেশ প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি ব্যবস্থাপনা পর্ষদ (চেয়ারম্যান- ১জন, ভাইস-চেয়ারম্যান- ১জন, ট্রেজারার- ১জন ও কার্য নির্বাহী সদস্য- ১২জন) কর্মরত আছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট। তিনি তিন (৩) বছর মেয়াদে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পি.ও- ২৬/১৯৭৩ এর মাধ্যমে প্রধান সহযোগী ত্রাণ সংস্থা হিসেবে নিয়োজিত করেছে। সেহেতু, দেশের সার্বিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের ৭টি মূলনীতির আলোকে সোসাইটির জাতীয় সদর দপ্তর হতে সরাসরি এবং ইউনিটের মাধ্যমে বিপন্ন ও দুঃস্থ মানবতার কল্যাণে ক) দুর্যোগ ত্রাণ ও পুনবার্সন কার্যক্রম খ) ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) গ) স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ঘ) অনুসন্ধান ঙ) সমাজ ভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবেলা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচী (সিবিডিএম) চ) সাংগঠনিক উন্নয়ন (ওডি) ছ) যুব ও স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রম জ) সিডিআই ঝ) রক্তদান কর্মসূচী ঞ) প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ট) সিইপি ঠ) রেড ক্রিসেন্ট নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রচার এবং প্রসার ড) ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদান কর্মসূচি (ইপিআরপি) ঢ) সিডি প্রভৃতি বিষয়ে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জন্মলগ্ন থেকে রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন-এর ৭টি মূলনীতির সাথে একাত্ম হয়ে মানবিক প্রয়োজনে সরকারের সহায়ক হিসেবে দুর্যোগসহ যে কোন মানবিক সংকটে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি সোসাইটি বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যত দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। বিডিআরসিএসকে একটি আধুনিক, সময়োপযোগী ও আত্মনির্ভরশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সকলে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা ২০২১-২০২৫ চূড়ান্ত হয়েছে।

বর্তমানে করোনার মহামারীর প্রকোপ কিছুটা কমলেও পৃথিবীব্যাপী জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে মানবসৃষ্ট দুর্যোগের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলছে। প্রকৃতির এই বিরূপ প্রভাব ও ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সময়োপযোগী বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে। দেশব্যাপি সোসাইটির ৬৮টি ইউনিট এবং স্বেচ্ছাসেবকগণ হলো বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মূলচালিকা শক্তি। বিশেষ করে সোসাইটির যুবসদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ কোভিড-১৯সহ বিভিন্ন মানবিক সংকটে যে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। করোনা মোকাবেলাসহ যেকোন ধরণের মানবিক সংকটে নিরলসভাবে সোসাইটির সকল যুব স্বেচ্ছাসেবক, ইউনিট কর্তৃপক্ষ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়