প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:১৭
ডাকযোগে ভোট দিতে অনীহা মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের অনেকের

মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের বহুদিনের প্রত্যাশা ছিলো বিদেশে বসেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাওয়া। সেই প্রত্যাশার বাস্তব রূপ হিসেবেই নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে চালু হয় অনলাইনের মাধ্যমে ভোট প্রদান কর্মসূচি। প্রাথমিক পর্যায়ে এই উদ্যোগ প্রবাসীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করে।
|আরো খবর
প্রযুক্তিনির্ভর এই ব্যবস্থাকে অনেকেই ভবিষ্যৎমুখী পদক্ষেপ হিসেবে দেখেছিলেন। তবে অনলাইন নিবন্ধনের পর ডাক বিভাগের ওপর নির্ভরশীলতা প্রবাসীদের মধ্যে নতুন করে হতাশা তৈরি করেছে। পুরো প্রক্রিয়া যদি অ্যাপভিত্তিক হতো, তাহলে প্রবাসীরা আরও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারতেন—এমনটাই তাদের অভিমত।
এই প্রথমবারের মতো প্রবাসী নাগরিকদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ-এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হয় ১৯ নভেম্বর এবং শেষ হওয়ার কথা ৩১ ডিসেম্বর।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি একটি পরীক্ষামূলক প্রয়াস। তবে বাস্তবায়নে জটিলতা থাকলে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রবাসী ভোটারদের কাছে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো শুরু করেছে ইসি।
এই পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট দেশের ডাকবিভাগ থেকে ব্যালট সংগ্রহ করে ভোট প্রদান শেষে তা ফিরতি খামের মাধ্যমে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হবে। সামান্য ভুলের কারণে ভোট বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকায় অনেক প্রবাসী দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীদের অভিযোগ, ছুটি পাওয়া কঠিন হওয়ায় ডাকঘরে যাওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। দূরত্ব, অতিরিক্ত ব্যয় এবং সময় সংকট এই পদ্ধতিকে প্রায় অকার্যকর করে তুলেছে।
এই বাস্তবতায় অনেক প্রবাসী ডাকযোগে ভোট দেওয়ার পদ্ধতিকে বাস্তবতা-বিবর্জিত বলে মনে করছেন। নিবন্ধন করেও ভোট দিতে না পারার কারণে অনাগ্রহ বাড়ছে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে নিবন্ধন করেছেন ৭ লাখ ৫৩ হাজার ৬২ জন প্রবাসী ভোটার। এই প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
একজন প্রবাসী ভোটারের পেছনে গড়ে ৭০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে বলে জানা গেছে। এত ব্যয়ের পরও যদি ভোট প্রদানের হার কম থাকে, তাহলে প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।
নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য ভবিষ্যতে প্রায় ৫০ লাখ প্রবাসী ভোটার-কে এই ব্যবস্থার আওতায় আনা। তবে বর্তমান কাঠামোয় ভোট প্রদান দুরূহ হয়ে পড়বে বলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা মনে করছেন।
প্রবাসীদের মতে, বর্তমান বিশ্ব পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর। অধিকাংশ প্রবাসীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও বৈধ রেসিডেন্স কার্ড থাকার পরও যদি পুরোপুরি অনলাইন ভোটিং চালু না হয়, তাহলে প্রত্যাশিত অংশগ্রহণ পাওয়া কঠিন।
বিশেষ করে যেসব প্রবাসীর বৈধ কাগজপত্র নেই বা যারা শারীরিক সীমাবদ্ধতায় ভুগছেন, তাদের জন্য ডাকঘরে গিয়ে ভোট দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তাই প্রবাসীদের দাবি—ঘরে বসেই সম্পূর্ণ ডিজিটাল ভোটিং ব্যবস্থা চালু করাই সময়ের দাবি।








