প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
পুঁথি সরণি উৎসবে সড়কজুড়ে বই আর বই : চাঁদপুরে ‘পূর্ণয়’-এর পুঁথি সরণি উৎসব-২২ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি
সুস্থ বিনোদনের জন্য চাঁদপুরে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার ও শিশু পার্ক করা হবে
আবারো ব্যতিক্রমী আয়োজনের মধ্য দিয়ে চাঁদপুরে হয়ে গেল দিনব্যাপী ‘পূর্ণয়’-এর পুঁথি সরণি উৎসব-২০২২। শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দিলেন আয়োজকরা। পুঁথি সরণি উৎসবে সড়কজুড়ে ছিলো বই আর বই।
|আরো খবর
চাঁদপুর শহরের ব্যস্ততম কাজী নজরুল ইসলাম সড়কে শরতের রোদ্রোজ্জ্বল আলোতে ঝলমল করছে হাজার হাজার বই। চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সামনে থেকে আল আমিন একাডেমি পর্যন্ত এলাকাটি পরিণত হয় বইময় সড়কে। বইঘ্রাণে মৌ মৌ করা তেমনই একটি ব্যস্ততম সড়কে অনুষ্ঠিত হয় ‘পুঁথি সরণি উৎসব’-২২। প্রধান অতিথি হিসেবে পুঁথি সরণি এ উৎসবের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। গতকাল ১ অক্টোবর শনিবার দুপুরে তিনি চাঁদপুর প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এ পুঁথি সরণি উৎসব উদ্বোধন করেন।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএমণ্ডবার, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এবং এই উৎসবের মিডিয়া পার্টনার দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক আলহাজ্ব অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাশার।
পূর্ণয়ের সভাপতি পৃত্থিরাজ বণিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহি কানিজ এবং এডভাইজার তারেক আহমেদের যৌথ সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের পাবলিক রিলেশন হেড আনাস ইবনে আলমগীর।
আয়োজকরা জানান, সারাদেশের মানুষের মাঝে চাঁদপুর জেলাকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার লক্ষ্যে চাঁদপুরের উদীয়মান সাহিত্যপ্রেমী একঝাঁক তরুণ-তরুণী লিটারেচার ভার্সেস ট্রাপিকের আদলে এই পুঁথি সরণি উৎসবের আয়োজন। তাদের মূল লক্ষ্য সকলের মাঝে শর্তহীন বিনামূল্য বই তুলে দেয়া এবং সকলকে বই পড়ার সুযোগ করে দেয়া। যারা আমাদের বই দিয়ে সহযোগিতা করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি বলেন, আমরা খুবই ভাগ্যবান আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বইয়ের একজন উন্মুক্ত পাঠক। তিনি একজন লেখকও বটে। তাঁর লেখা অনেক বই রয়েছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তিনিও অনেক বই লিখে গেছেন। তাঁর লেখা বই পড়লে বুঝা যায় তিনি যদি রাজনৈতিক নেতা না হয়ে লেখক হতেন দেশজুড়ে তাঁর নাম থাকত। কাজেই আমাদের সব বয়সী মানুষকে লেখা এবং পড়া দুটোরই অভ্যাস করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাইলট প্রক্রিয়ায় ৩'শ উপজেলায় বই পড়ার একটি কর্মসূচি চলছে। আমরা চাই প্রতিটি উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ কার্যক্রম নিয়ে যেতে। এ জন্য কাজ করছি। যাতে আমাদের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পড়ার পাশাপাশি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠতে পারে। আমরা চাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভালো করে একটি পাঠাগার থাকুক।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিশু বয়স থেকেই বইয়ের প্রতি আমার প্রচণ্ড রকমের ভালবাসা রয়েছে। এখনো পড়ার জন্য সামনে যা পাই পড়ে ফেলি। পড়লে অনেক কিছু জানা যায়। বই পড়লে নিজস্ব একটা জগত তৈরি হয়। এ জগতটার মধ্যে থাকলে আশপাশের যত প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা, যত সমস্যা সংকটই থাকুক না, চাইলে নিজের সেই জগতটার মধ্যে টুপ করে ঢুকে যাওয়া যায় এবং তার মধ্যে নিজের শক্তি আহরণ করা যায়। নিজের সব শান্তির পরিবেশ করা যায়। নিজে খুশি না থাকলে কাউকে খুশি করা যায় না। বইপড়া এমন একটা জিনিস নিজেকে তৈরি করার ভালো একটি মাধ্যম। তাই শিক্ষার্থীদের বই পড়ার বিষয়ে উৎসাহিত করতে হবে।
তিনি পূর্ণয়ের অসাধারণ এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমি আশা করবো সারাদেশে এ আয়োজন ছড়িয়ে পড়বে। চাঁদপুরেও এ আয়োজন প্রতিবছর আরো বাড়বে।
মন্ত্রী বলেন, চাঁদপুরের সুস্থ বিনোদনের জন্য পৌর মেয়রকে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার গড়ে তুলব। সেই সাথে শিশু পার্কও করা হবে।
তিনি শিক্ষার্থী ও নতুন প্রজন্মকে বই পড়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা যদি পড়াশোনার মধ্যে থাকে তাহলে অসামাজিক কাজ থেকে দূরে থাকবে। আমাদের সামাজিক যেসব ব্যাধিগুলো রয়েছে মাদক, ইভটিজিং সমস্যায় তারা জড়াবে না।
শিক্ষার্থীসহ নানান বয়সের মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে কেউ বই হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখছে, কেউ পড়ছে, কেউ আবার নিজের পড়া বইটি রেখে নতুন একটি বই নিচ্ছে। কেউ আবার স্বেচ্ছায় একাধিক বই রেখে আয়োজনে সহযোগিতা করছে।
ওয়ালটনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় এ পুঁথি সরণি উৎসব। আয়োজকরা বলেন, ওয়ালটন প্লাজা চাঁদপুরকে ধন্যবাদ এবারের ‘পুঁথি সরণি-২২’ আয়োজনে কো-স্পন্সর হিসেবে সাথে থাকার জন্যে। আশা করি ভবিষ্যতেও আমাদের পাশে থাকবেন এবং এ ধরনের কাজগুলোকে উদ্ধুদ্ধ করবেন।
চাঁদপুরে পাঠকদের বইমুখি করতে এভাবেই বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হলো 'পুঁথি সরণি উৎসব-২০২২।