প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:১৬
পুরাতন আর নতুন দখলদারদের দ্বন্দ্ব চরমে
উচ্ছেদের পর সওজের জায়গা ফের দখলের প্রতিযোগিতা

সওজ (সড়ক ও জনপথ)-এর বেদখল হয়ে যাওয়া জায়গায় উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে বাজারগুলোতে সওজ-এর জায়গায় ফের শুরু হয়েছে দখল আর উপ-দখলের প্রতিযোগিতা। এ নিয়ে প্রতিদিন ঘটছে ঝগড়া আর হাতাহাতির ঘটনা। আবার অনেক স্থানে পূর্বের দখলদারেরা রয়ে গেছে বহাল তবিয়তে। এমন চিত্র হাজীগঞ্জের বাকিলা বাজার আর বলাখাল বাজারের। চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের চাঁদপুর জেলাধীন অংশ হচ্ছে চাঁদপুর শহরের তালতলা থেকে কুমিল্লা জেলার সীমানা খাজুরিয়া বাজার পর্যন্ত । সড়কের এই অংশে বেদখল হয়ে যাওয়া নিজেদের জায়গা উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে সড়ক ও জনপথ চাঁদপুর। তারই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে হাজীগঞ্জের বাকিলা বাজার, কৈয়ারপুল বাজার ও বলাখাল বাজারে উচ্ছেদ কাজ সম্পন্ন হয়। এরপরেই শুরু হবে হাজীগঞ্জ বাজার অংশের উচ্ছেদ কার্যক্রম। সরজমিনে ঘুরে জানা যায়, উচ্ছেদ হওয়ার আগ পর্যন্ত সওজের জায়গাতে দোকানঘর তুলে তা ভাড়া দিয়ে কিংবা দখল বিক্রি করে বাণিজ্য করেছে একটি চক্র। সম্প্রতি উচ্ছেদকালে সেই সকল দোকানঘর ভেঙ্গে ফেলাসহ পাকা ভিটিগুলো বুলডোজার দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়। উচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে পুরাতন দখলকারীরা তাদের পুরানো দখল নিজেদের আয়ত্তে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠে। অপরদিকে উচ্ছেকৃত অংশ নতুন করে দখল নিতে একাধিক চক্র তৈরি হয়। মূলত পুরাতন দখলকারীদেরকে হটিয়ে উচ্ছেদকৃত সওজের জমি দখলে নিতে উঠে পড়ে লাগে নতুন চক্রটি। পুরাতন আর নতুন দখলকারীদের মধ্যে এ নিয়ে চলছে চরম দ্বন্দ্ব, ঝগড়া, এমনকি হাতাহাতির ঘটনা। বাকিলা বাজারের এ দ্বন্দ্বে কিছুটা রাখঢাক থাকলেও বলাখাল বাজারে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এ কারণে বলাখাল বাজারে সকাল বিকাল ঝগড়া আর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে আসছে বলে স্থানীয়রা চাঁদপুর কণ্ঠকে জানিয়েছেন। বাকিলা বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বাকিলা বাজারে থাকা সওজের পুরো জায়গাতে মূল দখলকারী রয়েছে ৫ থেকে ৭ জন। এর মধ্যে খলাপাড়া গ্রামের দুটি পরিবারের দখলেই ৯০ ভাগ দোকানঘর। এরাই দোকানঘর তৈরি করে দখল, বিক্রি, এডভান্স নিয়ে ভাড়া দেয়া, ফুটপাত ভাড়া দেয়াসহ সড়কের পাশে ভ্যানগাড়ি বসিয়ে ভাড়া দিয়ে আসছে। এই সকল পুরাতন দখলকারীদেরকে উচ্ছেদের পর নতুন আরেকটি চক্র একই স্থানসমূহ দখলে যেতে চাইলে নিজেদের মধ্যে মৌখিক বন্টন করে ফেলা হয়, যাতে করে ঝুট ঝামেলা কম হয়। অপরদিকে যারা এই সকল দোকানঘরে ভাড়াটিয়া হিসেবে এতোদিন ব্যবসা করে আসছিলো, তারা ব্যবসা গুটিয়ে বসে আর্থিক সঙ্কটে দিনাতিপাত করছেন।তবে এই বাজারে নতুন দখলকারীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। বাকিলায় দখলকারীদের ঠিক ভিন্ন চিত্র বলাখাল বাজারে। উচ্ছেদের পর থেকে উচ্ছেদ হওয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নতুন করে বাক্স নিয়ে বসতে গেলেও নতুন দখলকারীদের পক্ষে নানা ধরনের ভয়ভীতিসহ বাধা দেয়া হচ্ছে। এ কারণে বাক্স, পুঁটলি নিয়ে তাদের আর বসা হচ্ছে না। পুরাতন দখলকারী আর নতুন দখলকারীদের সকাল বিকাল প্রকাশ্যে ঝগড়া আর হাতাহাতির ঘটনা সাধারণ লোকজন দর্শকের মতো চেয়ে দেখে। বলাখাল বাজারের নতুন আর পুরাতন দখলকারীদের দ্বন্দ্ব, ঝগড়া আর হাতাহাতি নিয়ে সালাউদ্দিন নামের স্থানীয় এক চাকুরিজীবী জানান, তাদের অবস্থা দেখে নিজেই তাকিয়ে থাকি, কিছু বলতে পারি না। বাজার ব্যবসায়ী মাহবুব জানান, সকাল-বিকাল তাদের ঝগড়া দেখে মনে মনে হাসি, কিছু বলতে গেলে বিপদ। বলাখাল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোস্তফা মিয়া জানান, নিজে একটা দোকানে কাজ করে খেতাম, এখন আমাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে আমি যেন দোকান না তুলি। যারা হুমকি দিচ্ছে তারাই নাকি দোকান তুলবে। বলাখাল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বেপারী জানান, মনে হচ্ছে আগের থেকে এখন দখলদার বেড়েছে। এতোদিন যারা সওজের জমিতে দোকানঘর তুলে ভাড়া বা নিজেরা ব্যবসা করে আসছিল, তারা তাদের দখল ধরে রাখতে যেমনি মরিয়া হয়ে আছে, তেমনি আরেকটি গ্রুপ একই স্থান নিজেদের দখলে নিতে উঠে পড়ে লেগেছে। এ নিয়ে প্রতিদিন বাজারে ঝগড়াঝাটি হচ্ছেই, যা নিয়ে আমার কাছে বিচার আসে। সওজের জমিতে এতোদিন ব্যবসা করে সংসার চালানো বাকিলা পশ্চিম বাজারের শাহাদাত বেপারী জানান, আমি খবর পাচ্ছি আমার স্থানটুকু নাকি দখল করে নিতে একটি পক্ষ কানাঘুষা করে আসছে। উচ্ছেদ পরবর্তী ফের দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে সওজ সড়ক উপ-বিভাগ চাঁদপুরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয়ের এসও মো. আবু হানিফ জানান জানান, উচ্ছেদ পরবর্তী দখলে কারা জড়িত তাদের নামসহ অন্যান্য স্থাপনার তালিকা করা হচ্ছে, এরপরেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাকিলা ও বলাখাল বাজারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও হাজীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত জাহান জানান, উচ্ছেদকৃত স্থানে যারা ফের বসবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে, আর সওজ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আমাদের কাছে আইনী সহায়তা চাইলে তা দেয়া হবে।