প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৫, ১২:০১
তরুণদের প্রতি রাসূল-এর বিশেষ দৃষ্টি : আজকের সমাজের জন্য দিকনির্দেশনা

তরুণ প্রজন্মকে বলা হয় জাতির ভবিষ্যৎ। একটি জাতির শক্তি, উন্নতি, সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক হলো তরুণরা। কিন্তু আজকের সমাজে আমরা প্রায়ই দেখি, তরুণদের শক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না। অনেক সময় তাদের হেয় করা হয়, অবিশ্বাস করা হয় কিংবা দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা হয়। অথচ রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবন আমাদের ভিন্নতর শিক্ষা দেয়। তিনি তরুণদেরকে দেখেছেন আস্থার চোখে, শিখিয়েছেন দায়িত্ববোধ, আর গড়ে তুলেছেন নেতৃত্বের যোগ্যতায়।
মদিনার ইতিহাসে অন্যতম অনন্য ঘটনা হলো মাত্র আঠারো বছর বয়সী এক তরুণ, উসামা ইবনে যায়েদ (রা.)-কে রাসূল (সাঃ) সেনাপতির দায়িত্ব দেন। তঁার নেতৃত্বে যুদ্ধ করতে বের হয়েছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ সাহাবিরাও। এ দৃশ্য শুধু প্রমাণ করে না যে তরুণের উপর আস্থা রাখা যায়, বরং এটি বিশ্ব ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে—যেখানে বয়স নয়, যোগ্যতাই হয়েছে নেতৃত্বের মানদণ্ড।
রাসূল (সাঃ) এর জীবন থেকে আরেকটি উজ্জ্বল উদাহরণ হলো আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)। কিশোর বয়স থেকেই তিনি রাসূল (সাঃ) এর সান্নিধ্যে বড় হন। হিজরতের রাতে যখন রাসূল (সাঃ) কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, তখন ঘুমন্ত অবস্থায় তঁার বিছানায় শুয়ে জীবনবাজি রেখেছিলেন তরুণ আলী (রা.)। এত কম বয়সেও তঁার এই সাহসিকতা ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে।
শিক্ষা ও জ্ঞানের ক্ষেত্রেও তরুণদের প্রতি রাসূল (সাঃ)-এর বিশেষ মনোযোগ ছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), যিনি ছিলেন তখনও কিশোর, রাসূল (সাঃ) এর দু’আ পেয়েছিলেন: “হে আল্লাহ! তাকে দ্বীনের জ্ঞান দাও এবং কুরআনের তাফসির শিখিয়ে দাও।” এই তরুণ পরে হয়ে ওঠেন ইসলামী জ্ঞানের এক মহান আলোকবর্তিকা। একইভাবে আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) অল্প বয়সেই রাসূল(সাঃ) এর কাছ ে থকে শিক্ষা নিয়ে ফিকহ ও ইবাদতে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
রাসূল (সাঃ) তরুণদের অবহেলা করেননি, বরং তাদের দিয়েছেন দায়িত্ব, করেছেন প্রশিক্ষণ, আর দেখিয়েছেন আস্থার দৃষ্টান্ত। এর ফলেই একঝঁাক তরুণ সাহাবি ইসলামের প্রথম যুগে বিপ্লবী পরিবর্তনের কারিগর হয়ে উঠেছিলেন।
আমাদের সমাজে আজ তরুণদের সম্ভাবনা রয়েছে অপরিসীম। তারা প্রযুক্তিতে দক্ষ, চিন্তায় নতুনত্ব আনতে সক্ষম, আর সমাজ পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক সময় তাদেরকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়, বলা হয় তারা অপরিণত বা দায়িত্ব পালনের অযোগ্য। এই মানসিকতা তরুণদের সৃজনশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করে।
রাসূল (সাঃ) এর শিক্ষা আমাদের দেখায় তরুণদের প্রতি আস্থা রাখতে হবে, তাদের সুযোগ দিতে হবে, তাদের ভুল হলে সংশোধন করে এগিয়ে নিতে হবে। কারণ তরুণদের হাতে গড়ে উঠবে ভবিষ্যৎ সমাজ। তাদের শক্তিকে যদি আমরা সঠিক পথে ব্যবহার করতে পারি, তবে সমাজ ও জাতি আলোর পথে এগিয়ে যাবে। আর যদি অবহেলা করি, তবে সম্ভাবনা হারিয়ে যাবে অন্ধকারে।
তরুণদেরকে শুধু সমালোচনা না করে, তাদের চিন্তাকে মূল্যায়ন করতে হবে। নেতৃত্বে সুযোগ দিতে হবে, সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করতে হবে। রাসূল (সাঃ)-এর তরুণ-দৃষ্টিভঙ্গি যদি আমরা আজকের সমাজে প্রয়োগ করতে পারি, তবে একদল উদ্যমী, সৎ, দায়িত্ববান তরুণ তৈরি হবে যারা দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেবে আলোর পথে।