শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২১, ২২:৪১

টানা ৫শ' দিন বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : কেমন চলছে চাঁদপুরের শিক্ষা কার্যক্রম?

রাসেল হাসান
টানা ৫শ' দিন বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : কেমন চলছে চাঁদপুরের শিক্ষা কার্যক্রম?

২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুলাই শুক্রবার পর্যন্ত টানা ৫শ' দিন বন্ধ ছিলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি পাঠদান। মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রথম ঢেউ কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের হানা বিপর্যস্ত করেছে পুরো দেশকে। বিপর্যস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ একাধিকবার নির্ধারণ হলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখি পরিস্থিতি।

চাঁদপুরের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক মিলে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রায় ৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার অধিকাংশের কার্যক্রমই ছিলো বন্ধ। হাতে গোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনলাইন পাঠদানও ছিলো আইওয়াশ। নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত যে সকল পরিবারে এনড্রয়েট মোবাইল সেট নেই তাদের কাছে 'অনলাইন ক্লাস' আমাবশ্যার চাঁদের মতই অধরা ছিলো। করোনায় কর্মহীন বিপর্যস্ত যে পরিবারগুলো ত্রাণের জন্য ঘুরেছে দ্বারে দ্বারে সে পরিবারের সন্তানরা মোবাইলে ইন্টারনেট ডাটা রিচার্জ করে মেগাবাইট কিনে জুম অ্যাপে ক্লাস করাটা ছিলো শুধুই বিলাসিতা। তাই টানা ৫শ' দিনে অটো প্রমোশনে একটি ক্লাস পরিবর্তন হলেও বইয়ের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো দারিদ্র শিক্ষার্থীদের।

চাঁদপুর জেলায় শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই রয়েছে ১,১৫৬টি। কিন্ডারগার্টেন ছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরির বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে আরও ২৩৪টি। যার মধ্যে গণশিক্ষা স্কুল ৭৬টি, ব্র্যাক স্কুল ২৮টি, কমিউনিটি স্কুল ৯৩টি ও স্যাটেলাইট স্কুল রয়েছে ৩৭টি। প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় ছোট-বড় কিন্ডারগার্টেন রয়েছে প্রায় ২ হাজার। এমপিও ননএমপিও মিলে মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২৪০টি। এবতেদায়ী, দাখিল, আলিম ও ফাজিল মিলে মোট মাদ্রাসা রয়েছে ১,১৬৭টি। সাধারণ শিক্ষার কলেজ ৪৭টি, কারিগরি কলেজ ১০টি, হোমিওপ্যাথিকসহ মেডিকেল কলেজ ৪টি, আইন কলেজ ১টি ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১টি।

এ জেলার গড় শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৫০.৩%; যার মধ্যে পুরুষ ৫১.৯%, মহিলা ৪৮.৭%। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার সেই হার কোথায় গিয়ে নেমেছে তা-ই বিবেচ্য বিষয়। জেলার কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ এখন কোন না কোন কাজের সাথে সম্পৃক্ত। পরিবারের উপার্জনের সহায়ক হতে কেউ ঔষধের দোকানে কর্মচারি হিসেবে নিজেকে যুক্ত করেছেন, কেউ হাতপাতাল বা ডায়াগনস্টিকের রিসিপসনিস্ট কেউবা গ্রামে বাবার সাথে নেমেছেন কৃষি কাজে।

কিন্ডারগার্টেন থেকে আয় হওয়া শিক্ষকদের বড় একটি অংশ বিদায় জানিয়েছে শিক্ষকতা পেশাকে। জড়িত হয়েছেন বিকল্প কোন কাজে বা হন্য হয়ে খুঁজছেন বিকল্প কোন কর্মসংস্থান। প্রান্তিক অঞ্চলের বহু কিন্ডারগার্টেন বন্ধ করে দিয়ে তা স্থানান্তরের জন্য যোগ্য লোক খুঁজছেন কিন্ডারগার্টেন পরিচালনা পর্ষদ।

