প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২২, ০৮:৩৮
সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে আগুন, নিহত বেড়ে ১৬
সময় যতো গড়াচ্ছে বিএম সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে লাশের সারি যেন দীর্ঘ হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রোববার (৫ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ এসেছে। এর মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীও রয়েছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিন তালকুদার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানতে পেরেছি। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ৩ কর্মী রয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখনো উদ্ধার তৎপরতা চলছে। তিনি বলেন, আগুন লাগার বিষয়ে তদন্ত করে কারণ বের হরা হবে। নিহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, বাঁশখালীর মমিনুল হক (২৪), মো. মহিউদ্দীন (২৪), ভোলা জেলার হাবিবুর রহমান (২৬) ও বাঁশখালীর রবিউল আলম (১৯)। এ ঘটনায় অন্তত দুই শাতধিক আহত হয়েছেন। আগুনে দগ্ধদের চমেকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
|আরো খবর
দিনের আলোয় ফুটে উঠছে আগুনের ক্ষত শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় আগুনের সূত্রপাত। তারপর থেমে থেমে বিস্ফোরণ। সময় যত গড়িয়েছে বেড়েছে আগুনের তীব্রতা। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের আপ্রাণ চেষ্টার পরও রোববার সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনারে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ভোরের আলোর ফুটার সঙ্গে সঙ্গে আগুনের তাণ্ডব আরও স্পষ্ট হচ্ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। শনিবার রাত পর্যন্ত বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। যদিও এ সংখ্যা বাড়তে সময় লাগেনি বেশি। ভোরে আলো ফুটার আগেই সেই সংখ্যা ১০ পেরিয়ে যায়। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই ফায়ার ফাইটারসহ ১৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোর ভেতরে ধ্বংসস্তূপ থেকে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এর মধ্যে একজনের ফায়ার ফাইটার রয়েছে। তবে তাদের নাম–পরিচয় কিছু জানা যায়নি। লাশ দুটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ঘটনাস্থলে সামগ্রিক তল্লাশি চালানো হবে। তখন হয়ত আরও অনেক মরদেহ পাওয়া যেতে পারে। আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার কারণে অধিকাংশ মরদেহেরই পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিচয় শনাক্তে মরদেহগুলো চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকেই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার এম এ কফিল উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা যাওয়াদের মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজনের নামপরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন, বাঁশখালীর মমিনুল হক (২৪), মো. মহিউদ্দীন (২৪), ভোলা জেলার হাবিবুর রহমান (২৬) ও বাশখালীর রবিউল আলম (১৯)। তিনি বলেন, আহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। কনটেইনারে রাসায়নিক ছিল বলে আমরা ধারণা করছি। তবে ঠিক কী রাসায়নিক ছিল, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারিনি। আহত কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। ডিপো এলাকায় পানির সংকট রয়েছে। সেখানে একটি পুকুর থেকে পানি আনা হয়েছিল, সেই পানিও এখন শেষ পর্যায়ে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, সকাল ৭টা পর্যন্ত আমরা ১৬ জন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। এর মধ্যে তিনজন ফায়ার ফাইটার রয়েছেন। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এছাড়া আরও কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের সন্ধানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে ফায়ার সার্ভিস।
ভয়াবহ রাতের সাক্ষী হলো সীতাকুণ্ড
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে বেড়েছে আগুনের তীব্রতা। ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের প্রাণপণ চেষ্টার পরও টানা ৬ ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
