রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২১, ১৮:১৫

পরীক্ষা বাদে বিকল্প ভাবনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়

অনলাইন ডেস্ক
পরীক্ষা বাদে বিকল্প ভাবনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়

সিদ্ধান্ত ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর ৬০ দিন ক্লাস করিয়ে এসএসসি এবং ৮৪ দিন ক্লাস করিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এজন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু করোনার কারণে দুইবার তারিখ দিয়েও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থেকে পিছু হটতে হয়েছে।

এখন পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া হবে তা নিয়ে চিন্তায় মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ডের কর্তা ব্যক্তিরা। আর পরীক্ষা নিয়ে চরম উদ্বেগে সময় কাটাচ্ছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার বর্তমান পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে, কখন শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানো যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আপাতত পরীক্ষা বাদে বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করার পথে এগুতে হচ্ছে। সেজন্য শিক্ষাবোর্ডসহ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তাদের সুপারিশ পেলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে চলতি বছর হয়তো আর পরীক্ষা নেওয়া যাবে না, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন ইঙ্গিত দেন তিনি। এর আগে সংসদে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, শিগগিরই এসএসসি-এইচএসসির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, যেহেতু আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাচ্ছে না, তাই যত বিকল্প পদ্ধতি আছে সেগুলোর প্রস্তুতি শেষ করে রাখছি। যখন যেটা প্রয়োগ করা যায়, সেটাই বাস্তবায়ন করা হবে।

বিকল্প কী কী প্রস্তুতি নিচ্ছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এজন্য শিক্ষাবোর্ড ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারাই পরীক্ষার বিকল্প মতামত দেবেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি মিললেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এ সংক্রান্ত কমিটির প্রধান এবং আন্তঃশিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ।

শিক্ষাবোর্ডের দুজন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, এসএসসি ৬০ দিন ও এইচএসসি ৮৪ দিন সরাসরি ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নিতে হলে কমপক্ষে আগস্টে মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। কারণ ৬০ দিন ক্লাস করোনার পর পরীক্ষার আগে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় দিতে হবে প্রস্তুতির জন্য। আবার পরীক্ষা নিতে কমপক্ষে ২৫ দিন সময় লাগবে। অন্যদিকে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ২০ থেকে ২৫ দিন বিরতি দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করতে হবে।

হিসাব করে দেখলে কোনো অবস্থায় চলতি বছর পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ ইতোমধ্যে জুলাই মাস পুরোটাই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরে মাস আগস্ট-সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে তারও কোনো নিশ্চিয়তা নেই। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের নীতি নির্ধারক বলেছেন, সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে না নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মত ঝুঁকিতে তারা যাবে না।

যেসব বিকল্প পদ্ধতিতে এগুচ্ছে সরকার ২০২১ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলেও কোনো অবস্থায় অটোপাস দেওয়া হবে না। কারণ এ দুটি সনদ ও নম্বরপত্রে ওপর ভিত্তি করে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, বিদেশে পড়াশোনার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়। তাই সর্ব্বোচ্চ মূল্যায়ন করে নম্বরপত্র দেওয়া যায় এমন পদ্ধতিই বাছাই করা হবে। সেজন্য আপাতত পূর্ববর্তী পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফল যোগ এবং সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর অ্যাসাইনমেন্ট জমা নিয়ে মূল্যায়ন করে ফলাফল দেওয়ার কথা ভাবছে।

তবে বছর শেষে যদি সময় কাভার করে, তবে মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর সংক্ষিপ্ত পরীক্ষা নিয়ে ফলাফল দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি দুইশ নম্বরকে এক করে একশ নম্বর, গণিত, বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শাখার ২০০ নস্বরের যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো এক করে ১০০ নম্বরসহ সর্বমোট ৫০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া। তবে সেটি নির্ভয় করে পরবর্তী মাসের করোনা পরিস্থিতির ওপর।

ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৩০ নম্বরের অ্যাসাইমেন্ট মূল নম্বরের সঙ্গে যোগ হয়। এখন যেহেতু মহামারি পরিস্থিতি তাই অ্যাসাইমেন্ট হতে পারে প্রধান বিকল্প পদ্ধতি। এছাড়াও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জেএসসি ২৫ শতাংশ ও এসএসসি পরীক্ষার ৫০ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ নম্বর অ্যাসাইনমেন্টের ওপর মূল্যায়ন করার প্রস্তাব রয়েছে। এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি পরীক্ষার ফলে ৫০ শতাংশ আর বাকি ৫০ শতাংশ নম্বর স্কুল পারফরম্যান্স বা অ্যাসাইনমেন্টের ওপর মূল্যায়ন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীর বলছেন, পরীক্ষা না হলে বিকল্প কোন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হবে তার কোনো সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে পড়াশোনা বেশ ব্যাঘাত ঘটছে। কবে কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে তা আমরা জানি না।

এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, পরীক্ষার বিকল্প কোনো পদ্ধতির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়নি। পরীক্ষা না হলে কি করা যায়, বিকল্প কি কি হতে পারে তার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। তবে আমরা এখনও পরীক্ষা নিয়েই ফল প্রকাশ করতে চাই। সেজন্য যত ধরনের প্রস্তুতি থাকার দরকার সব অমাাদের রয়েছে।

শিক্ষাবোর্ডের এ চেয়ারম্যান বলেন, ইতোমধ্যে এসএসসি ফরম পূরণের কাজ শেষ। এইচএসসি ফরম পূরণ করোনার কারণে স্থগিত রয়েছে। পরীক্ষা প্রশ্নপত্র ছাপানো, কেন্দ্র ঠিক করার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আমরা শেষ করে রাখছি। সরকার থেকে যখন যে সিদ্ধান্ত আসবে অল্প সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে পারবো।

কী হবে বার্ষিক পরীক্ষার গত বছর করোনার কারণে স্কুলে অভ্যন্তরীণ বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। শেষের দিকে অ্যাসাইমন্ট শুরু হলেও তা মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের নম্বর দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণিতে অটো প্রমোশন দেওয়া হয়। এবার সেটি হবে না বলে সাফ জানিয়েছে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

এবার অ্যাসাইমেন্ট নম্বরের ভিত্তিতে তাদের পরবর্তী শ্রেণিতে মূল্যায়ন করে উত্তীর্ণ করা হবে। কোনো অবস্থায় তাদের পরবর্তী শ্রেণিতে উর্ত্তীণ করা হবে না। যেসব অ্যাসাইমেন্ট দেওয়া হচ্ছে তার ওপর নম্বর দেওয়া হবে। বার্ষিক পরীক্ষা নিতে না পারলে এ নম্বর যোগ করে তা বিবেচনা করা হবে।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ গোলাম মো. ফারুক বলেন, যে অ্যাসাইমেন্টগুলো দেওয়া হচ্ছে তা সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। কোনো কারণে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হয়, তবে এগুলো মূল্যায়ন করে নম্বরিং করা হবে। যে অ্যাসাইমেন্টগুলো দেওয়া হচ্ছে তা খুবই ডিটেইল করে দেওয়া হচ্ছে। এটা সঠিকভাবে করা হলে শিক্ষার্থীদের খুবই বেশি ঘাটতি থাকবে না।

সূত্র : ঢাকা পোস্ট

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়