প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৪, ১৮:১১
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে চরাঞ্চলবাসীর ভিটেমাটি রক্ষার দাবি
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে চরাঞ্চলের ভাঙনকবলিত লোকজন। বালুখেকোদের হাত থেকে নিজেদের ভিটেমাটি রক্ষায় মেঘনা নদীর পাড়ে স্মরণকালের বিশাল এ মানববন্ধনে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও চরাঞ্চলের নারী-পুরুষসহ সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। মঙ্গলবার (০৪ জুন) সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নিজেদের ভিটে-মাটি রক্ষার জন্য বালু উত্তোলন বন্ধ ও বালু উত্তোলনকারী ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
|আরো খবর
ভাঙনকবলিতরা জানান, চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন। প্রশাসন ও আদালত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় গত প্রায় দু বছর ধরে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখে। কিন্তু কিছুদিন ধরে আবারও তিনি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছেন। এতে করে নদী ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে বিস্তৃর্ণ এলাকা।
স্থানীয় নাগরিক সমাজের কয়েকজন ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলেন, আমরা চাই নদীতে তাদের বালু সন্ত্রাস বন্ধ করে আমাদের ঘরবাড়ি রক্ষা করতে। নদী ভাঙনের কবলে যারা পড়েছেন শুধু তারাই বুঝবেন এ কষ্ট কেমন। তাই বালুখেকোদের অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করে তাদের হাত থেকে রাজরাজেশ্বরসহ চাঁদপুরকে রক্ষা করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, জেলা প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চাই।
এদিকে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী বলেন, কারা অবৈধভাবে বালু কেটে নিচ্ছে, তা অনেকেই জানেন। এতে করে আমাদের ইউনিয়নের বাড়িঘর নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গতকালও তাদের বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে গেলে তারা আমাদের কয়েকজনকে বেদম মারধর করেছে। বিষয়টি আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
তিনি বলেন, তারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও গ্রুপের নাম ভাঙিয়ে দিন-রাতে বালু কাটে। কখনো আবার বলে সরকার তাদের বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস আমাদের জানিয়েছে বালু উত্তোলনে কোন বৈধতা নেই। তাই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য যা যা করণীয় আমরা তা ঐক্যবদ্ধভাবে করবো।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান রাজ্জাক চোকদার, চাঁদপুর জেলা যুবলীগের সদস্য ঢালী মো. শুক্কুর, ইউপি মেম্বার শফিক কুড়ালী, রাজরাজেশ^র ইউনিয়ন যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শরবত আলী গাজী, ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুকুম আলী সরদার ও লিটন দেওয়ান, স্থানীয় মুরব্বী সুফিয়ান পাটোয়ারী, হাফেজ দেওয়ান, হারুন ঢালী, এরশাদ ঢালী, হানিফা ঢালী, উপজেলা যুবলীগের সদস্য শাহজালাল বন্দুকশী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বালুখেকো চাঁদপুরের আলোচিত ও সমালোচিত সেই ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান উচ্চ আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাস্ট্রের প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ পদ্মা- মেঘনার বালু আবারো উত্তোলন ও বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে নদীতে ড্রেজার বসিয়েছে। এবার আদালতের চোখ ফাঁকি দিতে চেয়ারম্যান তার মেয়ে সেলিনা আক্তারের নামে(লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক নেতা নজির খান এর স্ত্রী) নিপা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী। এই নামে আদালত থেকে একটি অনুমোদন ভাগিয়ে আনেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। সেই আলোকে গত বেশ কিছুদিন যাবৎ চাঁদপুর রাজরাজেস্বর চর এলাকায় অসংখ্য ড্রেজার দিয়ে বালু কাটছিলো সেলিম খান ও তার লোকজন।
৩ জুন সোমবার প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগ অভিযান পরিচালনা করে তার সেই বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয় এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অর্থদণ্ড আদায় করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই অভিযানের সময় মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে বালু উত্তোলন ও বিক্রির প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ টাকাও জব্দ করা হয়েছে।
আবারো সেলিম চেয়ারম্যানের বালু উত্তোলন ও বিক্রির ঘটনা এখন চাঁদপুরের টক অব দা টাউনে পরিণত হয়েছে।