প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:৪৮
গুম-খুনের জন্য ক্ষমা চেয়ে ডিজি বললেন, ‘র্যাব এসবে আর জড়াবে না’
পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, ‘গুম, খুন এবং অপহরণসহ র্যাবের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ আছে। আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই— আজ পর্যন্ত যারা র্যাবের হাতে নির্যাতিত বা অত্যাচারিত হয়েছেন, তাদের কাছে এবং নারায়ণগঞ্জের সাত খুনসহ র্যাবের দ্বারা যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তাদের পরিবারের কাছে আমরা দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করি।’
|আরো খবর
বৃহস্পতিবার ( ১২ ডিসেম্বর) দুপুরে কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর বিচার যেন হয়, সেটা প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন র্যাব ডিজি। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গুম-খুন কমিশন গঠন করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালও এসব বিষয় নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আমরা দায়মুক্ত হতে চাই। আমি যতদিন দায়িত্ব পালন করবো, কারও নির্দেশে এসব অপরাধে র্যাব আর জড়িত হবে না— সেটি আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
সম্প্রতি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল র্যাব বিলুপ্তির বিষয়ে দাবি তুলেছে, এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ বিষয়ে সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই মেনে নেওয়া হবে। তবে যতদিন দায়িত্বে থাকবেন, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
র্যাব মহাপরিচালক জানান, র্যাবে আয়নাঘর থাকার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলির বিষয়টিও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তদন্ত করছে। তদন্তে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে।
র্যাবের নিজস্ব একটি আইন করার কথাও ভাবা হচ্ছে জানিয়ে সংস্থাটির ডিজি বলেন, ‘র্যাবের নিজস্ব কোনও আইন নেই। পুলিশ আইনে র্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। র্যাবের জন্য আমরা আলাদা একটি আইন করার চিন্তা-ভাবনা করছি। এছাড়া আর কোনও কোনও বিষয় সংস্কার করা যায় সেজন্য গণমাধ্যম ও জনসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
র্যাবের পোশাক পরিবর্তন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পোশাকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যিনি পোশাকটি পরবেন তারা। আমরা প্রতিদিন ইউনিফর্ম পরি, আপনারা প্রতিদিন প্যান্ট শার্ট, স্যুট, পায়জামা-পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পোশাক পরেন। একজন ভালো ব্যক্তি যে পোশাকই পরেন না কেন, তার কাছে আমরা ভালো জিনিসে পাবো। কিন্তু একজন খারাপ ব্যক্তি যে পোশাকই পরেন না কেন, আমরা ভালো জিনিস কিন্তু পাবো না। এখানে পোশাকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ব্যক্তির মানসিকতা। তারপরও আমরা র্যাবের পোশাক পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছি।
বর্তমানে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে, তবে প্রত্যাশিত জায়গায় এখনও পৌঁছায়নি উল্লেখ করে র্যাব ডিজি বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র্যাব তার দায়িত্ব আন্তরিকতা সঙ্গে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবে।
গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাবের ১৬ সদস্যকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান র্যাবের ডিজি। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটে। পরে র্যাবের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ শুরু করে। এ কাজ করতে গিয়ে র্যাবের ১৬ জন সদস্য বিভিন্ন অপরাধে সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসার সম্পৃক্ততা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অপরাধে এই ১৬ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র্যাবের ৫৮ জন কর্মকর্তা ও ৪ হাজার ২৩৫ জন সদস্যকে বিভিন্ন অপরাধে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।
র্যাব মহাপরিচালক আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল। আনসার বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিদ্রোহ, গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিতিশীলতা, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মবিরতিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে র্যাব।
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫০০ আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। পাশাপাশি ২০ হাজার অস্ত্রও উদ্ধার করেছে সংস্থাটি।
তথ্যসূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।