প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা সচেতন অভিভাবকের নজড়দারিতে পড়ালেখার সাথে কোনো রকম সম্পর্ক চালিয়ে গেলেও পড়ার যে স্বাভাবিক গতিবিধি ও চাপ তা থেকে লাইনচুত্য হয়েছে অনেকে। অনলাইনে পড়ালেখার চেয়ে ক্ষতিকর গেমসের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে শিশুরা।

টানা ৫শ' দিন প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইমরান হোসেন চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, এমন দিন দেখতে হবে ভাবিনি। অনার্স লাইফের কিছু বুঝতে না বুঝতেই ২য় বর্ষে পা রাখলাম। পারিবারিক সমস্যার কারনে শেষ পর্যন্ত কনটিনিউ করতে পারবো কি-না জানি না। বাবা সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে পড়ালেখা চালাবে কি করে? করোনার এ ক্ষতি কবে কাটিয়ে উঠবো আমরা তা আল্লাহই ভালো জানেন।

চাঁদপুর সদরস্থ আল-আমিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ তাজুল ইসলাম চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, বৈশ্বিক মহামারি এখন সর্বত্রই বিরাজমান। ছাত্রদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে সরকার বাধ্য হয়েছে এতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে। তবে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম থেমে নেই। অনলাইনের মাধ্যমে আমরা আমাদের ক্লাস নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছি।

'করোনার প্রভাবে শিক্ষার্থীদের কেউ ঝরে পড়বে কি-না' জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম জানান, হয়তো ঝরে পড়বে। তবে তার সংখ্যাটি খুব একটা বেশি নয়। প্রতিষ্ঠান খুললে শিক্ষকরা দায়িত্ব নিয়ে তাদের আবার স্কুল-কলেজমুখি করতে পারবে বলে বিশ্বাস করি। আমার প্রতিষ্ঠান আল-আমিন একাডেমি থেকে কোন স্টুডেন্ট ঝরে পড়েছে বলে এমন কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। সকলেই নিয়মিত অনলাইন ক্লাসে অংশ নিচ্ছে।

দারিদ্র শিক্ষার্থীদের স্মার্ট ফোন সংকট ও ইন্টারনেট ডাটা ক্রয় সম্পর্কে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাদের স্মার্ট ফোন নেই সে বিষয়ক একটি তালিকা শিক্ষা মন্ত্রনালয় চেয়েছিলো। আমরা তা প্রেরণ করেছি। খুব কম শিক্ষার্থীই আছে যাদের স্মার্ট ফোন নেই। ইন্টারনেট ডাটা ক্রয় হয়তো কারো কারো জন্য সমস্যা কিন্তু ঘরে বসে পাঠগ্রহণের জন্য এতটুকু সেক্রিফাইসতো করতেই হবে।

চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাহাব উদ্দিন চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, সরকার চারটি স্তরে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যমুখি করার উদ্যোগ নিয়েছে। সংসদ টেলিভিশনে নিয়মিত পাঠদান, জুম অ্যাপে ক্লাস, অনলাইন নির্দেশিকা, ওয়ার্ক শিট প্রেরণ তার মধ্যে অন্যতম। মহামারি বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা। প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ছাড়া সরকারের বিকল্প কোন পথ ছিলো না। তবুও সরকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে, ঝরে পড়া রোধ করতে, শিক্ষার্থীদের ঘরে বসিয়ে ক্লাস করাতে সর্বাত্বক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

শিক্ষা অফিসার আরও বলেন, ঘরে বসে হয়তো ক্লাসের পড়ার মত ফিডব্যাক আসবে না। তবুও দুর্যোগের মধ্যে যতটুকু হচ্ছে ততটুকুইবা কম কিসের? অভিভাবকরা সচেতন হলে শিশুরা পাঠচক্র থেকে ছিটকে পড়বে না, বিপথগামী হবে না। হোম ক্লাসে অভিভাবকদের ভূমিকাটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়