এরই মধ্যে আগুনে দগ্ধ হয়ে ১৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মৃত্যুর এ সারি আরও দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা করেছে ফায়ার সার্ভিস। আহত হয়েছেন আরও দুই শতাধিক মানুষ। ইতিহাসের ভয়াবহতম ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল সীতাকুণ্ড। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে ডিপো এলাকা এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চত্বর।
এমন একটি ভয়াবহ ভোর দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না সীতাকুণ্ড এলাকার মানুষ। রাত থেকেই প্রিয়জন হারানো মানুষের দিগ্বিদিক ছোটাছুটি লক্ষ্য করা গেছে। কখনো ডিপো এলাকা, কখনো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছোটাছুটি করে রাত কেটেছে স্বজনদের। নিখোঁজদের অপেক্ষায় ঘটনাস্থলে রাত পার করেছেন অনেক স্বজন। অদৌ তারা বেঁচে আছেন না কি মৃত্যুর তালিকায় তাদের নামও যুক্ত হয়েছে এ নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। তারপরও প্রিয়জনকে এক নজর দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাত পার করেছেন স্বজনরা।
এদিকে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোর ভেতরে ধ্বংসস্তূপ থেকে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এর মধ্যে একজনের ফায়ার ফাইটার রয়েছে। তবে তাদের নাম–পরিচয় কিছু জানা যায়নি। লাশ দুটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু কর। কিন্তু তীব্রতা বেশি থাকায় পরবর্তীতে আরও ৯টি ইউনিট আগুনে নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। ২৪টি ইউনিটের প্রাণপণ চেষ্টার পরও ভোর ৪টা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন ৩ ফায়ার সার্ভিস কর্মী। সকাল ৭টা পর্যন্ত তাদের খোঁজ মেলেনি।চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার এম এ কফিল উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাস্থলে আমাদের ১৩টি ইউনিট কাজ করছিল। ফায়ার ফাইটাররা কাছ থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিলেন। তখনই বিস্ফোরণ ঘটে। এ পর্যন্ত ২১ জন ফায়ার ফাইটারের আহত হওয়ার খবর এসেছে। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, আহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। কনটেইনারে রাসায়নিক ছিল বলে আমরা ধারণা করছি। তবে ঠিক কী রাসায়নিক ছিল, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারিনি। আহত কয়েজনের অবস্থা গুরুতর। ডিপো এলাকায় পানির সংকট রয়েছে। সেখানে একটি পুকুর থেকে পানি আনা হয়েছিল, সেই পানিও এখন শেষ পর্যায়ে।
বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা যাওয়াদের মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজনের নামপরিচয় জানা গেছে। বাঁশখালীর মমিনুল হক (২৪), মো. মহিউদ্দীন (২৪), ভোলা জেলার হাবিবুর রহমান (২৬) ও বাশখালীর রবিউল আলম (১৯)। মমিনুল হকের বাবা ফরিদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন মাস আগে বিএম কনটেইনার ডিপোতে চাকরিতে ঢোকে মমিনুল হক। শনিবার রাতে ছেলের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। তিনি বলেন, ছেলে আগুন লাগার পরপরই আমাদের ফোনে জানিয়েছে বিষয়টি। এরপর ১০ মিনিট পরে আবার ফোন করে ছেলে বলে বিস্ফারণে তার একটি পা উড়ে গেছে। এরপরই ফোনের লাইন কেটে যায়। এরপর রাতে হাসপাতালে এসে ছেলের মরদেহ পেলাম। এই কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রাজীব পালিত ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুনের ঘটনায় রাত তিনটা পর্যন্ত দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখনও আহতদের হাসপাতালে আনা হচ্ছে। চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে রোগী শিফট করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিএমএইচে রোগী পাঠানো হচ্ছে। এদিকে দগ্ধদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিতে চট্টগ্রামের সব চিকিৎসককে চমেক হাসপাতালে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। শনিবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করে তিনি এ আহ্বান জানান।
সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে করেছি আহত দেড়শ জনের মতো হবে। কিন্তু আহত আরও অনেক বেশি। এখানে অনেক চিকিৎসক এরই মধ্যে এসেছেন। আমরা অন্যদেরও আসার আহ্বান জানিয়েছি। হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স রোগীদের সেবায় আছেন। আমরা ভিড় কমিয়ে শুরুতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি।