প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২১, ১২:০৩
চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও করোনাকালে সরকারের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে : ডিডিএলজি মোহাম্মদ আবদল্লাহ আল মাহমুদ জামান
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চাঁদপুরের আয়োজনে ‘করোনাকালীন সঙ্কট মোকাবেলায় স্থানীয় সরকার খাতে কার্যক্রম বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ ও করণীয় শীর্ষক’ ভার্চুয়াল আলোচনা সভা গত ১৬ জুন অনুষ্ঠিত হয়। সনাক সভাপতি শাহানারা বেগমের সভাপ্রধানে প্রধান অতিথি ছিলেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ডিডিএলজি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। করোনাকালীন তারা বিভিন্নভাবে হতদরিদ্র মানুষদের সহযোগিতা করেছেন। তিনি আরও বলেন, করোনা মোকাবেলায় সরকার আন্তরিকতার সাথে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিগত এক বছর ধরে করোনা মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন সচেতনতার কথা বললেও সাধারণ জনগণ তা মানছে না। মানুষ মনে করে করোনার আতঙ্ক কেটে গেছে। কিন্তু তা নয়, প্রতিদিনই করোনায় বহু লোক মৃত্যুবরণ করছে। তিনি জানান, গতকালও চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্তের হার ছিলো ২৮ ভাগ। তিনি বলেন, আমার সুরক্ষা আমার হাতেই। এটা আমাদেরকে মানতে হবে। আমাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে সচেতন হতে হবে। তিনি করোনা মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি অন্যান্য বেসরকারি সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
|আরো খবর
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি, চেয়ারম্যান-মেম্বার কল্যাণ ট্রাস্টের মেম্বার সেক্রেটারি ও বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বিল্লাল বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই সনাক-টিআইবি আমার ইউনিয়নে কাজ শুরু করেছে। আমি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে তাদের কাজগুলো নিয়েছি এবং তাদের পরামর্শে ও সহযোগিতায় অত্যন্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে কাজগুলো করে যাচ্ছি। ২০২০ সালে করোনার শুরুতেই মানুষের মধ্যে যে ধরনের আতঙ্ক ছিলো, ২০২১ সালে করোনার প্রাদুর্ভাব থাকলেও মানুষের মধ্যে সে আতঙ্ক নেই। তিনি বলেন, সরকারের নীতিমালা ও করোনাকালীন সরকারের প্রণোদনা চেয়ারম্যানগণ সঠিকভাবে বিতরণ করলেও কিছু প্রতিহিংসা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপরায়ণ মানুষ চেয়ারম্যানদেরকে বিতর্কিত করার জন্যে কতিপয় ব্যক্তি দিয়ে বিভিন্ন চেয়ারম্যানের নামে অভিযোগ দায়ের করেছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে সনাক-টিআইবি যেভাবে কাজ করছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমি মনে করি, সনাক-টিআইবি স্থানীয় সরকারের মতো প্রতিটি সেক্টরে যদি এভাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্যে কাজ করে তাহলে দুর্নীতি অনেকাংশেই কমে যাবে। পাশাপাশি সরকার ঘোষিত দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করবে। ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে যাতে করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে কাজগুলো করতে পারে এজন্যে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদগুলো এখন অনলাইনের আওতায় চলে এসেছে। চমৎকার আধুনিকায়ন হয়েছে পরিষদগুলোতে। করোনাকালীন ২০২০ ও ২০২১ সালের দুই মেয়াদেই সরকার দরিদ্র জনগণের জন্যে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়েছে। তিনি বলেন, মূল কথা হলো, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় দরিদ্রের তালিকা তৈরি করার জন্যে চেয়ারম্যানগণ সময় খুবই কম পেয়েছে। কিছুটা ভুল থাকতেই পারে। তারপর আবার এ তালিকা তৈরি করার ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানগণ পারিপার্শ্বিক কিছু চাপের মুখে ছিলেন। তিনি বলেন, বিচ্যুতির পাশাপাশি কিছু কিছু চেয়ারম্যান ভালো কিছু কাজ করে নজিরও সৃষ্টি করেছেন। অস্বচ্ছতা আমরা চাই না। আমি আশা করি, ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
সনাকের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত মুক্ত আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন। এ সময় তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মসূচি আমরা সচরাচর দেখতে পাই না। করোনার কারণে জনগণ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। সকল কিছুর ঊর্ধ্বে থেকেও ইউনিয়ন পরিষদগুলো যাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে, এটাই আমাদের কাম্য। করোনাকালীন ইউনিয়ন পরিষদের প্রণোদনাসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগী নির্বাচন ও বিতরণ, নাগরিক সেবা, দাপ্তরিক ও উন্নয়ন কার্যক্রম ইত্যাদি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সোহেল রুশদী, বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম, হানারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ছাত্তার রাঢ়ি ও আশিকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ বিল্লাল হোসেন, হানারচর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ রোকন উদ্দিন, বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ মহিবুবুল আহসান, ইয়েস গ্রুপের সাবেক দলনেতা দীন মোহাম্মদ দিলরাজ, ইয়েস ফ্রেন্ডস্ গ্রুপের সদস্য নাঈমা ফেরদৌসী প্রমুখ।
করোনাকালীন স্থানীয় সরকার খাতে সুশাসন নিশ্চিতকরণে করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন টিআইবি চট্টগ্রাম ক্লাস্টারের ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর মোঃ জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, টিআইবি চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি সেক্টর নিয়ে কাজ করছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো স্থানীয় সরকার। সনাক-টিআইবি মূলত ইউনিয়ন পরিষদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের জন্যে কাজ করছে। তিনি করোনাকালীন সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের প্রণোদনার ওপর টিআইবি কর্তৃক প্রদত্ত রিপোর্টের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, করোনাকালীন ইউনিয়ন পরিষদের প্রণোদনাসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগী নির্বাচন ও বিতরণ, নাগরিক সেবা, দাপ্তরিক ও উন্নয়ন কার্যক্রমগুলো যাতে স্বচ্ছতার সাথে হয় আমরা সেটাই কামনা করি।
সভাপতির বক্তব্যে সনাক সভাপতি শাহানারা বেগম বলেন, আজকের আলোচনা সভায় চেয়ারম্যানগণ যেভাবে পরিষ্কারভাবে তাদের কাজগুলো তুলে ধরেছেন এটাই হলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। আমি মনে করি, সনাক-টিআইবির এটাও একটা সফলতা। সনাক কয়েক বছর আগে থেকেই ভিজিডি মনিটরিং করে আসছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের প্রণোদনা চেয়ারম্যানের কোনো দরিদ্র আত্মীয় থাকলে সেও অবশ্যই পাবে। তবে সেক্ষেত্রে যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম যাতে না হয় সেটাই আমরা চাই। তিনি ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করার জন্যে সনাক-টিআইবির পক্ষ থেকে সকলকে ধন্যবাদ জানান।
টিআইবির এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মোঃ মাসুদ রানার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সনাকের সহ-সভাপতি ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। অংশ নেন সাংবাদিকবৃন্দ, চাঁদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিববৃন্দ, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ, সনাক-স্বজন-ইয়েস-ইয়েস ফ্রেন্ডস্ গ্রুপের সদস্যবৃন্দ ও টিআইবির কর্মীবৃন্দ।