প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২১, ০০:০০
পাউবোর পানি নিষ্কাশন খালগুলো প্রায় বন্ধ
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে জলাবদ্ধতা ॥ আমনের আবাদ নিয়ে শঙ্কা
মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও সরকারি পানি নিষ্কাশনের খালগুলো প্রায় বন্ধ করে ফেলা হচ্ছে। অতি বৃষ্টি হলে সেচ প্রকল্পের ভেতর দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে অনেক কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতা দূর না হলে প্রকল্পে কৃষিজমিতে আমনের আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। প্রতি বছরের মতো এবারও চাষীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। জলাবদ্ধতার কারণে প্রতিবছরই কৃষকরা জমিতে আবাদ করতে পারে না।
|আরো খবর
ময়লা-আবর্জনা ও জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও সরকারি খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে ও গেছে। হানিরপাড়-ছেংগারচর বাজার-কালিপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খালটি ছেংগারচর বাজার এলাকা দিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে খালগুলো দিয়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না। খালগুলো দিয়ে জমির বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় প্রতি বছরই কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতি বছর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতে সেচ প্রকল্পের হানিরপাড়, কলাকান্দা, মিলারচর, মাথাভাঙ্গা, পাঁচআনি, একলাশপুর, জোড়খালী, শিকিরচর, ছেংগারচর, কেশাইরকান্দি, জীবগাঁও, পাঠান বাজার, ঝিনাইয়া, মরাদন, ঠাকুরচর, রুহিতার পাড়, আমুয়াকান্দা, সিপাইকান্দি, ঠেটালিয়া, গজরা, রাঢ়িকান্দি, ছোট ও বড় হলদিয়া, লুধুয়া, ঠাকুরচর, নাউরী, নিশ্চিন্তপুর, বেলতলি, ঘনিয়ারপাড়, নন্দলালপুরসহ বিভিন্ন এলাকার উঁচু-নিচু জমি ও বিলে জলাবদ্ধতা দৃশ্যমান। চলতি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। জলাবদ্ধতার কারণে ধান ও সবজির জমি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানায় কৃষকরা। জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদী থাকবে জমি।
হানিরপাড় গ্রামের কৃষক দ্বীন ইসলাম জানান, বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে গেছে। ছেংগারচর দিয়ে যাওয়া খালটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি সরে না। প্রতি বছরই আমরা এ সময় পানিতে ডুইবা থাকি।
কলাকান্দা ইউপি সচিব শ্যামল চন্দ্র জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি নিয়ে কৃষকরা ইউপিতে আসেন। এ এলাকার কৃষিজমি থেকে বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় মারাত্মক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
কলাকান্দা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কাদির মোল্লা জানান, ছেংগারচর বাজার এলাকা দিয়ে খালটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে বারবার কথা বলে কোনো লাভ হচ্ছে না। বৃষ্টির পানি সরতে পারছে না। এ বিষয়ে মাননীয় সংসদ সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালাউদ্দিন বলেন, ময়লা-আবর্জনায় ও জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় খালগুলো ভরাট হয়ে পানি চলাচল করতে পারছে না। বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমনের চাষের মৌসুম। জমির বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় বীজতলা ও রোপণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষকরা। জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা না নিলে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী শরিফুল হাসান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নিষ্কাশন খালগুলো সংস্কারের অভাবে বৃষ্টির পানি জমি থেকে নামছে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা চাঁদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, জলাবদ্ধতা দূর করতে দুটি পাম্প হাউস কাজ করছে। বেশ কিছু নিষ্কাশন খাল বেদখলে থাকায় নিচু জমির পানি মূল খালে আনা যাচ্ছে না। জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা চলছে।